রবিবার ● ১ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » হুদা ভাইয়ের নির্দেশে সুরমা নদী থেকে মাটি উত্তোলন করি
হুদা ভাইয়ের নির্দেশে সুরমা নদী থেকে মাটি উত্তোলন করি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (১৭ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ রাত ৯.৫১মি.) ‘প্রশাসন নয়, আমরা হুদা (শাহ জামাল নূরুল হুদা) ভাইয়ের নির্দেশে নদী (সুরমা) থেকে মাটি উত্তোলন করি। উত্তোলনের পর আমাদের জমিতে মাটি রেখে বিক্রি করি। মাটি উত্তোলন কোন অনুমতিপত্র আমাদের নেই, তবে ওনার (হুদা) আছে। তাই প্রশাসনের দিকটা তিনিই (হুদা) দেখেন। মাটি উত্তোলন করতে গিয়ে জমির মালিকদেরকে টাকা দিতে হয়, প্রশাসনকেও টাকা দিতে হয়। মাটি উত্তোলনের জন্য নদী ভাঙ্গন হচ্ছে একথা ঠিক নয়, যখন নদী থেকে মাটি উত্তোলন করা হতো না তখনও আমরা দেখেছি নদী ভাঙ্গন ছিল।’
কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের জাগিরআলা গ্রামের বাসিন্দা ও পরগণা বাজারের ‘মের্সাস জহির ট্রেডার্স’র সত্ত্বাধিকারী জহির উদ্দিন
অবৈধভাবে সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিনিয়ত লামাকাজী ইউনিয়নে একের পর এক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওই কথাগুলো বলেন জহির উদ্দিন।
জহির উদ্দিন আরও বলেন, ‘হুদা ভাইয়ের সাথে তার সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। হুদার ঘনিষ্ঠ মানুষ বলে পরিচিত জালালাবাদ থানার লালারগাঁও গ্রামের সাহাব উদ্দিন ও ছাতক থানার শ্রীনগর গ্রামের আবদুস ছত্তারের মাধ্যমেই যোগাযোগ রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ’
প্রশাসন যে হুদাকে নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করার অনুমতি দিয়েছেন এমন কোন কাগজ দেখেছেন কিনা কিংবা তার কাছে আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন বলেন, ‘না’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু জহির উদ্দিন নয়, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত আছেন উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মুক্তার আলী, সাঙ্গিরাই (মোল্লারগাঁও) গ্রামের রফিকুল ইসলাম। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে তারা সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসলেও তা বন্ধ করার ব্যাপারে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা ওই অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন প্রক্রিয়াকে নদী ভাঙ্গনের প্রধান কারণ চিহ্নিত করে রাজাপুর গ্রামের বৃদ্ধ আবদুস ছত্তার, শুকুর আলী, মিরাশ মিয়া বলেন, নদীর ভাঙ্গন আটকানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা (রাজাপুর-আকিলপুর গ্রামবাসী) নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্তে এসে সরকারি কর্মকর্তারা ‘হুদাদের’ বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে তাদেরকেই (হুদা) মাটি-বালু উত্তোলনে আরোও বেশি বেশি করে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। আর এর বিনিময়ে নিজেরা (সরকারি কর্মকর্তারা) লুটছে অবৈধ ফায়দা। পুলিশ দিয়ে এলাকাবাসীকে হয়রানি করা হয়। এমনকি ৫/৬ মাস পূর্বে শাহ জামাল নূরুল হুদার গ্রাম সদর উপজেলার আউসার সাথে সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন করা না করা নিয়ে রাজাপুর-আকিলপুর গ্রামবাসীর (বিশ্বনাথ উপজেলা) সংঘর্ষের আশঙ্কাও ছিল।
অনুসন্ধানে দেখে গেছে, রামপাশা-লামাকাজী সড়কের পাশে বিদ্যাপতি গ্রামে, লামাকাজী-পরগণা বাজার সড়কের পাশে আতাপুর গ্রামে ও পরগণা বাজার-প্রীতিগঞ্জ বাজার সড়কের পাশে রাজাপুর গ্রামে সুরমা নদী থেকে অবৈধভাবে’ উত্তোলনকৃত মাটি-বালুর স্তুপ রয়েছে। আর ওই সকল মাটি-বালুর স্তুপগুলো থেকে প্রতিনিয়ত ট্রাক ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাটি-বালু। ওই মাটি-বালুর স্তুপগুলোর প্রথম দুটির (বিদ্যাপতি-আতাপুর) মালিক সাঙ্গিরাই (মোল্লারগঁও) গ্রামের রফিকুল ইসলাম এবং তৃতীয়টির (রাজাপুর) মালিক জাগিরআলা গ্রামের জহির উদ্দিন ও রাজাপুর গ্রামের মুক্তার আলী।
অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে সুরমা নদী থেকে ‘মাটি-বালু’ উত্তোলনের প্রক্রিয়া নদী ভাঙ্গনের প্রধান কারণ বলে দাবি করেছেন লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া ও স্থানীয় মেম্বার মো. নুরুজ্জামান।
তারা বলেন, দ্রুত সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলন বন্ধ না করা হলেন সুরমা নদীর ভাঙ্গন আরোও ভয়াবহ রূপ নিবে।
সুরমা নদী থেকে বালু উত্তোলনের বৈধ কাগজপত্র আছে দাবি করে সাঙ্গিরাই (মোল্লারগাঁও) গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার তিলকপুর শিবেরকলা মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করে এনে বিশ্বনাথে রেখে বিক্রি করি। নদীর বিশ্বনাথের অংশ থেকে আমরা মাটি-বালু উত্তোলন করি না।
এব্যাপারে শাহ জামাল নুরুল হুদার সাথে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, ইতিমধ্যে সুরমা নদী থেকে মাটি-বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।