মঙ্গলবার ● ২২ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » কৃষি » আলীকদমে চিওনী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিগ্রাস করার চক্রান্ত
আলীকদমে চিওনী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিগ্রাস করার চক্রান্ত
হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চিওনী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিগ্রাস করার চক্রান্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷ ‘অবৈধভাবে সম্পাদিত জমি বিক্রয় বায়না নামা দলিল ও নামজারী মামলা বাতিল’ চেয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে ৷ অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও কার্যালয়ের সার্ভেয়ার এলটন চাকমা জানান, ‘ইউএনও’র নির্দেশে এ সংক্রান্ত তদন্ত চলছে’ ৷
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল আমিন বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি ৷ তবে সরেজমিনে তদন্ত না করে কিছুই বলা যাচ্ছেনা ৷ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক তড়িত্ ব্যবস্থা নেয়া হবে ৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার চিওনী মুরুং পাড়ার বাসিন্দা মৃত পুংকে মুরুং এর ছেলে মেনচুক মুরুং এর নামে ২৮৮নং আলীকদম মৌজার ৩৬৪ নম্বর হোল্ডিং-এ ১ একর ৮০ শতক জমি সরকারী রেকর্ডে আছে ৷ ১৯৮১ সালের ১ জুলাই এ জমি তাঁর নামে বন্দোবস্তির হুকুম হয় ৷
১৯৮৬ ইং সালে চিওনী পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জমির প্রয়োজন হলে মেনচুক মুরুং তার হোল্ডিং থেকে প্রয়োজনীয় জমি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দান করতে উদ্যোগী হন ৷ ১৯৮৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তত্কালীন উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আলীকদম এর আদালতে সম্পাদিত ১০/১৯৮৬ নম্বর এফিটডেবিটমূলে শিক্ষা সচিব বরাবর জমি দান করা হয় ৷ যাতে মেনচুক মুরুং ৩৬৪ নম্বর হোল্ডিং থেকে ১ একর ৩০ শতক জমি ‘চিওনী পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এর নামে দান করেন ৷ এ জমির ওপর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয় ৷ এটি বর্তমানে সরকারী স্কুল ৷ স্কুলকে জমি দান করার পর জমির মালিক মেনচুক মুরুং এর নামে আরো ৫০ শতক জমি অবশিষ্ট আছে ৷
স্কুল পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি আব্দুস ছত্তার ইউএনও’র নিকট এক লিখিত অভিযোগে জানান, স্থানীয় মৃত ওবাইদুল হাকিমের ছেলে আবুল হাশেম গত কয়েকবছর ধরে এ স্কুলের নামে দানপত্রকৃত জমিগ্রাস করার চক্রান্ত লিপ্ত হন ৷ তিনি (আবুল হাশেম) ৩৬৪ হোল্ডিং এর জমির মালিক মেনচুক মুরুংকে কৌশলে এ জমি বিক্রিতে রাজি করান ৷ মেনচুক মুরুং এর বয়স বর্তমানে ৭০ বছর ৷ তাকে ২০১৪ সালের ২ জুন ইউএনও অফিসে এনে ‘জমি বিক্রয় বায়না নামা দলিল নং- ৮৪/২০১৪ মূলে ৫০ শতক জমি ক্রয়ের দলিল রেজিস্ট্রী করে নেন ৷ পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারীতে একই কায়দায় ‘জমি বিক্রয় বায়না নামা দলিল নং-২৪/২০১৫ সৃজন করে ইউএনও অফিসের মাধ্যমে ১ একর ৩০ শতক জমি ক্রয়ের দলিল রেজিস্ট্রী করাইয়ে নেন ৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি মতে, হোল্ডিং এর জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির মালিকের নিকট নু্যনতম ৫০ শতক জমি নিজ নামে অবশিষ্ট রাখতে হয় ৷ এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি ৷ জমি ক্রয়কারী আবুল হাশেমকে ইউএনও অফিসের মাধ্যমে দু’টি দলিল রেজিস্ট্রীতে সহযোগিতা করেন স্থানীয় পিটিশন রাইটার মোঃ রিটন৷ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে পার্শবর্তী লামা উপজেলার মতো আলীকদমেও কৌশলে ভূয়া দলিল সৃজনের একাধিক অভিযোগ উঠেছে ৷ অভিযোগের বিষয়ে রাইটার মোঃ রিটন বলেন, ‘কাগজপত্রে দেখেই দলিল দু’টি সম্পাদন করা হয়েছে’ ৷
স্কুল কমিটির অভিযোগে দাবী করা হয়, নামজারী মামলা নং- আক/৫১/২০১৫ এর মাধ্যমে এ জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য সুচতুর আবুল হাশেম ইতোমধ্যে ইউএনও কার্যালয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন ৷ স্কুল কমিটি আশংকা করছেন কথিত দু’টি দলিল মূলে ৩৬৪ নং হোল্ডিং সম্পূর্ণ (১.৮০ একর) জমির রেকর্ড সংশোধন করা হলে স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জমির মালিকও ভূমিহীন হওয়ার আংশকা আছে ৷ ০১৮৩৮০৫২৬৭৭
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে আবুল হাশেম বলেন, ‘আমি ৩৬৪ হোল্ডিং এর জায়গা দু’টি দলিলমূলে কিনেছি তবে আমি যে জায়গা কিনেছি, স্কুলটা সেখানে নয় ৷ স্কুলটি বর্তমানে যেখানে আছে সেটি খাস জমি ৷ স্কুল যদি চায় আমি জমির দখল ছেড়ে দিতে বাধ্ য৷ কারণ স্থানীয় জাকের হোসেন মেম্বার জীবিত থাকার সময়ে স্কুলের জায়গা দখলে নিয়ে সেগুন বাগান সৃজন করেছে ৷ যা তার ওয়ারিশদের দখলে আছে ৷ তিনি দাবী করেন, ‘সার্ভেয়ার দ্বারা নিরপেৰ তদন্ত করা হলে স্কুলের জায়গার প্রকৃত দখলবাজকে চিহ্নিত করা যাবে’৷
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ইলিয়াছ বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি জেনেছি ৷ স্কুলের নামে দানপত্রকৃত ভূমি যাতে অন্য কেউ রেকর্ড করে নিতে না পারে সেজন্য ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে’ ৷