শনিবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » ঢাকা » অবশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা করেছে যুক্তফ্রন্ত ও গণফোরাম
অবশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা করেছে যুক্তফ্রন্ত ও গণফোরাম
অনলাইন ডেস্ক :: (৩১ ভাদ্র ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৭মি) পাঁচটি দাবি ও নয়টি লক্ষ্য নিয়ে অবশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘোষণা করেছে যুক্তফ্রন্ত ও গণফোরাম।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের নেতারা এ ঘোষণা দেন। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় ঐক্য ঘোষণার জন্য সমাবেশ করার কথা ছিল। তবে অনুমতি না পেয়ে জাতীয় ঐক্যের নেতারা আজ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। দেশে কোনো অরাজকতা হলে তারা তা রুখে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা ও নয় দফা লক্ষ্য তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
জাতীয় ঐক্যের পাঁটি দাবি
১. আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
২. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক মাধ্যম ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
৩. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আনীত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
৪. নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বন্ধ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমুখী এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যের নয়টি উদ্দেশ্য
১. প্রশাসন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণসহ প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কাঠামোর অবসান করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ ও সৎ-যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।
২. দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোরহস্তে দমন এবং এর আগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।
৩. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা বিকাশসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।
৪. কৃষক, শ্রমিক ও হতদরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।
৫. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।
৬. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
৭. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করা।
৮. সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতে নয় এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্কে গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৯. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণসমর্থন; মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা। সূত্র : আমাদের সময়