সোমবার ● ২৫ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পটুয়াখালীতে ভূমি জরিপে দূর্ণীতির অভিযোগ
পটুয়াখালীতে ভূমি জরিপে দূর্ণীতির অভিযোগ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় দিয়ারা সেটেলমেন্টের মাঠ জরিপে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন প্রতারণা, ঘুষ-দূর্ণীতির অভিযোগ ওঠেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রকৃত মালিকানার বেশী জমির রেকর্ড, নকসা স্কেচে একজনের সীমানা অন্যের মধ্যে ঢুকিয়ে প্রতারণা এবং ৩০ধারায় আপত্তি গ্রহণে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাস জুড়ে উপজেলার ১নং পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে দিয়ারা সেটেলমেন্টের ভূমি জরিপের কাজ শুরু হয়। একই সময় লেবুখালী ইউনিয়নেও মাঠ জরিপ হয়। বরিশাল বিভাগীয় জরিপ অধিদপ্তরাধীন সেটেলমেন্ট অফিসার সুজন ত্রিপুরার নেতৃত্বে ১০জনের টিম দু’ভাগে ভাগ হয়ে ইউনিয়ন দু’টির মাঠ জরিপ চালায়। লেবুখালী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাংগাশিয়ার ১নং ওয়ার্ডের আলগি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে অস্থায়ী অফিস খুলে মাসব্যাপী এ জরিপের কাজ চলে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কয়েকজন দালালের সহায়তায় লেবুখালী ও আলগি মৌজার শত শত জমির মালিকদের কাছ থেকে ১০হাজার থেকে ৪০/৪৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে জমির হাত পর্চার রেকর্ড করা হয়েছে। দালালের মাধ্যমে দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে না পারা লোকদের জমি পরিমানে কম রেকর্ড দেখানো এবং নকসায় ইচ্ছাকৃত ত্রুটি রেখে ভুলভাল রেকর্ড করা হয়। আলগি মৌজায় আবদুল মালেক ও লিটন নামের দু’জন অফিস সহকারী পুরো মৌজা থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকারও বেশী উৎকোচ আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সবার মুখে মুখে। আলগি মৌজার বাসিন্দা আবদুল লতিফ আকন অভিযোগ করে জানান, মাঠ জরিপ চলাকালে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জমির পরিমাণ অনুসারে প্রত্যেক লোকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০হাজার থেকে ৪০/৪৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে জমির হাত পর্চার রেকর্ড দেয়। আবার ৩০ধারার আপত্তি গ্রহণকালে কেস প্রতি ৫শ’টাকা হারে আদায় করে নেন। টাকা ছাড়া একটি আপত্তি গ্রহণের কোন নজির নেই। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর নিজ ৩০ কেসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে অগ্রিম ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে আপত্তির আবেদন প্রস্তুত করেন। আপত্তির রশিদ চাইলে বাকি টাকা না দিলে রশিদ দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। পরে বাধ্য হয়ে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে আপত্তি গ্রহণের রশিদ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
একই অভিযোগ আলগি মৌজার মনির বিশ্বাস, আজাহার মৃধা, হনুফা বেগম, শাহআলম মল্লিক সহ শত শত গ্রামবাসীদের। পাংগাশিয়া ইউনিয়নের নলদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা নূরমোহাম্মদ খান অভিযোগ করেন, তার আলগি মৌজায় ১৬০, ২৬২, ৩৩৬ খতিয়ানের সম্পত্তির রেকর্ডের আপত্তি দিতে গেলে তার কাছে সংশ্লিষ্ট ওই দু’ অফিস সহকারী কেস প্রতি ৫শ’টাকা করে দাবি করেন। টাকা ছাড়া কোন কাজ হবে না বলেও তারা দম্ভোক্তি দেখান। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার আপত্তি গ্রহণ ছাড়াই অফিস গুটিয়ে চলে যান। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে টাকা নিয়ে বরিশাল যেতে বলেন, অন্যথায় আপত্তি গ্রহণ করা হবে না বলে সাফ সাফ বলে দেন।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী আবদুল মালেক বলেন, ভূমি জরিপে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আনতে পারলে বলেন। অংশিদার ঠকানো লোকজনের অযৌক্তিক ভাবে একক নামে রেকর্ডের দাবি রাখা হয় নাই বলেই এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
বরিশাল বিভাগীয় দপ্তরের সেটেলমেন্ট অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারী কোর্র্র্ট ফি ব্যতিরেকে অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে অভিযোগকারী লতিফ আকনের বিষয়টি আমাদের সবার জানা আছে। তিনি ঘুষ তো দূরের কথা, সরকারী কোর্ট ফি’র টাকা না দিয়েই তার কেসগুলো করতে চেয়েছেন। এতে রাজী না হওয়ায় তিনি মিথ্যে অভিযোগ করছেন।