রবিবার ● ২২ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » এক বছর যাবত একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে সমাজপতিরা
এক বছর যাবত একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে সমাজপতিরা
নওগাঁ প্রতিনিধি :: (৬ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৮মি.) নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে মৃত ব্যক্তির মিলাদে অংশ না নেওয়ার কারণে একটি পরিবারকে এক বছরের বেশি সময় ওই গ্রামের সমাজপতিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ওই পরিবারকে গ্রামের সবকিছু থেকে বিরত রাখার জন্য গ্রামের কতিপয় মাতবররা প্রতিনিয়তই জারি করছেন নতুন নতুন নিয়ম-কানুন। এতে করে অসহায় জীবন-যাপন করছে ওই একঘরে পরিবার।
অভিযোগ সূত্রে জানা, প্রায় ১বছর আগে যাত্রাপুর গ্রামে মৃত-মহির উদ্দিন মন্ডলের মিলাদ বা ফয়তায় ব্যক্তিগত কারণে অংশ গ্রহন করতে পারেনি ওই গ্রামের মুনছুর আলীর পরিবার। মিলাদে অংশগ্রহণ না করার কারণে মৃত-মহির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে গ্রামের কথিত মাতবর আব্দুস সামাদ মন্ডল ওই গ্রামের আরো কিছু মাতবরদের নিয়ে গ্রামে শালিশ-বৈঠকের মাধ্যমে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মুনছুর আলীর পরিবারকে একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রাখার সিধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তিতে গ্রামের মাতবররা ওই পরিবারটিকে গ্রামের কোন কাজে বা কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেয় না এমনকি গত কোরবানী ঈদে মিসকিনদের জন্য রাখা কোরবানীর মাংস পর্যন্ত গ্রামের মাংসের সঙ্গে একত্রে করে বিলি করতে দেয় নাই। সম্প্রতি মুনছুর আলীর শ্যালকের মেয়ের বিয়েতেও এই পরিবারকে দাওয়াত না দিতে এবং ওই বিয়েতে অংশগ্রহণ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে মাতবর আব্দুস সামাদ মন্ডল। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায় দিন যতই যাচ্ছে ওই পরিবারের প্রতি একঘরে করে রাখার অত্যাচারের মাত্রা ততই বৃদ্ধি করছে গ্রামের মাতবররা।
মুনছুর আলীর ছেলে মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এমন কি অপরাধে আব্দুস সামাদ মন্ডলসহ গ্রামের আরো মাতবররা আমাদের পরিবারকে একঘরে বা সমাজচ্যুত করে রেখেছে তার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। তবে মহির উদ্দিন মন্ডলের মিলাদে অংশগ্রহণ না করার পর থেকে গ্রামের মাতবর আব্দুস সামাদ মন্ডলের নেতৃত্বে কতিপয় মাতবররা আমাদের পরিবারের প্রতি একঘরে বা সমাজচুত্য করে এক বছর যাবত অত্যাচার করে আসছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা হয়তোবা আমাদের পরিবারের প্রতি সদয় হবেন কিন্তু দিন যাচ্ছে আমাদের পরিবারের প্রতি মাতবরদের অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এতদিন আমরা গ্রামের অন্যান্য মানুষের সহযোগিতায় বিষয়টি গ্রামেই সমাধান করার চেষ্টা করলেও বার বার আব্দুস সামাদ মন্ডল তা ভেস্তে দেয়। তারা আমার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে পর্যন্ত আমাদের পরিবারকে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চাই। আমরা এই গ্রামের অত্যাচারিত মাতবরদের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
ওই গ্রামের মাতবর আব্দুস সামাদ মন্ডল বলেন, অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যে ও ভুয়া। ওই পরিবার তাদের জমি হালচাষসহ সকল কাজই করছে। তাদের আবার আমরা একঘরে করলাম কোথায়।
রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভুক্তভুগির পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।