শুক্রবার ● ১৩ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে সড়কের ওপর বাঁশের সাঁকো
গাজীপুরে সড়কের ওপর বাঁশের সাঁকো
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান (আতিক), গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২৯ আষাঢ় ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.২৭মি.) গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ একটি গ্রাম মুলাইদ। তেলিহাটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এ গ্রামে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। রয়েছে ২০টি ছোট বড় শিল্পকারখানা। শিল্প-কারখানার কল্যাণে গ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ণ হলেও অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশন করায় এখন এই শিল্প কারখানাগুলোই বসবাসের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কারখানার ব্যবহার্য পানি নিচু জায়গায় নিষ্কাশিত হচ্ছে। এতে কয়েকশ বিঘা কৃষিজমি ও কয়েকটি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মত। এখন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে চলতে হয় স্থানীয়দের।
জনাকীর্ণ এ গ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রায় ছয় বছর ধরে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ক্যাপ্টেন সিএনজি পাম্পের সংলগ্ন নিজাম উদ্দিন বাড়ির মোড় হতে নাজিম উদ্দিন খলিফার বাড়ির সড়কটি সারা বছরই জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। সড়কটির দক্ষিণ পাশে আলহাজ্ব শরাফত আলী বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসা এবং মুলাইদ উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ সময়েও জলাবদ্ধতা নিরসন না করায় স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থী, কারখানা শ্রমিক ও স্থানীয়দের সড়কটিতে চলাচলে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও কোনো সমাধান না পেয়ে স্থানীয়দের উদ্যোগে সড়কটির ওপর প্রায় ১৫০ ফুট একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। আর এ বাঁশের সাঁকোই এখন চলাচলের একমাত্র ভরসা। ইতিপূর্বে এই এলাকায় পানি একটি ড্রেনের সাহায্যে লবলঙ্গ খালে নিষ্কাশিত হলেও বর্তমানে ড্রেনের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা হওয়ায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
১২ জুলাই বৃহস্পতিবার স্থানীয় শামসুল আলম জানান, প্রতিদিন এই সড়কে প্রায় ১০-১২ হাজার কারখানা শ্রমিক ও বিভিন্ন বিদ্যালয়-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। জলাবদ্ধতায় কারণে অনেকেই এই সড়কটি ব্যবহার না করে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতো। সম্প্রতি স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করায় জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে এসেছে। তবে সেতুতে এক সঙ্গে দুইজন পাশাপাশি পারাপার হওয়া যায় না। তাই যে কোনো এক পাড়ের লোকজনকে অপেক্ষা করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয় বিশেষ করে কারখানা ছুটি হলে।
ভ্রাম্যমাণ চাটাই বিক্রেতা আলমগীর জানান, আগে এই সড়কে চলাচল করা খুব কষ্টকর ছিল। এখন বাঁশের সাঁকো তৈরি হওয়ায় চলাচলে কিছুটা সহজ হয়েছে। তবে খুব ভয় হয়, কখন জানি ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় আবুল কাশেম জানান, সারাদেশের নাকি উন্নয়নের জোয়ার বইছে আর আমরা উন্নয়নের জলাবদ্ধতার জোয়ারে ভাসছি। ভোটের সময় এলেই খালি তাদের (জনপ্রতিনিধিদের) দেখা পাওয়া যায়। এতদিন ধরে এই সমস্যা সমাধানে কোনো জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি।
আলহাজ্ব শরাফত আলী বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, মাদরসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসা সবচেয়ে অসুবিধা হয়। বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় অভিভাবক অথবা মাদরাসার শিক্ষকরা তাদের ওই বাঁশের সাঁকো পার করে দিতে হয়।
এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোবারক হোসেন মুরাদ জানান, জনদুর্ভোগ লাগবে এ সড়কটি উঁচু করার প্রক্রিয়া করে ছিলাম। তবে আশপাশের জায়গা পানির নিচে ডুবে থাকায় উঁচু করার জন্য প্রয়োজনীয় মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও স্থানীয়রা মাটি দিতেও চাচ্ছে না। তাই মেরামত করাও সম্ভব হয়নি।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব দ্রুতই এই সমস্যা থেকে উত্তরণে চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম মোহিতুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত জনদুর্ভোগের এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তবে আমি শিগগিরই জনদুর্ভোগের এই স্থানটি পরিদর্শন করে তা লাগবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।