শুক্রবার ● ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে হাওর জলাশয়ে ফুটছে না শাপলা ফুল
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে হাওর জলাশয়ে ফুটছে না শাপলা ফুল
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: (৬ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৪৫মি.) রাউজানে এক সময় হাওর জলাশয়, বিল ঝিল খাল পুকুর নিচু জমিতে বর্ষাকালে ফুটতো জাতীয় ফুল শাপলা। ফুলে ফুলে হাওর জলাশয় যেন এক প্রকৃতির অপার সুন্দরতা মহিমা দেখাযাইতো এ উপজেলায়।
রাউজান উপজেলার লস্কর উজির দিঘী, রায়মুকুট দীঘি,
ঈসা খাঁ দীঘি, চুয়েটে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুকুর, রাজার দিঘীসহ অারো বড় বড় বেশ কিছু দিঘী ছিল শাপলা বনের বিশাল প্লাবন ভূমি। পুকুর থেকে শুরু করে স্থানীয় ছোট বড় খাল-বিলে সবখানেই ছিল শাপলার সমারোহ।
এক সময় শিশুরা দল বেধে উৎসব আর আনন্দে শাপলা ফুল তুলতো, স্কুলের যাওয়ায অাগে স্কুল থেকে অাসার পর পুকুর থেকে শাপলা ফুল তুলা ছিল অন্যরকম এক অানন্দ। তবে সময়ের পরির্বতনে বদলে গিয়েছে অাগের সব দিন, এখন শুধু স্কুল, কলেজ ছাত্ররা দল বেধে উৎসব অার অানন্দ করেন ইন্টারনেট মিডিয়া। তবে কালের পরিবর্তনে অাগের মত দেখা মিলছেনা জাতীয় ফুল শাপলা।
যখন জুন, জুলাই, অাগস্ট, সেপ্টম্বর মাসে শাপলা ফুলের গন্ধ বাতাসে বয়ে বেড়াত। প্রতিটি পাড়ায়-মোহল্লায় পুকুরে এক সময় লাল-সাদা শাপলা ফুটতো। ঊনসত্তর পাড়ার অনেক শাপলা পুকুর থাকলেও অন্যতম ছিল
একটি শাপলা পুকুর “ফুল পুকুর” এই পুকুর থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে শাপলা ফুল তুলতে অনেক মানুষ স্থানীয় এলাকা থেকে অাগত হতেন। এই পুকুর অার লস্কর উজির দিঘী শাপলা ফুলের পাতার গুন ছিল অতুলনীয় যারা মুখে কথা বলতে সমস্যা হতো, এ শাপলা পাতা দিয়ে ভাত খাওয়া হলে মুখের শব্দ ঠিক হয়েযেত। এখন সব জলাশয় থেকে শাপলা ফুল হারিয়ে গেছে। তবে কিছু স্থানে ছোট ছোট খাল, ও পুকুরে অল্প পানিতে এ বছর কিছু শাপলা ফুল ফুটতে দেখা গেছে। আগের তুলনায় তা খুবই কম। এবং কি সে সময়ে অনেক মানুষ শাপলা ফুল বাজারে বিক্রিয় করে জিবিকা নিবার্হ করতেন। শাপলা এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। এই ফুল উপমহাদেশে দেখা যায়। প্রাচীন কাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
ইংরেজিতে শাপলাকে বলা হয় Water Lily শাপলা ফুল দিনের বেলা ফোটে। শাপলার পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয়। তবে নিচের অংশ কালো রং থাকে। ভাসমান পাতাগুলো চারদিক ছড়িয়ে পড়েন।
সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এছাড়া টাকায়, দলিলপত্রে শাপলার জলছাপ আঁকা থাকে। শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল শাপলা। এই ফুলের বিবরণ প্রাচীন বই-পত্রে ও সাহিত্যে পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে শাপলা ফুল সবজী হিসাবে খাওয়া হয়।
শাপলা ফুলের সাথে একটি গোল অাকারে ফল থাকেন, যা দেখতে “ড্রাগন” ফল মত গ্রামের শিশুদের কাছে এটি ঢ্যাপ নামে পরিচিত। ট্যাপ এর ভিতরে অংশে মাছের ডিমের মত কিছু অংশ থাকেন। ঢ্যাপের বীজ শুকিয়ে ভেজে এক ধরনের খাবার তৈরি করা যায়। একে ঢ্যাপের খৈ বা মুড়ি বলে। খৈ ও গুড় মিশিয়ে মোয়াও তৈরি করা হয়। খেতে বেশ সুস্বাদু। শাপলার গোড়ায় আলোর মতো কন্দ থাকে। একে বলে শালুক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম গাজ্জালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের মো. অাবুল কালাম বলেন, প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া আর কৃষি জমির আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, জলাশয়ে সমন্বিত হাইব্রীড মুরগীর খামার ও মাছ চাষ করাসহ বিভিন্ন কারণে জলজ উদ্ভিদ শাপলা ফুল হারিয়ে যাওয়ার পথে।