বৃহস্পতিবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাঙ্গুনিয়া থানায় এক মাসে ১৮ চুরি : পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
রাঙ্গুনিয়া থানায় এক মাসে ১৮ চুরি : পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মাইকেল দাশ,রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :: (৫ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৫মি.) রাঙ্গুনিয়া থানার আশে পাশে চুরির ঘটনা বাড়ছে। গত এক মাসে সৈয়দবাড়ি এলাকায় ১৮ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো ঘরে চুরি হচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ও মুঠোফোন। তবে এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা নিকটস্থ থানায় গেলে কোনো সুরাহা পাচ্ছেনা, চুরির ঘটনায় সাধারন ডায়রি কিংবা অভিযোগ দিতে গেলে থানায় গ্রহন করেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। চোরের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে রাতে পাহারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলাকার কয়েকজন তরুন।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে সৈয়দবাড়ি এলাকার প্রবাসী মো. মহসিনের বাড়িতে জানালার গ্রিল ভেঙ্গে চোর ঢুকে একটি দামী মুঠোফোন ও ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. মহসিন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, এই পর্যন্ত আমার ঘরে ৫ বার চুরি হয়েছে। অভিযোগ করে কি হবে , অযথা হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করিনি।
১৫ সেপ্টেম্বর রাতে দুলাল চক্রবর্তীর দালানের ভাড়াটিয়া সুমন নাথের বাড়ি থেকে মোবাইল সেট চুরি এবং ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে মো. হাবিবুল্লাহ’র বাড়ি থেকে একটি দামী মুঠোফোন চুরি হয়ে যায়।
হাবীবুল্লাহ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “ জুমার নামাজের সময় পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় চোর বাড়িতে সবার অগোচরে মুঠোফোনটি নিয়ে যায়। ”
১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আজিজুল হক ও মো. বাবুদের বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন চুরি হয়।
১০ সেপ্টেম্বর রাতে বড়ুয়া পাড়ার মিশু বড়ুয়ার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় পানির মোটর ও গ্যাস সিলিন্ডার।
৬ সেপ্টেম্বর রাতে রুবেল সিকদারের বাড়িতে চোর কৌশলে ঢুকে দামী মুঠোফোন ও ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যায়। পরে তিনি থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা মুঠোফোনের বিষয়টি অভিযোগ হারানো ডায়রি করতে পরামর্শ দেন। পরে তিনি ডায়রি না করে চলে আসেন।
২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আবু সায়েমের বাড়িতে চোর ঢুকে তার বড় ভাইয়ের কক্ষ থেকে বড় ব্যাগে রাখা ব্যবসার ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যান। পরে তার ভাই ও তিনি থানায় গেলে সাধারন ডায়রি করতে পুলিশ নিরুৎসাহিত করেছেন বলে জানান।
৩০ আগস্ট রহিম হোসেনের বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন ও ৪ টি কবুতর চুরি হয়ে যায়।
২৮ আগস্ট রাতে মো. ফরিদের বাড়ি থেকে পানির মোটর চুরি হয়।
২৭ আগস্ট রাতে সৈয়দবাড়ি ধর্ম প্রবর্তন বিহার থেকে পানির মোটর চুরি হয় । বিহারের অধ্যক্ষ করুনা শ্রী ভিক্ষু বলেন, রাতে বিহারের ফটক বন্ধ থাকলেও কৌশলে বিহারে ঢুকে পানির মোটরটি নিয়ে যায়।
২৬ আগস্ট রাতে রুবায়েত লিটনের বাড়ি থেকে মুঠোফোন ও দামি জিনিসপত্র চুরি হয়।
২৫ আগস্ট রাতে বড়ুয়া পাড়া দিলীপ বড়ুয়ার বাড়ি থেকে ঘরের দামি জিনিসপত্র ও দুটি মুঠোফোন চুরি হয়।
২৪ আগস্ট রাতে ইলিয়াছ চৌধুরীর বাড়ি থেকে একটি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল চুরি হয়ে যায়।
২৩ আগস্ট দুপুরে থানার পাশে দিদার পোল্টি ফিড নামে মো. শাহাদাতের দোকানের গ্রীল ফাঁক করে ঢুকে দুটি মুঠোফোন ও ৪৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
২২ আগস্ট রাতে মাওলানা রহমতুল হকের বাড়ি থেকে নগদ ৩১ হাজার টাকা . ৪ টি মুঠোফোন নিয়ে যায়। একই রাতে থানার সামনে মো. আকবরের দোকানের বেড়া কেটে চোর ঢুকে নগদ ৫ হাজার টাকা, দামি সিগারেটসহ প্রায় ৭ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
২১ আগষ্ট রাতে গৌরাঙ্গ বিজয় চৌধুরীর বাড়িতে চুরির ঘটনায় নগদ টাকা ও দুটি মুঠোফোন চুরি হয়।
সৈয়দবাড়ি এলাকার যুবক মো. দিপু সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চিন্তা করি মোবাইল মানিব্যাগ কোথায় রাখব। এভাবে আর কতদিন চলবে।”
এলাকার তরুন শিক্ষক আবু সায়েম শামু সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “ প্রতিরাতে এলাকায় কোনো না কোনো বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছে। থানার পাশে যদি চুরি হয় তাহলে অন্য জায়গায় কি হবে। চুরির পেছনে মাদকসেবীরা জড়িত। মাদক সেবন যারা করে তারাই মূলত চুরি করে। গত দুই বছরে এলাকায় ৭৬ টি চুরির ঘটনা ঘটে। এলাকায় ঘুরে আমি তালিকা তৈরি করেছি। চোরের অত্যাচার থেকে বাঁচতে চুরি ঠেকাতে আমরা পালা করে রাতে পাহারার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাদক ও চুরি ঠেকাতে গ্রামে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।”
যুবক ইকরাম হোসাইন সোহেল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “ ঘরে চোর ঢুকার ভয়ে রাতে বিছানার কাছে লোহার রড রেখে ঘুমাই। এভাবে আর কতদিন স্থায়ী প্রতিরোধ প্রয়োজন। ”
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভুইঞা সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, “ চুরির বিষয়ে অভিযোগ না নেওয়ার বিষয় সঠিক নয়। চুরি ঠেকাতে পুলিশ সজাগ রয়েছে। থানায় যেকোনো সমস্যা নিয়ে কেউ আসলে কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই গ্রহন করে ব্যবস্থা নেব।