বুধবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে স্ত্রী ও ছাত্রকে খুনের অভিযোগে মাদরাসার শিক্ষক আটক
গাজীপুরে স্ত্রী ও ছাত্রকে খুনের অভিযোগে মাদরাসার শিক্ষক আটক
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (৪ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০০মি.) গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার চান্দনা পূর্বপাড়া এলাকার একটি মাদরাসায় এক শিশুশিক্ষার্থী ও মাদরাসার শিক্ষকের স্ত্রী খুন হয়েছে। পুলিশ ঘটনার ব্যাপারে নিহত মাহমুদা আক্তারের স্বামী মাদরাসার শিক্ষক (পরিচালক) মাওলানা মোঃ ইব্রাহিম খলিল তালুকদার (৩৫) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
১৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
নিহতরা হলেন হুফফাজুল কোরআন মাদরাসার পরিচালকের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার স্মৃতি (২৫) ও মাদরাসার নুরানি বিভাগের ছাত্র মোঃ মামুন (৮)। এ ঘটনায় নিহত মাহমুদার শিশু সন্তান আবু হুরায়রা (৩) আহত হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই বছর আগে মাদরাসাটি ওই এলাকায় স্থাপিত হয়। এর পরিচালক মাওলানা ইব্রাহিম খলিল নিজেই এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২৫) এবং দু’ শিশু সন্তান আবু হুজাইফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) নিয়ে মাদরাসার ভেতরে একটি কক্ষে স্বপরিবারে বসবাস করেন। মাদরাসাটিতে ৩৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ইব্রাহিম খলিল নিজেও ওই শিক্ষার্থীদের কোরআন শরিফ শিক্ষা দিতেন।
মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা ঘুম থেকে ওঠে পড়াশোনা করে। ফজরের আজান দিলে শিক্ষার্থীরা সবাই পার্শ্ববর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করতে যায়। সবার শেষে মাদরাসার পরিচালক ইব্রাহিম খলিল মাদরাসার বাইরে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে মসজিদে নামাজে যান।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাদরাসার পরিচালকের ছোট ছেলে হুরাইয়াবা (৩) মাদরাসা থেকে বের হয়ে রক্তমাখা শরীর নিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। পরে পথচারীরা শিশুটিকে রক্তাক্ত দেখে এগিয়ে যান।
এ সময় শিশুটি তাদের জানায়, তার মাকে এবং মামুনকে মেরে ফেলেছে। তারা মাদরাসার ভেতরে গিয়ে গলাকাটা করা দুটি রক্তাক্ত লাশ দেখে চিৎকার করতে থাকলে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং নামাজ শেষে মসজিদ থেকে পরিচালক ও শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে।
খবর পেয়ে বাসন থানার পুলিশ, র্যাব, গাজীপুরের সিআইডি, পিবিআই, গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে ঘটনার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ এবং তদন্তকাজ শুরু করেন।
নিহত মাহমুদা আক্তারের বাবা হানিফ গাজী জানান, তার বাড়ি চাঁদপুর সদরের খলিশাডুলি গ্রামে। তার দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে মাহমুদা সবার বড়। তিনি ২০১২ সালে গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন। সে সময় তার ছেলে ইব্রাহিম শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের কাছে লেখাপড়া করত। সে পরিচয়ের সূত্র ধরে মেয়ে মাহমুদা আক্তারের সঙ্গে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে হুজায়ফা (৫) ও হুরায়রা (৩) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইব্রাহিম খলিলের (৩৫) বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার বাঁশজানা মালতি গ্রামে। তার বাবার নাম রবিউল আলম তালুকদার। ইব্রাহিম খলিল এর আগে একটি বিয়ে করেছিল বলে গত ৬-৭ মাস আগে তারা জানতে পেরেছে।
নিহত মামুনের বাবা শাহিদ জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায়। তিনি ওই এলাকায় একটি গরুর খামারে চাকরি করেন। তার ছেলে মামুন গত এক বছর ধরে ওই মাদরাসায় লেখাপড়া করছে। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাদরাসা থেকে ফোন পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গাজীপুরে ছুটে আসেন। এসে ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।
ইব্রাহিম জানান, মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রী মাহমুদা এবং তার দুই সন্তান হুযায়ফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) বসতঘরে রেখে তিনি পাশের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য বের হয়ে যান। নামাজ শেষে ঘরে ফিরে বিছানার ওপর স্ত্রী মাহমুদা এবং দরজার কাছে মামুনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ বিষয়ে তিনি আর কিছুই জানেন না।
মাদরাসার ছাত্র সাব্বিরের বরাত দিয়ে বাসন থানার এসআই আল আমিন জানান, সোমবার রাতে হুজুরকে (ইব্রাহিমকে) উদ্ধার হওয়া দা ধার দিতে দেখেছে। আর মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজে যাওয়ার আগে সাব্বিরকে দিয়ে নিহত মামুনকে মাদরাসার অন্য কক্ষ থেকে হুজুরের কক্ষে ডেকে পাঠায়।
এ ব্যাপারে বাসন থানার ওসি মুক্তার হোসেন জানান, নিহত মাহমুদার গলায়, গালে ও কানে এবং মামুনের ঘাড়ে মাথায় ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তিনি জানান, মাদরাসার ভেতর থেকে রক্তমাখা একটি দা, ধার দেয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ইব্রাহীম খলিলকে থানায় আনা হয়েছে।
এদিকে জোড়া খুনের খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, সিআইডির ক্রাইম সিন, পিআইবি ও র্যাব সদস্যরা এসেছেন। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। আমি আশা করি খুব দ্রুত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে। কিছু সম্ভাবনা আমরা দেখতে পেয়েছি। ওই সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই তদন্তকাজ করা হচ্ছে।