শনিবার ● ২১ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » শিশু সদনের ৬ শিক্ষার্থির ভুতুরে আচরণ: ‘ভার্জিনিটি’ পরিক্ষার কথা বললেন চিকিৎসকরা
শিশু সদনের ৬ শিক্ষার্থির ভুতুরে আচরণ: ‘ভার্জিনিটি’ পরিক্ষার কথা বললেন চিকিৎসকরা
কাউখালী প্রতিনিধি :: (৬ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২৫মি.) রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনে অসুস্থ্য ৬ মেয়ে শিক্ষার্থির জীবন কবিরাজের মন্ত্রের জাদুর মধ্যে আটকে আছে। অস্বাভাবিক আচরণের ৬ দিনেও এসব শিক্ষার্থিদের চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়নি। এদিকে কথিত ‘ভুতে ধরা’ নিয়ে এখনও কৌতুহল কাটেনি।
সুত্র জানায়, ৬ মেয়ে শিক্ষার্থি যৌণ নিপীড়ণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে এমন অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন ‘আক্রান্তদের ভার্জিনিটি টেস্ট (কুমারিত্ব পরীক্ষা) করা ছাড়া যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবেনা’।
গতকাল শনিবার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গঠিত ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম মৈত্রী শিশু সদনটি পরিদর্শন করেছেন। তারা আক্রান্তরা ছাড়াও সদনের অন্য শিক্ষার্থি, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন। এ সময় বেশি আক্রান্ত দুজনকে শিশু সদনে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে তিনদিন আগে কবিরাজী চিকিৎসার কথা বলে শিশু সদন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এঘটনার কদিন আগে শিশু সদনটির খন্ডকালীন শিক্ষক(প্রধান শিক্ষকের বড় ভাইয়ের ছেলে) অংচাচিং মারমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে সে এলাকার বাহিরে আছেন।এসব কারণে ঘটনাটি নিয়ে বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
মেডিকেল টিম ছাড়া ওই শিশু সদনে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের উর্ধতন কেউ যাননি। শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে ইউএনও এ,এম,জহিরুল জহিরুল হায়াতের কাছে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে দাবী করেন। যৌন হয়রানীর বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। তবে শনিবার সরেজমিন শিশু সদনে গিয়ে দেখা যায় আক্রান্ত কিশোরীরা সদনেই আছেন।
অপরদিকে ঘটনাস্থলে মেডিকেল টীমের সিনিয়র সদস্য ডা. প্রদীপ কুমার নাথ জানান, ৬ মেয়ে শিক্ষার্থির ভার্জিনিটি টেস্ট (কুমারিত্ব পরীক্ষা) করা ছাড়া যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। টীমের অপর সদস্য আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাজ্জাদ হোসাইন জানান, ৪ শিক্ষার্থি কিছুটা স্বাভাবিক আছে। কাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
এইদিকে এই মৈত্রী শিশু সদনটিতে আজ ৬ দিন যাবত পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো হচ্ছেনা শিক্ষার্থিদের। সবার মধ্যেই ভয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা চিংথোয়াই কার্বারী বলেন, ‘এ ঘটনায় জনমনে ভয় তৈরী হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থিরাও ভয়ে আছে’। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক অংচিনু মারমা জানান, বেশি আক্রান্ত দুই শিক্ষার্থিকে (ছাত্রী) তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সদনের সব শিক্ষার্থিকে ছুটি দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার শিশু সদনের কার্যক্রম শুরু করবো।
গত ১৬ জুলাই/২০১৮ইং বিকেল থেকে কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরের কলমপতি ইউনিয়নের মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনের ৬ মেয়ে শিক্ষার্থি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। ৬ মেয়ে শিক্ষার্থির একজন একজনের কান্নায় অন্যরা বিলাপ করছে। একজনে যা করে অন্য বাকিরাও তাই করছে।
এরপর থেকেই চিকিৎসকের পরিবর্তে স্থানীয় কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষ ‘ভুতে ধরেছে’ বলে দাবী করলেও স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ওই মেয়ে শিক্ষার্থি যৌণ নিপীড়ণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে। মূলত বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে চিকিসাকেন্দ্রে এই ৬ শিক্ষর্থিকে নেয়া হচ্ছেনা। মুল ঘঠনা এখনো অধরাই রয়ে গেল।