বুধবার ● ২৯ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » সমালোচনা : “বিজুফুল” বিজু উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি বিশেষ সাময়িকি
সমালোচনা : “বিজুফুল” বিজু উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি বিশেষ সাময়িকি
উত্তম কুমার বড়ুয়া :: “বিজুফুল” বিজু উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি বিশেষ সাময়িকি। এটির প্রকাশকাল ১০ এপ্রিল ২০১৮ খ্রি.। প্রকাশক সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডচকম, রাঙামাটি। প্রধান সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা-৪৪। প্রচ্ছদে রয়েছে বিজুতে ব্যবহৃত বিজুফুলের ছবি, ব্যাক কাভারে পাহাড়ের ব্যাক গ্রাউন্ডে পার্বত্য অঞ্চলের সাংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত ছয়টি ফটোগ্রাফ।
বিজু কথাটি চাকমা ভাষার শব্দ। তা এসেছে মহাবিষুব সংক্রান্তি থেকে। এটি পৃথিবীর এক পরিবর্তনের শেষ দিন। সংক্রান্তি মানে শেষ দিন। বাংলা পঞ্জিকা মতে প্রতিমাসেই একটি করে সংক্রান্তির দিন আসে। এইভাবে বৎসরের শেষ মাসেও একটি সংক্রান্তির দিন আসে। আমরা মাসের নামানুসারে চৈত্য সংক্রান্তি বলে থাকি। যেহেতু এই দিনটি বৎসরেরও শেষ দিন তাই একে বিষুব বা মহা বিষুব সংক্রান্তি বলা হয়। পৃথিবীর সূর্যাবর্তনের শেষ দিন হিসেবে এই দিনে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াব্যাপী বিভিন্নপূজা পার্বন (বিশেষত হতু বা সূর্য পূজা) হয়। এই পূজা সাধারনত কোন খোলামাঠে হয়ে থাকে। পূজা উপলক্ষ্যে গণ জমায়েত হয়ে মেলায় রুপ নেয়। বর্তমানে বিভিন্ন কারনে মেলার পরিসর ছোট হয়ে গেছে। পূজা একদিন হলেও কোন কোন স্থানে মাসব্যাপী গণ জমায়েত থাকত। কারণ মানুষ যেখানে ব্যবসা সেখানে। এই চৈত্য বা মহা বিষুব সংক্রান্তি মূল শব্দের সাথে সংগতি রেখে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির ভাষায় বিভিন্ন নাম করন করেছে। যেমন চৈত্র মাসের নামের সাথে সংগতি রেখে চৈত্র সংক্রান্তি, চৈত্র পরব, বিষুব শব্দের সাথে সংগতি রেখে বিহু পরব, বিষু পরব, বৈষুক এবং সংক্রান্তির সাথে সংগতি রেখে সাংগ্রেং ইত্যাদি নামকরণ করা হয়েছে। চৈত্র মাসের বা বৎসরের শেষ দিন মুল বিজু বা মুল উৎসব, এর পূর্ব দিন ফুল বিজু বা বিজু বরন এবং এর পরদিন নতুন বছরের প্রথম দিন গজ্জে পজ্জে দিন বা আরাম আয়েশের দিন। এভাবেই দিনগুলি উৎসবের নামকরন করা হয়েছে।
বিজুফলের সম্পাদকীয় লিখেছেন, প্রধান সম্পাদক। শুভেচ্ছা বানী পাঠিয়েছেন প্রফেসর ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, ভাইস চ্যান্সেলর রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জনাব একেএম মামুনুর রশিদ জেলা প্রশাসক রাঙামাটি পার্বত্য জেলা, অধ্যাপক ডা. টিপু সুলতান অধ্যক্ষ রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, প্রফেসর জাফর আহমদ অধ্যক্ষ রাঙামাটি সরকারী কলেজ, মো. তৌফিকুল ইসলাম উপ বন সংরক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগ রাঙামাটি, অরুন কান্তি চাকমা চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ রাঙামাটি সদর উপজেলা, মোছাম্মদ সুমনী আক্তার উপজেরা নির্বাহী কর্মকর্তা রাঙামাটি সদর উপজেলা, জীবন ইসলাম সাধারন সম্পাদক অনলাইন মিডিয়া ওনার্স এসোসিয়েশন ও সিনিয়র রিপোর্টার (অর্থনীতি) ডেইলী অবজারভার, প্রযুক্তিবিদ রোকমুনুর জামান রনি সাধারন সম্পাদক বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টার এসোসিয়েশন (বনপা) কেন্দ্রীয় কমিটি, মো. বেলায়েত হোসেন ভুইয়া বেলাল সভাপতি রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এবং কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল সম্পাদক ও প্রকাশক দেশবিদেশ টুয়েন্টিফোর ডটকম।
এই প্রকাশনায় বর্ষবরনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সতেরটি লিখা স্থান পেয়েছে। লায়ন গণি মিয়া বাবুল (শিক্ষক, কলাম লেখক,প্রাবন্ধিক ও সমাজ সেবক) “বৈশাখ মিশে আছে বাঙারির হৃদয়ে অন্তরে” শিরোনামে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রেক্ষিত আলোচনা করেছেন এবং দৈনন্দিন জীবণে বাংলা দিন তারিখ, প্রচলনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। এটি চর্চা ও অভ্যাসের বিষয়। আমাদের দেশের গ্রামঞ্চলে মুখে মুখে এর প্রচলন দেখা যায়। মাসটি কি করে শুরু এবং কদিনে শেষ এটুকু জেনেই তারা দিন হিসেবে কষে নেয়। মাসটি যদি রবিবারে শুরু হয় তবে তারা প্রথমে বারটি জেনে নিয়ে তারিখ এবং বার নেয় দিনটি সোমবার তারিখ হবে। তাহলে এর হিসেবে হবে রবিতে একমাসে দুই তারিখ বা রবিতে রবিতে আট সোমে ৯ তারিখ অথবা তিন রবিতে পনেরো সোমে ষোল তারিখ এভাবে। যাই হোক বাংলাদেশের বাংলা চর্চা অপরিহার্য। “শিক্ষকের মান অপমান” শিরোনামে লিখেছেন ড. মো. জাফর ইকবাল (শিক্ষাবিদ, লেখক) এ লেখায় তিনি শিক্ষকদের সুবিধা অসুবিধা তাদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে রসাত্মক কিন্তু বাস্তব ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন। রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী) “কিভাবে এল রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী এবং আমার কিছু কথা”য় তার জীবণী প্রসঙ্গেও সম্পৃক্ত নানা কর্মকান্ড ও রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার ইতিকথা সুন্দরভাবে লিখেছেন। নিজ জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার দায়িত্ববোধ ছিল অসাধারন লিখাটি হিল রিচার্স ও প্রোটেকশন ফোরামের নভেম্বর ২০০৭ খ্রি. প্রকাশিত মাওরুম মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার বিশেষ সংখ্যার সম্পাদক দীপায়ন খীসা কতৃক গ্রহীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা বিশিষ্ট আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের স্বাক্ষাতকার। এই স্বাক্ষাতকারে তিনি এমএন লারমাকে দায়িত্বশীল, উদার, যুক্তিবাদী, পরমত সহিঞ্চু, নির্লোভ ও নিজ জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়িত্বশীল বলে উল্লেখ করেন। বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পী (স্নাতকোত্তর অধ্যায়নরত ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-ইউল্যাব, জনসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ) এর বাংলাদেশে বড়ুয়া সম্প্রদায়ের জীবণ যাত্রার একটি সমাজ ধারা বিশ্লেষন মূলক লেখা। তিনি প্রাক কথন, পটভুমি, সমাজব্যবস্থা, স্বীকৃতি ও প্রশাসনিক অবস্থান, খাবার, ধর্ম ও বিশ্বাস, বিবাহ ও শিক্ষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি, মৃত্যু ও শেষ কার্যসাধন ও মূল প্রতিপাদ্যকে নিয়ে কথা বলেছেন। লিখাটি স্থানিক, লেখকের নিজস্ব মতামত। বড়ুয়া শব্দটি প্রাচীন আসাম ও ত্রিপুরা রাজ বংশের সৈন্য দলের সেনা কর্মকর্তাদের একটি পদবী। বরুয়া বড়ুয়া বলে দুটি পদবীর একই উচ্চারণ হলেও বরুয়া পদবীটি আসাম রাজবংশের প্রদত্ত পদবী এবং বড়ুয়া পদবীটি ত্রিপুরা রাজবংশের প্রদত্ত পদবী। চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড়ুয়া নামে একটি গোত্র রয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমার এ বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর মূল বসবাস। তারা মূলত প্রাচীন ভারতীয় জনপদ বম্মি থেকে মগদ কতৃক বম্মি দখলের পরে উল্লেখিত স্থানে আগমন করেন। সম্ভবত চট্টগ্রামী আঞ্চলিক বড়ুয়াগণ ভাপার্ষি বড়ুয়াদের মাতৃভাপ। ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে বড়ুয়া গণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাই বুদ্ধদিবস ধর্মদিবস ও সংঘ দিবস তাদের প্রধান ধর্মোৎসব। ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক,। বৌদ্ধ দর্শনের মূল হলো চতুরার্য সত্য। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথে চলে নির্বান লাভই বৌদ্ধদের পরম লক্ষ্য। যাই হোক সমাজবিজ্ঞান নিয়ে লিখতে হলে লেখকের আরো বেশী সচেতন হয়ে লিখতে হবে।
সাইফুল হক (সাধারন সম্পাদক-বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি) “দুর্নীতির কাঙ্খিত বিচার যখন রাজনৈতিক হাতিয়ারে রুপ নেয়। এটি লেখকের স্ববিশ্লেষিত রাজনৈতিক মূল্যায়ন মূলক রচনা। লেখক তার বক্তব্যে দুর্নীতির বিভিন্ন খতিয়ান তুলে ধরে তার বিচারহীনতার প্রশ্ন তুলেছেন। তবে কি এই যুক্তিতে অন্য কোন অপরাধীর বিচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে ? আমরা চাই সকল অপরাধই বিচারের আওতায় আসুক।
Barua Buddist community লেখাটি http://www.baruabuddist.blogpost.com থেকে নেয়া। লেকক অনেক শ্রম দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বিষয় সঠিক চিত্র এ লেখায় পাওয়া যাচ্ছেনা। ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপাদান তা সমর্থন করছেনা।
কাজী হুমায়ুন কবির (সাধারন সম্পাদক, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ইউনিটি) তার লিখায় প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ার কর্মীদের দ্বন্দের বিষয়ে তার আর্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সকল স্তরের সাংবাদিকদের একই পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। যেহেতু একতাই বল।
নির্মল বড়ুয়া মিলন (সভাপতি রাঙামাটি ট্যুরিষ্ট গাইড এসোসিয়েশন ও বিজুফুলের সম্পাদক) পার্বত্য অঞ্চলে বেকারত্ব দূরীকরণে কাপ্তাই হ্রদ ভিত্তিক পর্যটন শিল্পের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিৎ। চৌদ্দটি পরামর্শ সহকারে হ্রদ (রিজার্ভার) ভিত্তিক পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার জন্য লেখাটি সময়ের দাবী। এ লেখায় পর্যটন শিল্প বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা ও সুচিন্তিত সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা রাজনীতিক সামাজিক পরিস্থিতি অনুকুল হলে তা রাঙমাটি পার্বত্য জেলা তথা বাংলাদেশের এক বিশাল আয়ের উৎস হতে পারে। মাইকেল দাশ (রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম) “চাকমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরনে বিজু উৎসব”বিজু বা মহাবিষুব সংক্রান্তি উৎসব উদযাপনের বিষয়ে এক সরল বর্ণনা সংক্ষিপ্ত লেখা বিজু উৎসব পালনের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে।
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্র শিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক “সংস্কৃতির আত্মানুসন্ধানে পহেলা বৈশাখের অগ্রযাত্রা”য় পান্তা ইলিশের কথা, দিনটি হাজার বছরের ঐতিহ্য, রীতিনীতি, প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক বাহক এবং সম্রাট আকবর প্রবর্তিত বাংলা সন বর্তমানে আমরা ব্যবহার করছি ইত্যাদির কথা বলেছেন। এভাবে পহেলা বৈশাখের নাতিদীর্ঘ ও সাবলীল বর্ননা লিখেছেন তবে তথ্য বিভ্রাটসহ।
মুসলিম শাসনামলে ভারত বর্ষে রাজকীয় কাজ কর্মে হিজরী সন প্রচলিত ছিল। সনটি চান্দ্র সন হওয়ার ফসল তোলার সময় ও খাজনা আদায়ের সময়ের হেরফের হতো। এতে করে প্রজাদের খাজনা প্রদানে অসুবিধা হতো। ফলে হিন্দু প্রজাদের আপত্তি অনুসারে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারী বাদশাহ আকবর দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করার পর, তিনি ঐ বৎসর এপ্রিল মাসে চান্দ্র মানে গনিত হিজরী সনকে পৃথকভাবে সৌর মানে গণিত বাঙ্গলা সন রূপে প্রবর্তন করেন। এতে পৃথিবী কর্তৃক সূর্যকে ৩৬০ ডিগ্রী আবর্তনের মোট সময় অর্থাৎ ৩৬৫ দিন ১৫ দন্ড ৩১ পল ৩১ বিপল ২৪ অনুপল (৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড) হিসেবে সৌর বৎসর নির্ধারণ করা হয়। সূর্যের মেষ, বৃষ ইত্যাদি বারটি রাশির স্থিতিকাল এক মাস হিসেবে গণ্য করে বারটি মাস তথা এক বৎসর ধরা হয়। এক বৎসরের সীমারেখা হলো অশ্বিণী নক্ষত্রের ভূ আবর্তনের আদি সময় থেকে রেবতী নক্ষত্রের ভূ আবর্তনের অন্ত সময়। অশ্বিণী নক্ষত্রে অর্থাৎ মেষ রাশিতে সূর্য সঞ্চার হলে নতুন সৌর বৎসর আরম্ভ হয়। ফলে সূর্যের মেষ রাশিতে স্থিতিকাল সৌর বৈশাখ বৎসরের প্রথম মাস হয়। এভাবে বাকী এগারটি রাশির স্থিতিকাল অনুসারে বৎসরের অন্য মাসগুলো হিসেব করা হয়। মহামতি আকবর কর্তৃক বাংলা পঞ্জিকা (ডাইরেক্টরী) প্রবর্তিত হলেও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় সংক্রান্তির দিনগুলো আদি প্রথা অনুসারে প্রচলিত জ্যোর্তিবিজ্ঞানের অনুরূপ রয়ে গেছে। দিনটি শুধু বাংলা নয় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পালিত হয়। তবে এ সংক্রান্তির দিনগুলো গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডারের সুনির্দিষ্ট তারিখের সাথে মিল খায় না। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লা প্রণীত এবং বাংলা একাডেমীর পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা অনুসারে প্রস্তুত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত বাংলা ক্যালেন্ডারের দিন-মাসগুলো গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তিত অনুরূপ। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশ জন্মের পর শিল্পী গোষ্ঠী ছায়ানট প্রতি বছর রমনার বটমূলে তাদের মত ঘটা করে পালন করে আসছিল। তা বর্তমানে রাস্ট্র স্বীকৃত অনুষ্ঠান রূপে গণ্য হয়েছে। এতে পান্তাভাত খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু নববর্ষের প্রথম দিন পান্তাভাত খাওয়া বাঙ্গালী ঐতিহ্য বিরোধী। পান্তার সাথে খাওয়া হয় ইলিশ। ইলিশ বাংলাদেশের সকল খাল, নদী, পুকুর, হাওর, বিলে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় রুই ইত্যাদি জাতীয় মৎস্য। এটিও বাংলার ঐতিহ্যকে সমর্থন করে না। পূরাকালে এদেশে বরফকল ছিল না। বিধায় বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে ইলিশ নয় বরং রুই মাছ সহজলভ্য ছিল। মাছে ভাতে বাঙ্গালী, তবে এ মাছ ইলিশ হতে হবে এমন কথা নয়। দক্ষিণ এশিয়ার হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক বাহক মহাবিষুর সংক্রান্তি। এ অনুষ্ঠানের শেষ অংশ নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী, সস্প্রদায়ের মধ্যে এ উপলক্ষ্যে ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা পালিত হয়ে থাকে। বাঙ্গালীর কৃষি সমাজ নয় বরং এদেশের সর্বস্তরের লোক এ দিনের অনুষ্ঠানাদি পালন করে। তবে যাদের পূজা করার কথা তারা ধর্মের নিয়ম মেনে বিভিন্ন পূজাদি করে থাকে। কোন কোন পূজাস্থানে গণজমায়েত হতে হতে মেলা হয়ে যায়। যাইহোক যেহেতু এটি একটি ব্যাপক বিষয় তাই আরো তথ্য সমৃদ্ধ হলে লেখাটি ভাল হতো।
ভিক্ষু সুমন প্রিয়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভা, আবাসিক, মহানন্দ সংঘরাজ বিহার, মহামুনি পাহাড়তলী, রাউজান, চট্টগ্রাম “জাতি সংঘের শান্তি সম্প্রীতিতে বুদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের প্রভাব”এ শিক্ষা, মৈত্রী, দারিদ্রতা দূরকরণ, মানবাধিকার, মানবতা, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হামলা, ঢাকায় গুলশানের হামলা, কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়া হামলা, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে হামলা, মদিনা সহ সৌদির তিন শহর হামলা, নিস, ফ্রান্সে হামলা, মিউমিখ, জার্মানী হামলা; কাবুল, আফগানিস্থান হামলা; ইউনেস্কো শান্তির সংস্কৃতি, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ সাব টাইটেলের বিষয়গুলো বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে বৌদ্ধ ধর্মের কোন প্রভাবে জাতিসংঘ কি উদ্যোগ নিয়েছেন। এ লেখায় তা অস্পষ্ট। যাহোক শান্তির সপক্ষে লেখকের আলোচনা সাধুবাদ যোগ্য।
হাসিবুল ইসলাম লস্কর, সিলেট জেলা প্রতিনিধি, সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টি ফোর ডট কম “গোয়াসপুর অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি”তে লেখক গোয়াসপুর গ্রামের আবহমান কালের ছবি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ গ্রামের কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাক বা না থাক। তবু তা শাশ্বত বাংলার ঐশ্বর্যমন্ডিত একটি গ্রাম। লেখাটি সুন্দর হয়েছে।
বিপ্লবী সাথীদের উদ্দেশ্যে মাস্টারদা সূর্য্য সেন লিখিত পত্র “আমার শেষ বাণীÑ আদর্শ ও একতা” ইতিহাসের এক প্রোজ্বল দলিল। সোমনাথ সেনগুপ্ত, অনলাইন ডেস্ক থেকে একটি ভাস্কর অতীত উপহার দিয়েছেন পাঠক সমাজের জন্য। এ জন্য তিনি ধন্যবাদার্হ।
মো. ওবায়দুর রহমান সরদার, অধ্যক্ষ, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা “জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির প্রেক্ষিত বাংলাদেশ”এ বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত ডাটার মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতা আমাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারে।
মুহাম্মদ আবু হানিফ খান, লেখক, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল, বাংলাদেশ মিডিয়া ইনস্টিটিউট “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন সাংবাদিকতা”য় উদাহারণসহ আমাদের দেশের উন্নয়ন সাংবাদিকতার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যাতে আমাদের দেশ ও জনগণ এর সুফল পেতে পারে। বিষয়টা যত আলোচনায় আসবে দেশের ততই মঙ্গল হবে।
প্রকৌশলী কাওছার রূপক, ঢাকা ওয়াসা এবং সদস্য, বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব “ঘুরে এলাম নেপালের বরফ রাজ্যে(অন্নপূর্ণার থরংলা পাস ৫৪১৬ মিটার)”এ লেখকের পর্বতারোহনের যাত্রাপথের নাম, উচ্চতা ও বর্ণনা ধারাবাহিকভাবে দিয়েছেন। কাঠমান্ডু, জগত, তাল (১৩০০ মিটার), চামে (২৭১০ মিটার), ডোর অব হেভেন, আসুন টোলে, মানাং, চোংকোর ভিউ পয়েন্ট (৩৮০০ মিটার), লেডার ৪২০০ (মিটার), থরং হাই ক্যাম্প (৪৯২৫ মিটার), থরং ফেদি (৪৫৪০ মিটার), থরং-লা পাস (৫৪১৬ মিটার)। এ লিখায় লেখক তার পর্বত ভ্রমণ কাহিনী সহজ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লিখাটি পাঠকের মনে পর্বতারোহনের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলবে।
ভিন্ন মাত্রায় লিখা নিয়ে সম্পাদক ‘বিজু ফুল’ সাময়িকীটি সাজিয়েছেন। বিচিত্র ধরণের লিখা থাকলেও বিজু উপলক্ষে প্রকাশিত সাময়িকীর ‘বিজু ফুল’ নামকরণ যথাযথ হয়েছে। এখানে প্রোথিতযশার চেয়ে কাঁচা হাতের লিখাই বেশী। এতে করে নতুন লেখক সৃষ্টির পথ সুগম হয়েছে। তথ্য বিভ্রাট রয়েছে কিছু লিখায়। ত্রুটি বিচ্যুতি জীবন ধর্ম। আমরা সম্পাদকের কাছে নতুন আঙ্গিকে এ ধরণের আরো প্রকাশনা আশা করি।
লেখক : কবি উত্তম কুমার বড়ুয়া।
রাঙামাটি।
২৬/০৮/২০১৮ খ্রি.
রাত: ১২:৫০ মি.