বৃহস্পতিবার ● ৯ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিরাজগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে চারশতাধিক ফিটনেস বিহীন বাস-মিনিবাস
সিরাজগঞ্জের সড়ক-মহাসড়কে চারশতাধিক ফিটনেস বিহীন বাস-মিনিবাস
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: (২৫ শ্রাবণ ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.১৮ মি.) ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক নয় এমন অন্তত চার শতাধিক বাস-মিনিবাস ও কোচ সিরাজগঞ্জ থেকে চলাচল করছে সিরাজগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন দুরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটে।
সরকারি আইন অমান্য করে অবৈধভাবে যাত্রি পরিবহন করা এই সমস্ত যানবাহনের কোন কোনটির বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রেশন নম্বর জালিয়াতি করার মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। ফিটনেসবিহীন এই সকল বাস-মিনিবাস ও কোচ চালকদের অধিকাংশের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই বা কারও কারও লাইসেন্স থাকলেও তা সঠিক সময়ে হালনাগাদ করা হয়নি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ বা অবৈধ চালকদের আইনের আওতায় আনতে বিআরটিএর পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করার কথা বলা হলেও তা যথেষ্ট নয়।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ অফিস, জেলা বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতি, মটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরেজমিন বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ অফিস থেকে ৫৪০টি বাস, মিনিবাস ও কোচের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ এর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও বাস ষ্ট্যান্ড থেকে আন্তঃজেলা বা দুরপাল্লা রুটে চলাচলের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতিতে সদস্য হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত রয়েছে ৫১৬টি যানবাহন।
বিআরটিএর তথ্য মতে সর্বশেষ ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এই ৫৪০টি বাস-মিনিবাস ও কোচের মধ্যে মাত্র ১৭৬টি ফিটনেস ও রুটপারমিট হালনাগাদ সনদ গ্রহন করেছে। বাকিগুলো শর্তপূরণ করে পরিদর্শন সাপেক্ষে এখনো ফিটনেস বা রুট পারমিট সনদ গ্রহন করেনি। ফিটনেস ও রুটপারমিট হালনাগাদ করা এই যানবাহনগুলির বাইরে বেশ কিছু যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত জটিলতাও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিরাজগঞ্জ এম এ মতিন বাস টার্মিনাল থেকে মহিষলুটি, গুল্টা-তাড়াশ রুটে চলাচলকারি একটি বাস রেজিস্ট্রেশন নম্বর জালিয়াতি বা পরিবর্তন করে যাত্রি পরিবহন করছে। চট্টগ্রাম মেট্র-জ-২৪৩৪ (এনালগ) রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে জেলা বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতিতে সদস্য হিসেবে অন্তভুক্ত হলেও বাসটিতে লাগানো রয়েছে ঢাকা মেট্র-জ-১৪-২৭১৭ (ডিজিটাল) নম্বর প্লেট। এমন অভিযোগ রয়েছে আরো বেশ কিছু যানবাহনের বিরুদ্ধে।
সিরাজগঞ্জ থেকে শহরের ঢাকা রোডস্থ বেশ কয়েকটি কাউন্টারের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা, এম এ মতিন বাস টার্মিনাল থেকে সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ-তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া, সিরাজগঞ্জ-রংপুর, সিরাজগঞ্জ-পাবনা, সিরাজগঞ্জ-কুষ্টিয়াসহ অভ্যান্তরিন ও দুরপাল্লা রুটে চলাচল করে অন্তত চার শতাধিক বাস-মিনিবাস ও কোচ। এর মধ্যে অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। আবার ফিটনেস থাকলেও নেই বৈধ লাইসেন্সধারি চালক। একদিকে ফিটনেসবিহীন যানবাহন অন্যদিকে অদক্ষ চালকের সমন্বয়ে গড়া এই পরিবহন ব্যবস্থা ক্রমশ ভয়ংকর রুপ ধারণ করার পরও প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যাত্রি বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যাতায়াত করছে।
জেলা বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সদস্য আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে শুধু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করাই নয়, যে চালকেরা বাস চালাবে তাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কিনা তাও পরিক্ষা না করে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতি এই বিষয়ে নিজস্ব উদ্যোগে অভিযান চালানোসহ বিভিন্নভাবে তৎপর রয়েছে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলকে বড় করছে উল্লেখ করে সিরাজগঞ্জ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাজী আনছার আলী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের ইউনিয়নের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও বৈধ লাইসেন্সে রয়েছে। যাদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদেরকে কাগজপত্র ঠিক করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে যে সকল গাড়ির ফিটনেস ও অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র রয়েছে সেগুলো চলবে এবং বৈধ লাইসেন্সধারি ড্রাইভারেরাই ঐ গাড়ি চালাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিরাজগঞ্জ এর সহকারি পরিচালক (এডি) ইঞ্জিনিয়ার আলতাব হোসেন জানান, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বা ড্রাইভিং লাইসেন্সেবিহীন অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ব থামাতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি।
গত জুলাই মাসে আটটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৯৫টি মামলা প্রদান ও নগদ এক লক্ষ পাচ হাজার চারশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ও জেলার পরিবহন সেক্টরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সেবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করতে এই অভিযান চলতি মাস থেকে জোরদার করা হবে।