রবিবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » আর স্বপ্ন নয় প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু
আর স্বপ্ন নয় প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু
বিশ্ব ব্যাংক নয় অন্য কোনো দাতা সংস্থার সাহায্যেও নয়৷ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রত্যাশিত বহুমূখী স্বপ্নের পদ্মা সেতু৷ এ বিষয়টি বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও নির্মান পরিকল্পনা৷ বিদেশ থেকে যে সমস্ত উন্নত যন্ত্রপাতি বৈদেশিক মুদ্রায় আনা হচ্ছে তার অর্থায়নে সহায়তা করেছে অগ্রণী ব্যাংক৷ দেশের বৃহত্তম এই সেতু নির্মানে ৩ হাজার নির্মান শ্রমিক,দেশী বিদেশী প্রকৌশলী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে৷
দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও বাগেরহাটসহ ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগের অন্তরায় ছিল এ সেতু ৷ এ অঞ্চলের লক্ষ কোটি মানুষের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ের মাসে গত ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর পাইলিং ও নির্মান কাজের শুভ উদ্বোধন করেছেন৷ ২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পদ্মা সেতু নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা৷ সেতুর নির্মান কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকাসহ পুর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক পথে যুক্ত হবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের৷ এই সেতু দিয়ে ট্রেনও চলবে৷ এশিয়ান হাইওয়ের রুট হিসেবেও ব্যবহার করা হবে এই পদ্মা সেতু ৷
বিগত ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন৷ পরবর্তী সময়ে বিরোধীদল বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেতু নির্মানের কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷ এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে সেতু নির্মানের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সাথে চুক্তি করে৷ বিশ্ব ব্যাংকও পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পে অর্থায়নে এগিয়ে আসে৷ এরপর আকষ্মিকভাবে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মানে ৯ হাজার ৬শত কোটি টাকা দূর্নীতির ষড়যন্ত্র চলছে বলে সেতু নির্মানে অভিযোগ করেন৷ আশ্চfর্যবিষয় বিশ্ব ব্যাংক যখন সেতু নির্মানে দুর্ণীতির অীভযোগ আনেন তখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু নির্মানে কোনো অর্থই ছাড় দেয়া হয়নি৷ এখানে প্রশ্নটা হলো তাহলে দূর্নীতিটা হলো কোথায় ? আজ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক প্রমান করতে পারেননি দূর্নীতিটা হয়েছে কোথায়৷ এ বিষয় নিয়ে কানাডায় মামলা হয়েছে ৷ কানাডার আদালত বিশ্ব ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে পদ্মা সেতু নির্মানে কী কী দূর্নীতি হয়েছে তা আদালতকে জানাতে ৷ বিশ্ব ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি কানাডার আদালতকে৷ অথচ বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর শেষ কর্ম দিবসে পদ্মা সেতু নির্মানে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন৷
এরপর আওয়ামীলীগ সরকার দেশের বৃহত্তম এই বহুমুখী পদ্মা সেতু নির্মানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন৷ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মানের ঘোষণা দেন৷ ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মানে ঘোষণা দিয়ে সরকারের অবস্থান পরিস্কার করে বলেছিলেন, যেহেতু বর্তমান সরকার এ কাজ শুরু করেছিলেন তা শেষও করা হবে৷ আমি বিগত ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম৷ নিবন্ধটির শিরোনাম ছিল “বর্তমান সরকারের উদ্যোগেই পদ্মা সেতু নির্মিত হোক এটাই জাতির প্রত্যাশা”৷ যা দেশের জাতীয় দৈনিক, অনলাইন পত্রিকাসহ পাবনার বেশ কিছু স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল৷ আমার লেখায় আমি বলেছিলাম, বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকান্ড এবং আমাদের দেশের দু’জন সাবেক অর্থমন্ত্রীর সততার পরীক্ষার কথা৷ আমি পাঠকদের উদ্দেশ্যে ওই লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরলাম৷
বিশ্ব ব্যাংকের তত্কালীন ডাকসাইটে প্রেসিডেন্ট রবার্ট এস ম্যাকনামারা একাত্তর সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সফরে এলে তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা দেওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের অর্থমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদের৷ এ প্রশংগে পরিকল্পনা কমিশনের সে সময়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম তাঁর ‘মেকিং অব দা ন্যাশন’ বইতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন৷ ২০১২ সালের ১ জুলাই রাতে একটি টেলিভিশন টক শোতে প্রসঙ্গটির সূত্র ধরে সাবেক তত্ত্বাবধয়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক কেবিনেট ও অর্থ সচিব আলী আকবর খান বলেছেন, বিশ্ব ব্যাংকের আধিপত্য অস্বীকার করার জন্য দৃঢ় নেতৃত্বের দরকার৷ ম্যাকনামারাকে অভ্যর্থণা জানাতে বিমানবন্দরে যাওয়ার প্রস্তাবেও রাজি হননি তত্কালীন অর্থমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পণর্গঠনের জন্য তখন ৩শ কোটি (তিন বিলিয়ন) ডলারের খুবই প্রয়োজন ছিল৷ সেই নিঃশ্ব অসহায় অবস্থায়ও যুদ্ধজয়ী স্বাধীন একটি দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিজের ও দেশের মর্যাদার কথা মাথায় রেখেছিলেন জাতীয় বীর তাজ উদ্দিন আহমেদ৷ স্বাধীনতার ৪০ বছর পর দেশের অর্থনীতি অনেকদূর এগিয়েছে৷ আর ততটাই পিছিয়েছে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মর্যাদা বোধ৷ নাম সর্বস্ব গভর্ণর হিসেবে প্রতিবছর মানুষ ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে হাজির হয়ে সাহায্যের জন্য হাত পাতা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীদের অন্যতম নির্ধারিত কাজ৷ দেশে ফিরে এসে অবশ্য প্রায়ত দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও শাহ এ এস এম কিবরিয়া বলতেন, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিদেশে যেতে ভাল লাগেনা৷ তবুও এ কাজটি থেকে কোনো অর্থমন্ত্রীই বিরত থাকেন নি৷ অবসর গ্রহণের পর অর্থনৈতিক আমলারা টিভি টকশোতে যতটা জোরের সঙ্গে কথা বলে সহজে সব দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর চাপিয়ে দেন৷ চাকুরীতে থাকাকালীন সময়ে তাদের বেশীর ভাগই নিয়মসিদ্ধ ও বিধিবদ্ধ কাজের বাইরে যাননি৷ আমি ওই লেখায় আরও বলেছিলাম, সাবেক এক অর্থনৈতিক আমলা তার ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেছেন, আত্মমর্যদা সম্পন্ন কোন ব্যক্তির পক্ষেই ইআরডিতে বেশী দিন কাজ করা সম্ভব নয়৷ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের মানুষ গত বছরের চেয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বেশী কর রাজস্ব দিয়েছে৷ বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের আকার এখন ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা৷ পদ্মা সেতু তৈরীর জন্য ২৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে৷ এ অর্থ দেশের অভ্যন্তরীণ উত্স থেকেই জোগাড় করা সম্ভব, সে কথা দেশের বিশিষ্টজনেরা বারবারই বলছেন৷ তারা বলে আসছেন, পদ্মা সেতুর মতো অবকাঠামো নির্মাণে যোগ্য মেধা, প্রযুক্তি ও অর্থ দেশেই আছে, প্রয়োজন কেবল সাহসের৷
আমি আমার লেখায় মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সকল রাজনৈতিক দল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মহলকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে জাতির প্রত্যশা পূরণে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছিলাম৷ আমরা জানি প্রতি বছর বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ ডুবিতে শতশত মানুষের প্রাণহানি ঘটে৷ বিশেষ করে ঈদের সময়গুলিতে লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার কারণে এই লঞ্চ দূর্ঘটনা ঘটে৷ পদ্মা সেতু নির্মিত হলে এ সমস্ত নৌ-দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ কোটি মানুষ৷ এছাড়াও এমনিতেই প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডোর মতো ভয়াবহ আবহাওয়া জনিত ঘটনার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ৷
রেলপথ নিমার্ণ করতে ৮২ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করতে হবে৷ রেললাইন স্থাপনে ৮৩টি ব্রীজ নির্মান করতে হবে৷ তার মধ্যে বড় ব্রীজ ২৭টি এবং ছোট ব্রীজ ৫৬টি৷ এছাড়াও বুড়িগঙ্গা ও ধলেরশ্বরী নদীতে নির্মান করতে হবে ২টি ব্রীজ৷ রেললাইনে ৭টি স্টেশন করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তবে রেললাইন স্থাপনে এখন পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি৷ পদ্মাসেতু নির্মিত হলে সেতুর দুই পাশে গড়ে উঠবে শিল্পনগরী৷ রেশম শিল্পের বিকাশ ঘটাতে নেয়া হবে ব্যাপক পরিকল্পনা৷ গড়ে উঠবে পর্যটনকেন্দ্র৷ দেশীবিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে৷ এর ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে৷ পদ্মাসেতুর নির্মান কাজের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সেতু নির্মাণের কাজে এখন ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা৷ দেশের রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে৷ দেশের অর্থনিবিদদের মতে পরিকল্পনা কমিশন এখন বলতে পারে যদি ১শত মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকে তাহলে সে কাজে বিদেশের কাছে হাত পাততে হবেনা৷ চলতি আর্থ বছরে দেশের উন্নয়ন বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার শত কোটি টাকা৷
বাঙালির ইতিহাস বীরত্বগাঁথার ইতিহাস৷ অতীতে আমাদের দেশের বীর-বিপ্লবীরা জীবন দিয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দেলন, ৬৯’এর গণআন্দোলন ও গণঅভু্যত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে৷ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আত্মাহুতি দিয়েছেন৷ ৩ লাখ মা-বোন সম্বম হারিয়েছেন৷ স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পদ্মা সেতু নির্মান আমাদের দেশের জন্য আজ বড় অর্জন৷ বিভিন্ন সময় আমরা শুনেছি৷ একদিন রাজধানীতে মেট্রোরেল হবে৷ যানজটের নিরসনের জন্য ফ্লাইওভার হবে৷ কর্ণফুলি নদীতে চ্যানেল নির্মিত হবে৷ এ সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের দেশের মানুষের কাছে একদিন স্বপ্নের মতো মনে হতো৷ বহু প্রত্যাশিত এ স্বপ্নগুলো এখন বাস্তবায়ন হতে চলেছে৷ দেশের উত্তরাঞ্চলে এক সময় মঙ্গা হতো৷ মঙ্গার সময় উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম,নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলাগুলোর মানুষ বছরের ৬ মাস অর্থাভাবে অনেক কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতো৷ সেখাননকার মানুষ এখন এক ফসলী জমিতে দ্বি-ফসলী চাষাবাদ করছে৷ এছাড়াও বর্তমানে সেখানে প্রচুর সবজি চাষ হচ্ছে৷ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু নির্মিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর চাষীরা সবজিসহ অন্যান্য মালামাল সরাসরি রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করতে পারছে৷ যার ফলে পাল্টে গেছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা৷ আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এক সময় বিদেশী ঋণ সহায়তার উপর নির্ভর করতে হতো৷ আজ সে অবস্থা পাল্টে গেছে৷ এটা সম্ভব হচ্ছে বর্তমান সরকারের সৃষ্টিশীল পরিকল্পনা এবং সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে৷
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৯৯২ সালে৷ তখন রাজধানীর সড়কগুলোতে যানজট ছিলো না৷ দীর্ঘদিন পর গত ১২ ডিসেম্বর আবার বাংলাদেশে আসেন তিনি৷ এবার তিনি রাত ১০টার পরও রাজধানীতে যানজট দেখতে পান৷ তাঁর মতে, রাস্তায় অনেক গাড়ি চলছে, এটা অর্থনৈতিক সক্ষমতারই একটি বার্তা৷ আর এই যানজট অর্থনৈতির নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ উন্নয়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ পরদিন গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত লোকবক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নকে এভাবেই তুলে ধরেছেন৷ তিনি তাঁর বক্তৃতায় ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৫ সালে মাথাপিছু আয়, জিডিপির অনুপাতে বিদেশী বিনিয়োগ ইত্যাদি খাতের অগ্রতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন৷ নোবেল বিজয়ী বাঙালি ড. অমৃত সেনের কৃর্তিমান ছাত্র প্রথিতযশা এই বাঙালি অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত সূচনার পর্যায়ে রয়েছে৷ তিনি বলেছেন, বিনিয়োগ বাড়লে প্রবৃদ্ধি হবেই৷ মোট দেশজ (জিডিপি) ২৯ শতাংশের সমপরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে৷ এটা সুন্দর ভবিষ্যতের একটি সংকেত৷ বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, চলতি বছর বাংলাদেশ সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে৷ আগামী বছর তা ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হবে, যা চীনের সমান৷ এ তুলনা ৫-১০ বছর আগে চিন্তা করাও দুরূহ ছিল৷ তিনি বলেছেন, এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না শিগগিরই এশিয়ার নতুন বাঘ হিসেবে আবির্ভুত হবে বাংলাদেশ৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ লোকবক্তৃতার বিষয়বস্তু হলো, ‘বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশ ও অঞ্চলিক সহযোগিতা : সমস্যা ও সম্ভাবনা ‘৷ কৌশিক বসু আরও বলেছেন, বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যা বোনাসের যুগে প্রবেশ করেছে৷ প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করবেন৷ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পূক্ত করতে হবে৷ এ জনসংখ্যা বোনাসের সুযোগ নিতে এর ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি৷
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এখন জাতি হিসেবে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দূর্লভ সুযোগ সুষ্টি হয়েছে ৷ ক্ষমতাসীন সরকারকে স্মরণ রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল ও মহলকে ঐক্যবদ্ধ করে ৭২’এর সংবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শহীদদের স্বপ্নপূরণে প্রত্যাশিত সোনার বাংলা গড়ার এখনই উপযুক্ত সময়৷
লেখক : আবদুল জব্বার
ই-মেইল : [email protected]