শুক্রবার ● ২৯ জুন ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুর সিটি নির্বাচন : আ’লীগের সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন : ভোট ডাকাতির অভিযোগে বিএনপি’র নির্বাচন স্থগিত দাবী
গাজীপুর সিটি নির্বাচন : আ’লীগের সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন : ভোট ডাকাতির অভিযোগে বিএনপি’র নির্বাচন স্থগিত দাবী
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১৫ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ রাত ১১.১৯মি.) অবশেষে ২৬ জুন মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় কোন সহিংসতা ছাড়াই আওয়ামীলীগের সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনিয়ম , জাল ভোট , এজেন্টদের গ্রেফতার ,মারধোর ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন স্থগিত দাবী করেছে বিএনপি। হাসান সরকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. সোহরাব উদ্দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন স্থগিত করার আবেদন রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেন।
রিটার্নিং অফিসার রাকিব উদ্দিন জানান, দু’একটা কেন্দ্রে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তবে এখনই তা সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারছিনা । আমরা সর্বশেষ ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। নির্বাচন এখনও সুষ্ঠু ও আবাধ আছে। এখনো প্রচুর ভোটার আমরা ভোট কেন্দ্রে দেখেছি মহিলা ভোটারও আছে। তারা নির্বিঘে ভোট প্রদান করছে। যে কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে সেসব কেন্দ্রে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নেব।
বিএনপি যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি । ইতোমধ্যে আমরা অভিযোগগুলো রিসিভ করেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখছি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ দুপুরে স্থানীয় রাণী বিলাস মনি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সাংবাদিকদের জানান, সুষ্ঠু ভাবে ভোটগহন সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোন রির্টানিং কর্মকর্তাও অভিযোগ করেননি।
সরেজমিনে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা গেছে সকালে শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটরদের উপস্থিতি তেমনটা চোখে পরেনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান।
গাজীপুর মহানগরের ২৪ নং ওয়ার্ডের বিডিপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১২টার দিকে ২৫১৭ ভোটের মধ্যে ৯০৫টি ভোট কাষ্ট হয়েছে বলে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. শামসুল বারী জানান। গাজীপুর মহানগরের ৩০নং ওয়ার্ডের নীলের পাড়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় ২৩০০ ভোটের মধ্যে ৬৬৮ ভোট প্রদান করা হয়েছে বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুমন কুমার বসাক। তিনি জানান, এই কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে। ওই কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট ইব্রাহিম খলিল মোল্লা জানান, সাদা পোষাকে পুলিশ পরিচয়ে একজন গিয়ে আধা ঘন্টার মধ্যে ওই কেন্দ্রের ধানেরশীষের সকল এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এজন্য তারা ভীত। এই কেন্দ্রটি আওমীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নিজস্ব ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র। এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়ির কেন্দ্র কানাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোন ধানের শীষের এজেন্ট নেই। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তানজুরুল ইসলাম কে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, এখানে কোন ধানের শীষের এজেন্ট আসেনি। ওই কেন্দ্রের পুরুষ ভোটর ১০৮৪ এবং মহিলা ভোটর ১০৩৪। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের মোট ৭০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। মহানগরের ভারারুল দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ওই কেন্দ্র মোট ভোটার ২৪৩৪ জন যার অর্ধেকের বেশি ভোট ওই সময়ের মধ্যেই কাস্ট হয়েছে বলে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোসলেম উদ্দিন জানান।
ভাওয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের মুগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিএনপির পোলিং এজেন্ট আমিনুল ইসলাম জানান, ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোটকেন্দ্র দখলে নেন নৌকা প্রতীকে লোকজন। এসময় তারা বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে সিল মারতে থাকে। এতে ওই কেন্দ্রে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। এসময় কেন্দ্রের বাইরে ভোটাররা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও বালট পেপার না থাকায় কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ থেমে যায়। এক পর্যায়ে ভোটাররা ব্যালট পেপারের দাবীতে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, ভোটকেন্দ্রে আবার নতুন ব্যালট পেপার এনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। কিছু সময় ভোটগ্রহণ থেমে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর হাতপাখা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিনও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। দলের গাজীপুর সিটি নির্বচানী কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ জানানো হয়।
ভোট বন্ধের দাবি হাসান সরকারের
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তবে তিনি ভোট বর্জন করবেন না বলে জানান। মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে গাজীপুর জেলা দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রায় শতাধিক বুথ থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ব্যালট ছিনতাই করে জাল ভোট দেয়া হয়েছে। এভাবে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমি এ ভোট বন্ধের দাবি জানাই। তবে আমি ভোট বর্জন করব না। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থেকে দেশবাসীকে আওয়ামী লীগের স্বরূপ দেখাতে চাই। দেশবাসীকে দেখাতে চাই আওয়ামী লীগ কীভাবে ভোট কারচুপি করে নির্বাচন করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি রিটার্নিং অফিসারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত অভিযোগ দেব। ভোট বন্ধের দাবি জানাব।