বুধবার ● ১৮ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » শিক্ষিকা যৌন হয়রানির অভিযোগে এক শিক্ষক বরখাস্ত : প্রক্টরকে অব্যাহতি
শিক্ষিকা যৌন হয়রানির অভিযোগে এক শিক্ষক বরখাস্ত : প্রক্টরকে অব্যাহতি
ময়মনসিংহ অফিস :: (৩ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৩মি.)ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।একইসাথে যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বুধবার (১৮ জুলাই) জাককানবি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হুমায়ন কবীর এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়,সেইসাথে এ ঘটনায় দ্বায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রক্টর জাহেদুল কবীরকে অব্যাহতি দিয়ে সহকারী প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়।
তিনি আরও জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আজিজুল ইসলামকে প্রধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয়ার পর আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন তদন্ত কমিটিকে দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে আরও জানান তিনি।
এদিকে জাককানবি’র শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, নাট্যকলার শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গত ১৭ জুলাই উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষিকা।
লিখিত অভিযোগে এক শিক্ষিকা বলেন, গত ১৭ জুলাই বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভা শেষে শিক্ষক রুহুল আমিন তার দিকে ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এবং চোখ টিপ দিয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেন। এছাড়াও রুহুল আমিন বিভিন্ন সময় নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা লেখা তাকে টেক্সট করেছেন।
আরেক অভিযোগকারী বলেন, একদিন রুহুল আমীন তার চুলে ও গালে হাত দিয়েছিলেন। তিনি এর প্রতিবাদ করলেও ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলছেন।
অপর অভিযোগকারী বলেন, শাড়ি পরে এলে রুহুল আমিন তার দিকে নোংরাভাবে তাকিয়ে থাকেন এবং নোংরা মন্তব্যও করেন।এসব ঘটনায় তিনি সাবেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উর রহমানের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ এই শিক্ষিকার। সর্বশেষ মঙ্গলবার অফিস কক্ষে শিক্ষক রুহুল আমিনের এমন আচরণে হতভম্ব ও হতবাক হন খোদ বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলা। তিনি সহকর্মী একজন শিক্ষকের এমন অশালীন আচরণে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ বলে জানান।
হয়রানির শিকার শিক্ষকরা আরও জানান, এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ ক্যাম্পাসের শিক্ষক সমাজসহ শিক্ষার্থীরাও। প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
অপরদিকে নাট্যকলা বিভাগের সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন,এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। নাট্যকলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের এমএ ক্লাসের ২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় নয়জন ফেল করেন।
পরে ‘ফেল করা ৯ (নয়জন) শিক্ষার্থীর পুনঃরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে একাডেমিক সভায় আমিসহ চারজনের প্রস্তাব ছিল-বিধি মোতাবেক পরীক্ষা নেওয়া হোক। কিন্তু অভিযোগরীরাসহ পাঁচজন চাইছিলেন বিনা শর্তে পরীক্ষা নিতে। এনিয়ে বাক-বিতন্ডার কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্যই এসব বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করে আমাকে সামাজিকভাবে হেনন্সÍা করা হচ্ছে।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.এএইচএম মোস্তাফজুর রহমান এ ব্যাপারে জানান, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং প্রক্টর ড. জাহিদুল করিমকে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।