বুধবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » বিদ্যুৎ -জ্বালানি » বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রি-পেইড কার্ডের ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে অচিরেই
বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রি-পেইড কার্ডের ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে অচিরেই
সিলেট প্রতিনিধি :: (৪ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৪০মি.) সিলেট নগরীতে বিদ্যুতের প্রি-পেইড গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। বিদ্যুতের কার্ড ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্পের অভাব, কার্ড কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, চার্জ কর্তন নিয়ে বিভ্রান্তিসহ নানা কারণে দূর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে প্রি-পেইড গ্রাহকদের।
সিলেটের গ্রাহকদের এই দুর্ভোগ অচিরেই অবসান হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগামী অক্টোবর থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সুবিধা চালু হলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই নিজের বাসা-বাড়ি বা দোকানের বিদ্যুতের কার্ড প্রয়োজনমতো যখন খুশি রিচার্জ করে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ বলেন, ‘গ্রাহকদের সুবিধার্থে আগামী অক্টোবর থেকে সিলেট নগরীতে প্রি-পেইড মিটারের কার্ড মোবাইলের মাধ্যমেও বিক্রয় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট নগরীতে বর্তমানে প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক ৬০ হাজার। এ সকল গ্রাহকদের কথায় মাথায় রেখে উপশহরস্থ বিদ্যুতের কার্ড বিক্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি নগরজুড়ে ৮টি ব্যাংকেও প্রি-পেইড মিটারের কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া আরও একটি ব্যাংক থেকে অচিরেই এই বিদ্যুতের কার্ড কেনা যাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুতের অপচয় রোধে ২০০৫ সালে সিলেটে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার সিস্টেম চালু হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর আওতাধিন গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সিলেটে প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বিউবোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ থেকে জানা যায়, এই বিতরণ অঞ্চলের আওতায় সিলেট নগরীতে ৭৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। অক্টোবর মাসের মধ্যে এই অঞ্চলের শতভাগ গ্রাহককেই প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে প্রি পেইড মিটারের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ালেও সিলেটে এসব মিটার রিচার্জের কার্ড বিক্রি হয় মাত্র কয়েকটি স্থানে। নগরীর ৯টি ব্যাংকের শাখা আর উপশহরের একটি ভেন্ডিং স্টেশনেই বিক্রি হয় রিচার্জ কার্ড। ফলে এসব স্থানে প্রতিদিন লেগে থাকে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন।
এই দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে সম্প্রতি উপশহরের ভেন্ডিং স্টেশনের সামনে বিক্ষোভও করেন প্রি-পেইড গ্রাহকরা।
৯ সেপ্টেম্বরের সেই বিক্ষোভের পর কেবল ১৪ সেপ্টেম্বর ছাড়া গত ১০ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সরেজমিনে উপশহরস্থ বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার কার্ড বিক্রয় কেন্দ্রে (ভেন্ডিং স্টেশন) গিয়ে দেখা যায়, কার্ড বিতরণের কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা। আগে যে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা তা আর নেই।
রোববার ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যে চারটি কাউন্টারের সামনে আগে দীর্ঘ লাইন লেগে থাকতো, রোববার তার দুটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন গ্রাহক। আর আর দুটি ফাঁকা। একটি কাউন্টারের লাইনে ৭ জন আর আরেক কাউন্টারের লাইনে ৯ জন দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ভেন্ডিং স্টেশনে কার্ড বিক্রয়ে নিয়োজিত বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মী বলেন, গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জুন মাস থেকে নগরীর ৪টি ব্যাংকে এবং আগস্ট মাস থেকে আরও ৪টি ব্যাংক, সর্বমোট ৮টি ব্যাংকে প্রি-পেইড মিটারের কার্ড বিক্রয় শুরু হয়। এতে করে জনদুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমেছে।
কামাল উদ্দীন নামের এক ট্রাভেল ব্যবসায়ী জানান, ‘আমি আমার বাসা ও দোকানের জন্য কার্ড নিতে আসলাম। মনে করেছিলাম অন্যান্য মাসের মতো ভিড় হবে। কিন্তু এসে দেখি কোন ভিড় নেই। অনেক সহজেই কার্ড কিনলাম। আগস্ট মাস পর্যন্ত এই কার্ড ক্রয়ে আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে এই অবস্থার কিছুটা নিরসন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যেহেতু সবাইকে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তাই কার্ডবিক্রয় কেন্দ্রও বাড়াতে হবে। শুনেছি ৮টি ব্যাংকে না কি এখন কার্ড দেয়া হয়। এই ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাবিল আহমদ বলেন, ‘আগে বিদ্যুতের কার্ড নিতে আসলে ৩-৪ ঘণ্টাও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। অনেক জরুরী কাজ ফেলেও গরমে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এখন আর তেমন সমস্যা নেই।’
মোবাইলে কার্ড রিচার্জের তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ আরও বলেন, এ ব্যাপারে মোবাইল অপারেটর গ্রামীনফোন ও রবির সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এই দুই অপারেটরের গ্রাহকরা অক্টোবর মাস থেকে ঘরে বসেই বিদ্যুতের প্রি-পেইড কার্ড কিনতে পারবেন। এটি বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকদের আর বিতরণ কেন্দ্রে এসে বা ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকদের মনে এতোদিন একটা ভুল ধারণা ছিল যে মাসের প্রথম দিকে কার্ড কিনলে কম টাকায় বেশি ইউনিট পাওয়া যাবে। এই ধারণা আসলে ভুল। এখন এটা লোকজন বুঝতে পেরেছে। মাসের যেকোন দিনই প্রথমবার যদি কেউ কার্ড কিনতে যান তাহলে তিনি একই সুবিধা পান।’
পারভেজ আহমদ বলেন, এখন মাসের প্রথম দিকে বা ৩-৪ দিন সরকারি ছুটির পর কিছুটা চাপ থাকলেও অক্টোবর মাসে মোবাইলের মাধ্যমে কার্ড বিক্রি শুরু হলে তাও থাকবে না। ইতিমধ্যে এই দুর্ভোগ অনেকখানি লাঘব হয়েছে।