বৃহস্পতিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » নওগাঁ » আবারোও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আ’লীগ : আসন ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় বিএনপি
আবারোও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আ’লীগ : আসন ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় বিএনপি
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: (২৯ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.২৩মি) এক সময়ের আলোচিত বাংলা ভাইয়ের দুর্গ বলে পরিচিত আত্রাই ও রানীনগর দুটি উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ ও জাতীয় সংসদের ৫১ নম্বর আসনটি গঠিত। আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারনায় মুখরিত এই নির্বাচনী এলাকা। ভোটের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি এবং বাংলা ভাই ইস্যু এখানকার প্রধান আলোচ্য বিষয়। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালে ভোট যুদ্ধে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। জেএমবি’র অপতৎপরতা দমনের পাশাপাশি ব্যাপক উন্নয়নের দাবি করে জয়ের ব্যাপারে এবারও আশাবাদী আওয়ামী লীগ। আর আসনটি ফিরে পেতে নতুন আমেজে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে বিএনপি। এই আসনে মুলত ভোটের লড়াই হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যেই। প্রার্থী বাছাইয়ের দিক দিয়ে বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও আওয়ামীলীগে রয়েছে একাধিক প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদিকে আসনটি আওয়ামীলীগের ধরে রাখা আর বিএনপি’র পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে প্রার্থী নির্বাচনের উপর। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কথা তেমন একটা শোনা না গেলেও এলডিপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আলমগীর কবিরের কথা শোনা যাচ্ছে।
নওগাঁ -৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯ হাজার ৩৯৭ জন। গত ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি দলীয় প্রার্থী আলমগীর কবির। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আলমগীর কবির গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে আলমগীর কবির বিএনপি দল ত্যাগ করে এলডিপি দলে যোগ দেন। আলমগীর কবির বিএনপি দল ত্যাগ করার ফলে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা এক সংকটময় সময় অতিবাহিত করে। বিএনপির সেই দুঃসময়ে দলের হাল ধরেন আলমগীর কবিরের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আনোয়ার হোসেন বুলু। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসন ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দখলে আসে। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মো: আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: ইসরাফিল আলম। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারও নির্বাচিত হন।
আওয়ামীলীগ ঃ নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ছাড়াও দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরো রয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ মো: রফিকুল ইসলাম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক, রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল।
মিডিয়ায় খুব পরিচিত নওগাঁ-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের দলীয় অবস্থান বেশ ভাল। তিনি ২০০৮ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে প্রথম বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন ইসরাফিল আলম। তিনি গত ৯ বছরে এলাকার যোগযোগের ক্ষেত্রে বেশ ভাল অবদান রেখেছেন। নাগর নদীর উপর দুটি ব্রীজ, আত্রাই নদীর উপর একটি ব্রীজ, ছোট যমুনা নদীর উপর দুটি ব্রীজ অত্র এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। এ ছাড়া নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় পতিসরে অবস্থিত রবীন্দ্র কঠির বাড়ি। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে পতিসরকে জাতীয় ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। রাণীনগর-আত্রাইবাসীর প্রানের দাবি ছিল পতিসরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। কিন্তু কোন ভাবেই সেই দাবি পুরুন হয়নি। তবে পতিসরে একটি কৃষি ইনষ্টিটিউট স্থাপিত হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী ২০০১ সাল থেকে নওগাঁ-৬ আসনের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন দলীয় কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তবে তিনি বাস করেন রাজশাহীতে।
নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি সাবেক সংসদ ওহিদুর রহমানের ছেলে। পেশায় একজন আইনজীবি। এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তিনি অতপ্রত ভাবে জড়িত।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ মো: রফিকুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি গণসংযোগ, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন এবং তার নাম শোনা যাচ্ছে তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন মনোয়ারা হক ও রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল নওগাঁ -৬ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।
বিএনপি: দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চান নওগাঁ জেলা তাঁতী দলের সভাপতি এছাহক আলী ও শুভেচ্ছা পোষ্টার আর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ জানান দিচ্ছে নওগাঁ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর হতেই নওগাঁ-৬ আসন তথা রাণীনগর আত্রাই উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে দুঃসময়ে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন আনোয়ার হোসেন বুলু। কঠোর পরিশ্রম ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে এলাকার নেতাকর্মীদের মাঝে দলের এবং নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন। ২০০৮ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো: ইসরাফিল আলমের কাছে পরাজিত হন। এরপরও তিনি আত্রাই-রাণীনগর এলাকায় নেতাকর্মীদের সাথে নিরলস ভাবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন।
রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় কোন গ্রুপিং না থাকায় দলীয় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন বুলু। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডে আনোয়ার হোসেন বুলুর সরব উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের অনেকটাই চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যায়। এই অবস্থা ধরে রাখতে পারলে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভাল ফলাফল পেতে পারেন এমনটাই নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
অপরদিকে নওগাঁ জেলা তাঁতী দলের সভাপতি এছাহক আলী বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাহক আলী ২০০৮ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচন থেকেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যে নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতি সংগঠনের সাথে জাড়িয়ে রেখেছেন। তিনি থাকেন ঢাকায়। মাঝে মধ্যে এলাকায় দেখা গেলেও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তেমন সরব নয়।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ মনোনয়ন প্রত্যাশী। সামনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন দলীয় কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তবে তিনি বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন মালোশিয়া।
আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন সব সময় বড় সমস্যায় থাকেন। এক সময় এই এলাকায় ছিল সর্বহারার অবাধ বিচরন। সর্বহারাদের হত্যা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজীর কথা মানুষ এখনো ভুলতে পারিনি। সেই সাথে ছিল বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবির তান্ডব। পাশাপাশি যোগাযোগ সমস্যা, বিদ্যুত সমস্যা ও শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা এলাকা। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই ইস্যুগুলোর ভিত্তিতেই ফলাফল নির্ধারিত হবে বলে মনেকরছেন দুই উপজেলার অভিজ্ঞ মহল।