মঙ্গলবার ● ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » আমি সারাজীবনে যা করিনি তা এখনও করবো না : ড. কামাল হোসেন
আমি সারাজীবনে যা করিনি তা এখনও করবো না : ড. কামাল হোসেন
ঢাকা প্রতিনিধি :: (২৭ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.১১মি) গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্যে জামায়াত থাকলে আমাদের দল ঐক্য করবে না। অন্য কোনো দল যাবে কিনা আমার জানা নেই। আমি সারাজীবনে যা করিনি তা এখনও করবো না। ওরা (জামায়াত) তো এখন কোন রাজনৈতিক দলও না। তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, এই সরকার ধারাবাহিক না। আগের পাঁচ বছর নির্বাচিত হয়ে এসেছে, পরের পাঁচ বছর একটা অনুষ্ঠান করে চালাচ্ছে। এই সরকারের বিদায় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এটা জনগণ বিচার করবে। তিনি বলেন, সরকারকে সংবিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। সাদা পোশাকে ধরপাকড় হওয়া উচিত না। কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই ধরা যাবে। কিন্তু এই যে গণহারে শত শত লোককে ধরা, এটা উচিত নয়।
গণফোরাম সভাপতি সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সারাদেশে সাদা পোশাকে ধরপাকড় করে এরা কারা? সাদা পোশাকে ধরপাকড়ের ব্যাপারে তদন্তের দরকার আছে। সাদা পোশাকে তো কাউকে ধরার ক্ষমতা আইনে দেয়া নেই। এখানে ঝুঁকি আছে। এখন মানুষ যদি সাদা পোশাকওয়ালাদের ধরে বলে তুমি কে? পোশাক না পরলে মানুষ ধরে নিতে পারে, এরা ছিনতাইকারী। এরা মানুষকে অন্যায়ভাবে কিডন্যাপ করছে। এই কারণেও কিন্তু এই প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আইনে এই বিধান নেই যে সাদা পোশাক পরে কেউ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে হয়- আমরা সাংবিধানিক শাসনের বাইরে চলে যাচ্ছি। হঠাৎ ধরপাকড় আতঙ্ক, পুরনো মামলা সচল, ঘটনা ঘটেনি অথচ মামলা করে রেখেছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তিকে ককটেল ছুঁড়তে দেখেছে পুলিশ! এগুলো পুলিশ সম্পর্কে উদ্বেগের কারণ। সাংবিধানিক শাসন যেখানে থাকে, সেখানে পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটি হলো সাংবিধানিক শাসন। যেখানে স্বৈরতন্ত্র থাকে, সেখানে ইচ্ছামতো লোকজন ধরা যায়, মানুষকে গুম করা যায়। সাংবিধানিক শাসন থাকলে কাউকে ধরলে বলতে হবে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোর্টে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করতে হবে। সরকারকে বলবো- এটা থেকে বিরত থাকুন, অন্যথায় আমরা কোর্টে যাব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, এখানে কোনও দল বা নেতানেত্রীর পক্ষে বলছি না। একটা অসুস্থ মানুষের কথা বলছি। আমি মনে করি আমাদের তো একটা ঐতিহ্য আছে পাকিস্তান আমল থেকেই, যে কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া। অসুস্থ মানুষকে কষ্ট দেয়া মোটেও উচিত না। এটা একটা খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, আজ না হয় এক দল বিরোধী অবস্থানে আছে, কাল তারা নাও থাকতে পারে। সংবিধানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এগুলো থেকে সরকারের বিরত থাকা উচিত। আমরা এটাও শুনছি যে, ওনার স্বাস্থ্যের কারণে বিএনপি চাচ্ছে ওনাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকারের ভুলে যাওয়া উচিত না যে আমরা একটা সভ্য সমাজে বসবাস করি। এদেশে আমরা সবাই সভ্য, আমরা সভ্য রাষ্ট্রকে যেন অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত না করি।
খালেদা জিয়ার বিচারকাজ পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের প্রসঙ্গে প্রবীণ এই আইনজ্ঞ বলেন, এখানে উদাহরণ দেয়া হচ্ছে কর্নেল তাহেরের। এটা ৪১ বছর আগের ঘটনা। এতো বছর আগের একটি উদাহরণ দিয়ে এটা করার কোনও মানে হয় না। যদি অভিযুক্ত হন, বিচার হয় হোক। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করা সংবিধানকে অমান্য করা। সরকার যেটা করছে এটা সরকারের পক্ষে যাচ্ছে না।
এদিকে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে আগামী ২২ সেপ্টেম্বরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল। এক মাস আগে অনুমতি চাওয়া হলেও অনুমতি মেলেনি। ফলে ওইদিন সমাবেশটি হবে গুলিস্থানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে, স্থানটিতে অনুমতিও মিলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক ও শফিক উল্লাহ, নৃপেণ ঘোষ প্রমুখ।