রবিবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মানুষ
চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মানুষ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: (৮ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫.৩১মি.) গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের ১শ’ ৬৫টি নদী চর গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তির চিত্র প্রায় একই। চরগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার গ্রহণের সুযোগ না থাকায় এবং যোগাযোগ সমস্যার কারণে অধিকাংশ রোগী হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারাত্মক জটিলতায় পড়েন এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়। গাইবান্ধা জেলায় গত এক বছরে ১শ’ ১১জন মা সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা গেছে গেছে বলে একটি সুত্রে জানা যায় এবং যারমধ্যে ৯০জনই চরের বাসিন্দা। ২২ টি নদী ও চর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ক্লিনিকও রয়েছে মাত্র ২টি। তবে এগুলোর অবস্থাও করুন। চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা না থাকায় এগুলোও মুখ থুবরে পড়েছে।
গাইবান্ধার কুন্দেরপাড়া চরের ধাত্রী আকতারুন্নেছা বেগম ও একই গ্রামের মর্জিনা বেগম জানান, আমরা চাইনা এই ঝুঁকির কাজ করতে, কিন্তু মানুষ এমন মুহুর্তে আসে তখন মানবিক কারণে না গিয়ে পারা যায় না। তিনি বলেন, চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প ও অপারেশন এর ব্যবস্থা থাকলে চরের দরিদ্র মানুষেরা অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে উপকৃত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্মী জানান, মেইন্ড ল্যান্ডে থাকি। চরে যাই কিভাবে বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্কমৌসুমে বালুর চর হেটে কর্মস্থলে পৌঁছানো, বলা চলে বারো মাস একই অবস্থা। একারণে ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব না যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম জানান, চরাঞ্চলের মানুষের নানা সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল চিকিৎসা ব্যবস্থা। সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীদের চরাঞ্চলের যাতায়াতের ক্ষেত্রে রয়েছে অনিহা। চরের নারী ও শিশুদের নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলেও তা বলার মতো কাউকে পান না।
তিনি আরো জানান, বেসরকারি সংস্থাগুলো চরাঞ্চলে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, তবে তা প্রকল্পভিত্তিক এবং দাতা সংস্থার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এজন্য তিনি সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে আরো দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ফুলছড়ি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার জানান, চরাঞ্চলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনটি ক্লিনিক অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। স্থানীয়রা জানেন না এখানে কি ধরণের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়। যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা বলে তিনি জানান।
প্রত্যেক মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যত এর সুফল পাচ্ছেন না চরাঞ্চলের মানুষজন। চরের মানুষজন চরাঞ্চলে প্রশিক্ষিত ধাত্রী, পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, রোগীদের হাসপাতালে পৌছানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত যাতায়াত বিল প্রদান, উঠান বৈঠক, স্বাস্থ্য সেশন করা গেলে এই সমস্যা অনেকাংশেই দূর হবে বলে চরের মানুষজন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।