রবিবার ● ২২ জুলাই ২০১৮
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » নদী ভাঙ্গনে দিন দিন বাড়ছে ভুমিহীনদের সংখ্যা : কমছে গাইবান্ধার আয়তন
নদী ভাঙ্গনে দিন দিন বাড়ছে ভুমিহীনদের সংখ্যা : কমছে গাইবান্ধার আয়তন
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি :: (৭ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১২.১৭মি.) নদী ভাঙ্গন কবলিত জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা একটি। গাইবান্ধা সদর, সাঘাট, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় প্রতিবছর বন্যা ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে হাজারো বাড়িঘর এবং ফসলি জমি। নি:স্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপনে নদী ভাঙ্গনের স্বীকার মানুষগুলো। এতে একদিকে যেমন ভুমিহীনদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে গাইবান্ধা জেলার আয়তন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বিগত ৯০ বছরে শুধু গাইবান্ধা সদর উপজেলার প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা ভেঙ্গে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল ক্ষরাস্রোতে। সর্বস্ব হারিয়ে ভুমিহীন হয়েছে হাজারো মানুষ। ভাঙ্গন কবলিত সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জসহ বাকি তিন উপজেলার চিত্রও একই রকম। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় করেও ঠেকানো যায়নি নদী ভাঙ্গন। বিশেষজ্ঞদের মতে এ অবস্থায় নদী ভাঙ্গা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হাতে নেওয়া দরকার পরিকল্পিত স্থায়ী পদক্ষেপ।
এদিকে, উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে থাকায় বিগত দশ দিনে প্রবল স্রোতে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার অন্তত দেড়শ’ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। মুল্যবান সম্পদসহ গৃহহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ। এসব মানুষ বাঁচার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি খাস জমিসহ অন্যের বাড়িতে।
সরেজমিনে, কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। মানুষ ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত কাঁচা-পাকা বাড়িঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। যেকোন সময় নদীর কাছাকাছি বাড়িগুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে। ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে নিজের পাকা বাড়ির ইট ও প্রয়োজনী মালামাল নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতাপ কুমার চক্রবতী নামে এক ব্যক্তি। এসময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে নদী থেকে অন্তত দেড় কিলোমিটার দুরে অনেক টাকা ব্যয়ে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছি। নদী ভাঙ্গনের ফলে মাত্র দশ বছরেই নদী বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। মনে দু:খ ও হাজারো কষ্ট নিয়ে বাড়িটি ভাঙ্গতে হচ্ছে। এতে অন্তত ইটগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। পাশেই নির্বিকার নদীর দিকে অপলক দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছেন ভবেষ বিশ্বাস। কাছে যেতেই তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে । ঘর, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু কিছুই সরাতে পারিনি, নদীর প্রবল স্রোতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোন মতো পরিবারসহ নিজের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায় সারা কাজ ও ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ না নেওয়ার কারনে প্রতি বছর শত-শত বিঘা জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। এই এলাকার মানুষকে ভাঙ্গন থেকে বাঁচাতে স্থায়ী পদক্ষেপের জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
নদী ভাঙ্গনে সর্বহারা প্রতাপ কুমার সরকার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, নদী ভাঙ্গনে এই এলাকার শত শত মানুষ ভুমিহীন হয়ে পড়েছে। সরকার ভাঙ্গনরোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে ঠিকই কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার ও অদক্ষতায় সকল কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে। কার্যত কোন প্রকল্পই কাজে আসছে না। কিছু দিন আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন রোধে তিন কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও প্রবল স্রোতে সেটিও এখন হুমকীর মুখে রয়েছে। দ্রুত এই এলাকার মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে দরকার স্থায়ী পদক্ষেপ। অন্যথায় এক সময় এই জনপদের সমস্ত এলাকা নদী গর্ভে চলে যাবে।
এ ছাড়াও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীসহ সাঘাটা এবং ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে এসব এলাকার মানুষরাও ভাঙ্গন আতংকে রয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে গাইবান্ধা সদরসহ তিন উপজেলায় কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রকল্পগুলো তদারকি করছি। জেলা সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকায় নদী ভাঙ্গনরোধে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের বাইরের কিছু অংশ নদীতে চলে গেছে। আমরা সাময়িকভাবে বালির বস্তা ফেলে চেষ্টা করছি ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য। তবে স্থায়ী পদক্ষেপের ব্যপারে এই মূহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ভাঙ্গন কবলিত উপজেলাগুলোর জন্য আরও কয়েকটি প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছি। প্রকল্পগুলো পাশ হলেই কাজ শুরু করা হবে।