রবিবার ● ৮ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » দখল ও দূষণে ঝুঁকিতে গাজীপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ
দখল ও দূষণে ঝুঁকিতে গাজীপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২৪ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.১৭মি.) গাজীপুরের কোনো অংশই দূষণমুক্ত নয়। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ ঘটছে। দূষণের ঝুঁকিতে পড়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে। দূষণের মাত্রা এতটাই প্রকট যে মাটি, পানি ও বায়ু এমনকি ভূগর্ভস্থপানিও নিরাপদে নেই। জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও স্বীকার করছেন এ অবস্থার পরিবর্তন করা না গেলে পরিবেশ ও জলবাযু পরিস্থিতি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হয়ে ওঠবে চরম হুমকিস্বরূপ। প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান বনভূমি বেদখল হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বনজ সমপদ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন কর্মকর্তাদের গোচরেই কলকারখানার মালিক ও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কৌশলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি গ্রাস করছে। এতে সবুজ বেষ্টিত বন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে প্রভাবশালীদের হাত থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি রক্ষা করতে না পারলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গাছসহ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে বলে মনে করছে এখানকার বাসিন্দারা।
এদিকে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাজীপুর সদর উপজেলা, কালিয়াকৈর, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বনের ভেতর অবৈধভাবে একের পর এক করাতকল গড়ে ওঠছে। রাতে এসব করাতকলে বন বিভাগের সড়কের পাশেই শত শত গাছ কাটা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বন কর্মকর্তা ও পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে অবৈধভাবে এসব করাতকল চালানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ বনের ভেতরে করাত কলে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না করাতকল।
এ ছাড়া সিটি এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। টনের পর টন গাছ এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করায় পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনিভাবে কমছে গাছের সংখ্যা। শুষ্ক মওসুমে ইটভাটার ধুলো আর ধোঁয়ায় এলাকার ফসলি জমিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফসলহানি, ফল ও সবজি পচে যাওয়া, কুঁকড়ানোসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। নগর ও জেলার দুই শতাধিক ইটভাটায় আইন অমান্য করে অবাধে কাঠ পোড়ানোয় বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উত্পাদন। তবে প্রশাসনের নেই তেমন কার্যকরী উদ্যোগ। আগ্রাসী নদী দখল আর দূষণে নদীর পানিতে মাছ নেই বললেই চলে, নদী রূপ নিচ্ছে মরা খালে।
দখল ও দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে গাজীপুরের বিভিন্ন নদ নদী ও জলাশয়। দখলবাজদের দৌরাত্মে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নদী। নদীর পাড়ে ও এলাকায় বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পানি দূষিত হচ্ছে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কালচে ও নীল রঙের পানিতে ভয়াবহ দুর্গন্ধ থাকায় এ পানি ফসলি জমিতেও ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষক। পানিতে দূষণের মাত্রা বেশি থাকায় অক্সিজেনের পরিমাণ নেই বললেই চলে। আর এতে করে এসব নদী ও খালে মাছসহ নানা জলজ প্রাণী হারিয়ে গেছে। তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শত শত কারখানা। ডায়িং, প্রিন্টিং, নিটিং সিরামিক, ইটভাটাসহ এসব কারখানার অধিকাংশের ইটিপি না থাকায় সরাসরি বর্জ্য মিশছে নদীর পানিতে। এ ছাড়া বাসা বাড়ির মলমূত্র, গৃহস্থালীর বর্জ্যও মিশছে নদীর পানিতে। ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে ভয়াবহ হারে। কলকারখানা এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁযা ও রাসায়নিক মিশ্রিত শিল্প বর্জ্য, জমিতে ব্যবহূত কীটনাশক, রাসায়নিক সার, ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, প্লাাস্টিক ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করছে। নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্প বর্জ্য অনেক বেড়ে গেছে। খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা, জীবজন্তুর মৃতদেহও ফেলা হয়। এগুলো পচে বিভিন্ন রোগের জীবাণু সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও বৃষ্টির পানির সঙ্গে এগুলো মিশে পুকুর, নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফলে পানিও দূষিত হচ্ছে। এসব বর্জ্য বিভিন্ন জলাশয়ে পড়ছে। জলাশয় থেকে নদীতে এবং নদী থেকে সাগরে যাচ্ছে। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। এগুলো মাটির নিচের পানির সঙ্গেও মিশে পানিকে দূষিত করছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ডঃ দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, গাজীপুরে নদী দূষণ রক্ষায় একাধিক কমিটি কাজ করছে। দূষণ, দখল রোধ এবং নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিল্প কারখানার বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করছে। এটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হুমকি।