সোমবার ● ২৭ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গোবিন্দগঞ্জের বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতদের ঈদ
গোবিন্দগঞ্জের বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতদের ঈদ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: (১২ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.০৭মি.) গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত অধিকাংশ বৃদ্ধের চোখের পাতায় মোটা রেখা স্পষ্ট। উশখো পাকা চুল। একটু চলাফেরা করলেই বয়সের ভারে হাঁপিয়ে ওঠেন। তবুও প্রতিদিন তারা হেঁটে বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান ফটকে কখনো আলতো কখনো পিঠ ঠেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন যদি দেখা মেলে সন্তানের। আশাভঙ্গের যন্ত্রণা আর হারানো দিনের সুখস্মৃতি বয়ে বেড়ানো বাবা-মা তারা। তাই নিয়তি তাদের কাঁদায়। এমনকি ঈদের আনন্দের দিনেও কাঁদেন তারা। বৃদ্ধাশ্রমটি স্থানীয় কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া তরুণের উদ্যেগে গড়ে ওঠা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার গোবিন্দগঞ্জ-নাকাইহাট সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত বৃদ্ধসেবা বৃদ্ধাশ্রম।
বৃদ্ধাশ্রমের বসবাসকারী ৭১ বছরের ছামিলা বেওয়া। আছেন বৃদ্ধা আমিরুন নেছা, মজিরন বেওয়া, সুফিয়া বেগমসহ অনেকেই। তারা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা এখন বাতিলের খাতায়। আমাগো নিয়ে সন্তানদের ভাববার সময় নেই। গত কয়েক ঈদের দিনেও তারা আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। আশ্রমের ৮০ বছরের বৃদ্ধা কদবানু বেওয়া তার অতীতের স্মৃতিচারন করে বলেন সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে কত কষ্ট করেছি নানা দুর্ভিক্ষ, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা সংকটের মুহুর্তেও সন্তানদের আগলে রেখেছি। কিন্তু আজ সন্তানরা বড় হয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে একে একে সবাই যে যার মতো করে থাকতে শুরু করে। ওদের সাথে আমাকে রাখা বোঝা মনে হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে এখানে আছি। এখানে আসার পর থেকে ঈদের দিন তাকে কেউ দেখতে আসেনি এটাই বড় দুঃখ। অন্তত ঈদের দিন ছেলে-মেয়ে ও নাতীদের দেখা পাওয়ার আশায় কোনমতে হেঁটে গেটের সামনে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। সন্ধ্যা নেমে গেলেও পরিচিত কাউকে না দেখে চোখের পানি ফেলে রুমে চলে আসেন। মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে মাঝেমধ্যে কাঁদেন। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যান টেরই পান না। বৃদ্ধাশ্রমের অপর এক বৃদ্ধ ইদ্রিস আলী ঈদের নামায আদায় করে ফেরার সময় অশ্র“ ধরে রাখতে পারেননি। তার বুক জুড়ে রাজ্যের দুঃখ। মনে পড়ে সুখের সেই দিনগুলোর কথা। যখন তার সন্তান খুব ছোট, ওই সময় সন্তানকে কোলে-কাঁধে করে ঈদগাহে নিয়ে যেতেন। নামায পড়তেন সঙ্গে নিয়ে। আজ সেই আদরের ছেলে জীবিত থেকেও কাছে নেই।
এ বৃদ্ধাশ্রমের উদ্যোক্তারা জানায়, এখনো মাঝে মধ্যে অনেক বৃদ্ধা এখানে আশ্রয় নিতে আসে, আর্থিক সংকটের কারণে আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই। কারণ এখন এ বৃদ্ধাশ্রমে ১৯ জন নারী পুরুষ আছে তাদের পরিচালনা করতেই আর্থিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা ও সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে আমাদের এ বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালনা করতে সহজ হতো।