বুধবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সমঝোতা স্মারক সই
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙামাটি জেলা পরিষদের সমঝোতা স্মারক সই
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (৪ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.১৬মি.) পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আজ বুধবার ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কাযালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এ সমঝোতা স্মারক মূলে প্রকল্পের বিষয়াদী এপ্রিল, ২০১৮ থেকে জুন,২০২১ সাল মেয়াদী এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০০০ টি পাড়াকেন্দ্রে প্রায় ১,২০,০০০ শিশুকে নিজস্ব ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হবে এবং তাদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপযোগী করে তোলা হবে।
এছাড়াও ৪টি আবাসিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিভূক্ত ১২০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিনা মূল্যে খাদ্য, শিক্ষা উপকরণ, পোষাক পরিচ্ছদ ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় অর্ন্তভূক্ত করা হবে।
অন্যদিকে ৫০০০ পাড়াকেন্দ্রে বয়ষ্ক শিক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার মানুষের শিক্ষা হার বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আবাসিক বিদ্যালয় সমূহে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা কোর্স চালু করা হবে।
প্রকল্পভূক্ত প্রায় ২,০৬,০০০ পরিবারের শিশুদের টিকা গ্রহণ, কিশোরী ও মহিলাদের টিকা গ্রহণ, গর্ভকালীন পরিচর্যা, গর্ভবতী ও কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ এবং প্রকল্প এলাকায় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও প্রকল্প এলাকায় পুষ্টি মান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শাক-সব্জীর বাগান গড়া এবং শিশুদের জন্য উচ্চ ক্যালরীযুক্ত বিষ্কুট খাওয়ানো।
প্রকল্পের মাধ্যমে জনবসতি, পাড়াকেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিন স্থাপন ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, আয়োডিনযুক্ত লবন ব্যবহার এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করা হবে।
শিশু সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় প্রকল্প এলাকার ১৮ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্ম নিবন্ধন, কিশোর কিশোরী ক্লাব গঠন, কিশোর কিশোরীদের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও জীবন ব্যাপী শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হবে।
দারিদ্র বিমোচন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ৫০০০ যুবাকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন প্রদান ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
এ সময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, বোর্ডের সদস্য পরিকল্পনা ও প্রকল্প পরিচালক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমেদ, এসএসএসসিএইচটি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো: জান-ই-আলম, ইউনিসেফ এর প্রোগ্রাম অফিসার মং ঞাই উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় “পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প” অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৭.০০ কোটি টাকা। এ জন্য দাতা সংস্থা ইউনিসেফ ১২৩.৬৩ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ২৯৩.৩৭ কোটি টাকা এ খাতে যোগান দেবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এছাড়াও যৌথভাবে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারী বিভাগ সমূহ প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল ধরণের সহায়তা প্রদান করবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ১২১টি ইউনিয়েনে ৫০০০ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে শিশু শিক্ষা, শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্য, পানি ও পয়:ব্যবস্থা, পুষ্টি ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ক মৌলিক সেবা প্রবাহের আওতায় আনা হবে।
প্রকল্পটি নতুন হলেও প্রকৃত পক্ষে এটি সদ্য সমাপ্ত “পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প” (আইসিডিপি) এর সম্প্রসারিত রূপ। ঐ প্রকল্পের পাড়াকেন্দ্র ও অন্যান্য অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত জনবল এবং অধিকাংশ কার্যক্রম নতুন প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে।
এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে দূর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় স্থাপিত ৫০০০ পাড়াকেন্দ্র বিভিন্ন সরকারী বিভাগের সেবাদান কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও এসব কেন্দ্র স্থানীয় পর্যায়ে কম্যুনিটি সেন্টার হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে পাড়াকেন্দ্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজন, তথ্য সংরক্ষন এমনকি ডিজিটাল সেবা প্রাপ্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্যাপনের মাধ্যমে শান্তি ওসম্প্রীতি উন্নয়নে পাড়াকেন্দ্র সমূহ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের আওতায় ৫৫০০ জন পাড়াকর্মীকে শিশু শিক্ষা, প্রাক-শৈশব যতœ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পুষ্টি উন্নয়ন, পানি ও পয়:ব্যবস্থা উন্নয়ন, শিশু সুরক্ষা এবং দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়াও পাড়াকর্মীদের সহায়তার জন্য ৩৫০০০ কম্যুনিটি সদস্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রদান করা হবে।
এ প্রকল্পের ৫৫০০ জন যুবার খন্ডকালীন এবং ২৩৯ জনের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে দূর্গম পার্বত্য এলাকার সেবা বঞ্চিত জনগোষ্ঠি সকল ধরনের মৌলিক সেবার আওতাভূক্ত হবে।
এছাড়াও শিক্ষা হার বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকি হ্রাস এবং সর্বোপরি জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্পটি ইতিবাচক প্রভাব রাখবে জলে আশা করা হচ্ছে।