শনিবার ● ২১ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » সামাজিক দায়িত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক
সামাজিক দায়িত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: (৬ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.২৯মি.) শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠা পিতৃ মাতৃহীন সুমি আকতার নামের মেয়েটি যার আপন বলতেও কেউ নেই। এমন একটি মেয়েকে চাকুরীর সংস্থান করে দিয়ে এবং মহা ধুমধামে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল। তিনি এবং তাঁর পত্মী মুক্তি বসাক প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে সার্বিকভাবেই বিয়ে সু-সম্পন্ন করেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়েতে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়ে এবং বিয়েতে সার্বক্ষনিক উপস্থিত থেকে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মমত্ববোধের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
২০ জুলাই শুক্রবার সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে গাইবান্ধা পৌর অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্যাহ আল ফারুকসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, ৭টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সদর থানা ও ডিবির ওসি, জেলা পর্যায়ের সকল বিভাগীয় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ি সহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এবং শিক্ষাবিদসহ সর্বস্তরের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মহাসমারোহে সম্পন্ন হয় গাইবান্ধার সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) প্রতিপালিত পিতৃ মাতৃহীন সুমি আকতারের এই ব্যতিক্রমধর্মী বিয়েটি। এই বিয়ের অনুষ্ঠান ও প্রীতিভোজে অংশ গ্রহণের জন্য যথারীতি জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল তাঁর নামে সুদৃর্শ বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে অতিথীদের আমন্ত্রণ করেন। এমনকি গাইবান্ধার শিশু পরিবার বালিকা প্রতিটি সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও এই বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়া হয়।
বিয়েটি সম্পন্ন হয় রীতিমত ৩ লাখ ১ হাজার ১০১ টাকা দেন মোহরানা নির্ধারণ পূর্বক শাপলাপাড়ার বিবাহ রেজিস্টার কাজী মিঠু এই বিবাহের কাবিন রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেন। আর পবিত্র কালেমার মাধ্যমে বিয়েটি পড়ান কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোহাইমেনুল হক। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশু পরিবারে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক পত্মী মুক্তি বসাকের নেতৃত্বে লেডিস ক্লাব, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত হয়ে এবং আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যথারীতি বিয়ের হলুদ অনুষ্ঠানটিও সম্পন্ন করেন।
সাত বছর বয়স পর্যন্ত রাজশাহীর বেবী হোমে লালিত পালিত হওয়ার পর ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পিতৃ মাতৃহীন শিশু সুমি আকতারকে লালন পালনের জন্য গাইবান্ধা সরকারী শিশু পরিবারে (বালিকা) নিয়ে আসা হয়। শিশু পরিবারে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি। বাবা-মা আর পরিবারের আদর যতœ ও খুঁজে নেয় শিশু পরিবারের পরিবেশে। সেই শিশুটি আজকের সুমি আকতার। আবু হোসেন সরকার মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সেই সুমি আকতারের এতো ঘটা করে আজ বিয়ে। আর তার উদ্যোক্তা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ও তার পত্মী মুক্তি বসাক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি শিশু পরিবার (বালিকা) পরদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, যোগ্য কোন প্রার্থী থাকলে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একজনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে চান। সেখানেই তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে পারেন শিশু পরিবারে লালিত পালিত কৃতি ছাত্রী ওই সুমি আকতারের কথা। তার কথায় গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মচারি নিয়োগ পরীক্ষায় সুমি আকতার অংশ গ্রহণ করে এবং পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। অতপর এ বছর ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করে সুমি। সুমির আচার ব্যবহার সকলের দৃষ্টি কাড়ে। জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের আদর পায়নি মেয়েটি। স্নেহ প্রবণ গৌতম চন্দ্র পাল ও সহধর্মিনী মুক্তি বসাক সুমিকে নিজেদের মেয়ে করে নিয়েছেন। আর সেজন্যই মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনাও তাদের। কষ্ট করে বেড়ে ওঠা মেয়েটা যেন সুখে থাকে শান্তিতে থাকে তা নিয়েই ভাবছিলেন তাঁরা। অফিসে সহকর্মীদের সাথে আলোচনায় উঠে আসে বিয়ের প্রসঙ্গ। ভেতরে ভেতরে খোঁজ খবর চলতে থাকে একজন যোগ্য ভাল পাত্রের। অতপর জেলা প্রশাসক খুঁজে পান তার কার্যালয়ের আরেক অফিস সহায়ক সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর উত্তরপাড়ার মঞ্জুরুল ইসলাম রিজুকে। অতপর জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পালের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মঞ্জুরুল ইসলাম রিজুর বাবা ফায়ার বিগ্রেডে কর্মরত শামছুল হক ও তার পরিবার পরিজন সব শুনে জেনে সুমি আকতারকে তার পুত্রবধু করে নিতে সম্মত হয়।
গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) সুমি আকতারের জাকজমক পূর্ণ এই ভিন্নধর্মী বিয়েটি গাইবান্ধার প্রতিটি মানুষের মনে রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছে। সেইসাথে জেলা প্রশাসক ও তার পত্মী মুক্তি বসাক এর আন্তরিকতাপূর্ণ এই নিবেদিত কার্যক্রম সর্বস্তরে সার্বিক প্রশংসা অর্জন করেছে।