বুধবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি-২৯৯ আসন হাতছাড়া করতে রাজী নয় ক্ষমতাসীন দল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি-২৯৯ আসন হাতছাড়া করতে রাজী নয় ক্ষমতাসীন দল
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২৮ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৫৬মি) আয়তনের দিক থেকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জেলা। এ জেলার আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যার দিক থেকে এই জেলায় বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ৭ লক্ষের অধিক। সমতলের তুলনায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা ৫টি নির্বাচনী এলাকার চেয়েও বড়। কেবলমাত্র জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে এ জেলাকে একটি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ ভোটার তালিকায় ভোটার সংখ্যা ৪লক্ষ ১৭ হাজার ৩৫৯জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ২হাজার ৯৯ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ২৬০জন।
রাঙামাটি-২৯৯ সংসদীয় আসনে গত ৫ জানুয়ারী-২০১৪ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী (পিসিজেএসএস সমর্থিত) ঊষাতন তালুকদারের কাছে হেরে যাওয়ার পর এবার অনেক আগে থেকেই আটঘাট বেধে নেমেছে আওয়ামীলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠন গুলো। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি-২৯৯ আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ঘোষণা না করলেও রাঙামাটি-২৯৯ আসনে আওয়ামীলীগের শরিক দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন। যদি শরিক দলের কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ততোটা সাড়া মিলবেনা। আওয়ামীলীগ থেকে রাঙামাটি-২৯৯ আসনে দীপংকর তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। এবার রাঙামাটি-২৯৯ আসনে আওয়ামীলীগ যেসব উপজেলায় ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে তাদের নেতা কর্মীদের বেশী সক্রিয় রেখেছেন তারমধ্যে রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই. বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা অন্যতম। এই পাঁচ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ৯৫ হাজার ১৭১জন। অপরদিকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কর্স পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বাকী থাকলো নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি উপজেলা। এই পাঁচ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১লক্ষ ২২ হাজার ১৮৮জন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি-২৯৯ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের একমাত্র প্রার্থী রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস সমর্থিত) লক্ষী প্রসাদ চাকমা, গৌতম দেওয়ান ও চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট দীপেন দেওয়ান, রাঙামাটি জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহ আলম ও বিএনপি নেতা কর্ণেল (অবঃ) মনিষ দেওয়ান, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) জাপা কেন্দ্রীয় নেতা আরফান আলী, সাবেক বিআরটিএ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বড়ুয়া, এডভোকেট পারভেজ তালুকদার, বাম গণতান্ত্রিক জোট এর শরিক দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাঙামাটি জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুঁই চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের নেতা এডভোকেট আবছার আলী (স্বতন্ত্র) সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট এর শরিক দল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাঙামাটি জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুঁই চাকমার সমর্থকরা ইতিমধ্যে তাকে রাঙামাটি-২৯৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে দোয়া ও আশির্বাদ চেয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
রাঙামাটি-২৯৯ আসনের এবারের নির্বাচনে হাতছাড়া করতে রাজী নয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। জেলা-উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা মরিয়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা এবার অনেক আগে থেকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা নির্বাচন কমিশন, জেলায় অবস্থিত সকল গোয়েন্দা সংস্থা, জেলার অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে অঘোষিতভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমে পরেছে। রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ ও রাজনৈতিক দল সমূহকে নিয়ে কাজ করে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে ২০৭টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩ থেকে ৫৫টি ভোট কেন্দ্র পিসিজেএসএসকে ছেড়ে দিয়ে বাকী ১৫২ টি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা কর্মীদের সক্রিয় ভুমিকা রাখার নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত হেলিকপ্টারের বাইরে রাঙামাটি-২৯৯ আসনের ভোটের দিন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের দুর্গম এলাকার ভোট কেন্দ্র গুলিতে যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত আরো ৫টি হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি জেলা পরিষদ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও রাঙামাটি পৌরসভাসহ জেলার সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নির্বাচনী বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের শরিক রাজনৈতিক দল ও আজ্ঞাবহ সংগঠন ব্যতিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে সভা সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছেনা রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বর্তমান সময়ে বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর ও জুরাছড়ি উপজেলায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সমূহের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিত্য নৈমত্তিক অপহরণ পাল্টা অপহরণ গুম-হত্যাসহ রাজনৈতিক কারণে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বিলাইছড়ি বাজার বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে রাঙামাটি-২৯৯ আসনে নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিত কতোটা নির্বাচনী অনুকুলে রয়েছে তা বিজ্ঞমহলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ।
গত ৬ সেপ্টেম্বর-২০১৮ তারিখ জেলার দশ উপজেলায় ২টি পৌরসভা ৫০টি ইউনিয়ন ২০৭টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ৮৪১টি অস্থায়ী ৫২ টি সহ মোট ৮৯৩টি ভোট কক্ষ (বুথ) চুড়ান্ত করেছে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কমিশন।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ১৪০টি। পুরুষ ভোটার ৩৫ হাজার ১৮৮ ও মহিলা ভোটার ৩১ হাজার ৬৬৫ মোট ৬৬ হাজার ৮৫৩জন। লংগদু উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২২ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ১১০টি। পুরুষ ভোটার ২৭ হাজার ১৭১ ও মহিলা ভোটার ২৪ হাজার ৯৮০ মোট ভোটার ৫২ হাজার ১৫১জন।
নানিয়ারচর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৬৮টি। পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৯৮৯ ও মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৮৪৬ মোট ভোটার ৩২ হাজার ৮৩৫জন।
বরকল উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ভুষণছড়া ও সুভলং নতুন দুইটি ভোট কেন্দ্রসহ ১৯ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৬৪টি অস্থায়ী ৬টিসহ ৭০টি। পুরুষ ভোটার ১৮ হাজার ২১ ও মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৬৪৪ মোট ভোটার ৩৩ হাজার ৬৬৫জন।
জুরাছড়ি উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৩৬টি ও অস্থায়ী ৩টি সহ ৩৯টি। পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭১ ও মহিলা ভোটার ৮হাজার ৪৩০ মোট ভোটার ১৭ হাজার ৫০১জন।
রাঙামাটি সদর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বালুখালী নতুন একটি ভোটকেন্দ্রসহ ৩৭ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ১৯২টি। পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৯৭৩ ও মহিলা ভোটার ৪১ হাজার ৮৯৮ মোট ৯০ হাজার ৮৭১জন।
কাউখালী উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২০ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৮০টি ও অস্থায়ী ১৫টি সহ ৯৫টি। পুরুষ ভোটার ২১ হাজার ৯৯৯ ও মহিলা ভোটার ২০হাজার ৮৮১ মোট ভোটার ৪২হাজার ৮৮০জন।
কাপ্তাই উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৬৫টি ও অস্থায়ী ২৫টি সহ ৯০টি। পুরুষ ভোটার ২২ হাজার ৮৬৭ ও মহিলা ভোটার ১৯হাজার ৫৪৯ মোট ভোটার ৪২হাজার ৪১৬জন।
রাজস্থলী উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৪০টি ও অস্থায়ী ৩টি সহ ৪৩টি। পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৪৬৯ ও মহিলা ভোটার ৯হাজার ২৭ মোট ভোটার ১৮হাজার ৪৯৬জন।
ও বিলাইছড়ি উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪ টি। ভোট কক্ষের (বুথ) সংখ্যা ৪৬টি। পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩৫১ ও মহিলা ভোটার ৯হাজার ৩৪০ মোট ভোটার ১৯হাজার ৬৯১জন।