শনিবার ● ১৮ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ » সিএনজি ড্রাইভারের সহযোগিতায় বাড়ছে ছিনতাই
সিএনজি ড্রাইভারের সহযোগিতায় বাড়ছে ছিনতাই
সিলেট প্রতিনিধি :: (৩ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৫৮মি.) সিলেটের নগরে অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সিলেটবাসী। সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের যোগসাজেসে এসব ঘটনা ঘটছে। সিলেটে এমন ছিনতাইর ঘটনা নতুন নয়। বেশ কয়েকবছর ধরেই একটি চক্র এ কায়দায় ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছে। আর ছিনতাইকারীদের পাঁতা এই অভিনব ফাঁদে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত এরকম অভিনব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ছিনতাইকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সম্প্রতি নগরীতে দিনে দুপুরে ছিনতাইর শিকার হওয়া সিলেটের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বন্দরবাজার থেকে উপশহর যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠেছিলাম। চালক ছাড়াও অটোরিকশায় আরো ৪ জন যাত্রী ছিলেন। অর্ধেক পথ সোবহানীঘাট পয়েন্ট এলাকায় আসলে এক যাত্রী চালককে বলেন, এদিকে কেন যাচ্ছন ? চালক বলল একজনের সাথে দেখা করবে।
সাথে সাথেই চালক অটোরিকশা ঘুরিয়ে উল্টো পথে যাওয়া ধরল। তখন আমি চালককে জিজ্ঞেস করলাম কেন গাড়ি ঘুরাচ্ছো। চালক আমাকে উপশহর ডেকে তুললেও তখন বলল সে টিলাগড় যাবে। তখন আমি গাড়ি থামিয়ে নেমে সেখানেই গেলাম। গাড়ি থেকে নামার পর কিছুদূর গিয়েই টের পেলাম আমার পেকেটে থাকা স্যামসাং গ্যালাক্সি মোবাইলটি নেই। ততক্ষণে চালক দ্রুত বেগে এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
তিনি আরো বলেন- এই ঘটনার শিকার হওয়ার পর অনেকের সাথেই বিষয়টি শেয়ার করেছি। দেখলাম শুধু আমি না, সিলেটের অনেক মানুষ একই কায়দায় ছিনতাইর শিকার হয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে আরো অনেকেই এমন ঘটনার কথা তার স্ট্যাটাসের কমেন্টে তুলে ধরেন।
এরকমই এক যাত্রী বাশার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আজ থেকে দুই মাস আগে রোজভিউ পয়েন্ট থেকে সিএনজি যোগে বন্দর যাচ্ছিলাম, আমি সিএনজিতে উঠার আগেই আরো তিনজন যাত্রী ছিল। আমি বন্দর নামার কিছুক্ষন পর টের পেলাম আমার পেকেটে থাকা সিম্পনি মোবাইলটি নেই। ততক্ষণে চালক দ্রুত বেগে এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
জানা যায়, সিলেট নগরীতে এই পন্থায় সাধারণ মানুষের গুরত্বপূর্ণ জিনিষ নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারীরা। সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার-মেজরটিলা, আম্বরখানা-মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজার-হুমায়ুন রশীদ চত্বর, টিলাগড়-আম্বরখানা, উপশহর-সোবহানীঘাট-বন্দরবাজার, বন্দরবাজার-আম্বরখানা, সুরমা পয়েন্ট-ওসমানী মেডিকেল, মদীনা মার্কেট-ভার্সিটি গেইট প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে।
এসব এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইকারীরা আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। একেকটি অটোরিকশায় চালক ছাড়া আগে থেকেই দু’তিনজন ‘যাত্রী’ ওঠে বসে থাকেন। কোনো প্যাসেঞ্জার এলে তাকে অটোরিকশায় তুলে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে আগে থেকেই বসে থাকা যাত্রীরা কৌশলে ওই ব্যক্তিকে পেছনের সিটে মধ্যখানে কিংবা তাদের সুবিধাজনক যায়গায় বসিয়ে দেয়। এরপর অটোরিকশা চলাকালে সুযোগ বুঝেই যাত্রীর জিনিষপত্র হাতিয়ে নেয় তারা। আর কাজ শেষ হলেই নানা কাহিনীর জন্ম দিয়ে ঔ যাত্রীকে নামিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
কোন কোন সময় আরো বড় ঘটনাও ঘটায় তারা। অটোরিকশা চলাকালীন নিরাপদ স্থান বুঝে ছিনতাইকারীরা যাত্রী বেশ থেকে নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র কিংবা পিস্তল ধরে অটোরিকশার ঔ ব্যাক্তির কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দেয় তারা।
বছর খানেক আগে সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার ব্যবসায়ী কাজী বায়েস একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। উপশহর থেকে বন্দরবাজার যাওয়ার পথে তাকে ‘গাড়ি নষ্ট’ বলে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারীরা। পরে তিনি পকেটে হাত দিয়ে নিজের আইফোন সিক্স মডেলের সেলফোন পাননি।
কিছু দিন আগে এক ডাক্তার সাহেব মিরাবাজার থেকে বন্দর আসছিলেন সিএনজি যোগে, সেই সিএনজিতে আগে থেকেই দিইজন যাত্রী ছিল। কিছু দুর আসার পর এক যাত্রী তার টাকা পড়ে গেছে বলে গাড়ীর সিটের আশাপাশে খোজাখুজি করতে থাকে এবং কিছুক্ষন পর সে নেমে যায়, আর তখন গাড়ীর ড্রাইভার বলে ভাই আপনি নেমে যান আমার গাড়ীর কাগজ নেই আমি বন্দর যাব না। আর আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবো না। আমি সিএনজি থেকে নেমে অন্য গাড়ীতে করে বন্দর চলে আসি। কিন্তু বিপত্তি বাধে ভাড়া দিতে গিয়ে। আমি আমার পকেটে হাত দিয়ে দেখি যে, পকেটে আমার মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোনটি নেই।