বুধবার ● ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথে গেইট নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত
বিশ্বনাথে গেইট নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২১ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ৮.১৫মি.) সিলেটের বিশ্বনাথে গেইট নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধ-অভিযোগের প্রেক্ষিতে জায়গাটি সরেজমিন তদন্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মধ্যবর্তী একটি সড়কের প্রবেশমুখের এই আলোচিত গেইট সরকারী ভূমিতে নির্মিত কি না তা তদন্ত করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা। এ সময় উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও গেইটের পক্ষ-পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ ও ৮ আগস্ট বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ‘হোসেনপুর-মুফতির বাজার’ সড়কে প্রভাবশালীমহল গেইট ও দেয়াল নির্মাণ করেছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে অভিযোগ করে ‘এলাকাবাসী’ নামোল্লেখিত একটি পক্ষ। অভিযোগপত্রে ওই সড়কের নাম উল্লেখ করলেও দাগ (নং-৩০১)-খতিয়ান (ন০১) দেয়া হয় হোসেনপুর গ্রামের মধ্যবর্তী একটি সড়কের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দাগ (নং-৩০১)-খতিয়ান (ন০১) দেয়া হোসেনপুর গ্রামের মধ্যবর্তী সড়কের প্রবেশমুখেই গেইটটি নির্মিত। আর এটি নিয়েই মূলত দুটি পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। একটি পক্ষের অভিযোগ সরকারী ভূমিতেই এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে গত শনিবার উভয়পরে লোকজন সংঘাতের প্রস্তুতি নেন। খবর পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা পিপিএম ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হয়ে উভয়পরে সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় ওসি উভয়পকে ৫জন করে প্রতিনিধি নিয়ে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়ে আসেন। ওসির কথামতো উভয়পরে লোকজন সোমবার উপস্থিত হন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফাতেমাতুজ জোহরা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা পিপিএমসহ উভয়পরে লোকজন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিন তদন্তে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা।
এ ব্যাপারে গেইট নির্মাণকারী হোসেনপুর বড়বাড়ির ফয়সল মিয়া তালুকদার বলেন, এলাকাবাসীর চলাচলের জন্যে নিজের ভূমি দান করে সড়কটি পাকাকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করায় ইর্ষান্বিত হয়ে গত ৮ আগস্ট গ্রামের আশিকুর রহমান রানা ওরফে কাচা মিয়ার নেতৃত্বে মিথ্যা অভিযোগে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। অথচ সে নিজেই বাড়ির সীমানার ভিতরেই সরকারের প্রায় ৫ ফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এলাকার ৫৭টি পরিবারের মধ্যে ৫৫টি পরিবার যেখানে সড়কটি (হোসেনপুর গ্রামের সড়ক) পাকাকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন ও সড়কের প্রবেশ মুখে থাকা গেইটটি আধুনিকায়ন করার পক্ষে, সেখানে কাচা মিয়াদের মাত্র ২টি পরিবারের সদস্যের তা বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ওই ২টি পরিবারের সাথে হোসেনপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কিছু স্বার্থলোভী মানুষ জোট বেধেঁছেন। জাল স্বাক্ষর দিয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফয়সল বলেন, অভিযোগে বলা হয়েছে রাতের আঁধারে গেইট ও দেয়াল নির্মাণ করা হয়। অথচ, প্রায় ২/৩ মাস পূর্ব থেকেই দিনেদুপুরে সড়কটিতে জনসেবার জন্যেই ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। আর সড়ক পাকাকরণের সাথে সাথে সড়কের প্রবেশমুখে অনেক পূর্বের স্থাপন করা দেয়ালের পাশে থাকা ‘গেইটটি’র সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলে আসছে। যে গেইটটিতে পূর্ব থেকেই ‘হোসেনপুর বড় বাড়ি’ লেখা রয়েছে। এ সবকিছুই মূলত করছি, এলাকার লোকজন চলাচলের জন্যে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় কখনোই কাউকে বাঁধা দেয়া হয়নি। বাঁধা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
আশিকুর রহমান রানা ওরফে কাছা মিয়া বলেন, ফয়সলের বক্তব্য সম্পূর্ন মিথ্যা। সড়কটি সরকারি। যা ১নং খতিয়ানের সাবেক দাগ ৩০১, বর্তমান ৪৪০। ১৯৯৮ সালে আবদুল খালিক গংরা সড়কটি তাদের জায়গা বলে মামলা করে হেরেছেন। যা পরবর্তিতে জেলা প্রশাসকের নামে ১৯ শতক রাস্তা লিপিবদ্ধ। এরপর ২০০৮ সালে আবারও অবৈধ স্থাপনার কাজ শুরু করলে তা সরকারি উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে, সরেজমিন তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, গেইটের দুদিকের পিলার দুটো সরকারী ভূমির উপর নির্মিত নয়। তবে, দুই পিলারের উপরের ছাদটুকু সরকারী গোপাট শ্রেণির ভূমিতে নির্মিত। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ সরেজমিন তদন্ত করেছি। এই তদন্তের প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। আইন অনুযায়ী এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।