শুক্রবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নেই আশ্রয় কেন্দ্র
চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নেই আশ্রয় কেন্দ্র
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: (৩০ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০৯মি) পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বসবাস করছে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে । কিন্তু দুর্যোগকালীন ওইসব চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র (সাইক্লোন সেল্টার) নেই।মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। কোথাও নদী, আবার কোথাও সাগর পরিবেষ্টিত। সেখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নেই। ফলে দুর্যোগ মৌসুমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় চরাঞ্চলের মানুষের।
তেমনি একটি চরের নাম ‘চরকাশেম’। সেখানে শতশত মানুষের বসবাস। যার পূর্ব-পশ্চিম আর উত্তর কোনে বুড়াগৌড়াঙ্গ নদী ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর । সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্বকোনে অবস্থিত ।
চরকাশেমের বাসিন্দা হামিদা বেগম বলেন, অবদা (বেড়িবাঁধ) না থাহায় চরে জোয়ার-বন্যার বেশি পানি উডলে (উঠলে) পোলা-মাইয়া (ছেলে-মেয়ে) লইয়া কান্নাকাটি করা ছাড়া কিছু করার নাই। আমাগো চরে সেন্টার (আশ্রয় কেন্দ্র) নাই। হেইয়ার লাইগ্যা কেউ গাছে ওডে। কেউ আল্লাহর উপরে ভরসা কইরা পোলা-মাইয়া লইয়া ঘরের মধ্যেই থাহে।
এ অবস্থা শুধু চরকাশেমেই নয়, উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের কলাগাছিয়া চর, চরকানকুনি, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন, চরনজির, চরতোজাম্মেল, কাউখালী চর ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতায়ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। তাই দুর্যোগকালীন এই আটটি চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করছে।
জানা গেছে, বিচ্ছিন্ন ওই চরের মধ্যে কোথাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধও নেই। আবার কোথাও নদী ঘেঁষা রয়েছে। সামন্য জোয়ারেই চরে পানি উঠে যায়। কিন্তু দুর্যোগকালীন ঝড়-বন্যায় নিরাপদে থাকার জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। তাই জীবন থাকে মহা ঝুঁকিপূর্ণে। একারণে দুর্যোগ মোকাবেলায় এখানকার মানুষ অপ্রস্তুত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের পাঁচ-ছয় মাস প্রকৃতরি বিরূপ আচরণরে সঙ্গে একরকম যুদ্ধ করে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, আমবস্যা-পূর্ণিমার সময়ে নদী-সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেলেই চরের বেশিরভাগ চর প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় কারও সহায় সম্বল। দুর্যোগ মৌসুমে আকাশের কালো মেঘের গর্জন শুনলেই চরের বাসিন্দাদের মনের মধ্যে বয়ে যায় আতঙ্ক। আর ঝড়-বন্যা হলে নিয়তি নির্ভর ছাড়া তারা কোন উপায় খুঁজে পায় না।
কাউখালী চরের বাসিন্দা রশিদ মিয়া বলেন, ‘তিন দিকে নদী, একদিকে খাল। মাঝখানে আমারা বাস করি। পানি বড়লে নিরাপদে যাওয়ার কোন উপায় নাই। আশ্রয় কেন্দ্রও নাই। তখন উঁচু জায়গায় গিয়া ছেলে সন্তান নিয়া থাকি। কিন্তু বড় ধরণের ঝড়-বন্যা হলে বাঁচার আর সম্ভাবনা নাই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘ওইসব চরে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র দিতে পারছি না। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়, তবে আমরা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য দ্রুত প্রস্তাব পাঠাব।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, ‘যেসব চরে স্কুল নেই, সেগুলোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তখন প্রজেক্ট (প্রকল্প) ছিল না। এখন এক হাজার স্কুলের প্রজেক্ট ছাড়ছে। ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে এসব চরের স্কুল হবে বলে আশা করি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘ঝড়-বন্যায় চরের মানুষের জীবন ঝুঁকিতে থাকে। অনেক জায়গায় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। আবার কোথাও বেড়িবাঁধ নেই। এ বিষয়গুলো আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’