সোমবার ● ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গাছ কৌশলে কর্তন
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গাছ কৌশলে কর্তন
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (৯ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২০মি.) সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের দু’পার্শ্বের বড় বড় গাছগুলো বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টেন্ডারের বাহিরের অতিরিক্ত গাছ কৌশলে কর্তন করে লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে গাছ কর্তন না করতে এবং কর্তন হওয়া গাছগুলোর সঠিক হিসেব দিতে বন বিভাগের কাছে লিখিতভাবে জাবাব চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী সেতুর পশ্চিম থেকে গোলচন্দ বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের দু’পার্শ্বের ১৫৭টি গাছ চিহিৃত করা হয় নিলামের জন্য। এরপর ২০১৪ সালে ঐ গাছগুলো টেন্ডার হলেও একপর্যায়ে সেই টেন্ডার বাতিল হয়। পরবর্তিতে ২০১৬ সালে ঐ ১৫৭টি গাছ কর্তনের জন্য নতুন করে টেন্ডার হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নুর উদ্দিন গাছগুলোর টেন্ডার পান। চলতি বছরের শুরুতে সওজ, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কর্তন করার জন্য ১৫৭টি গাছ চিহ্নিত করার পর ঠিকাদার গাছ কর্তন শুরু করেন। ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা গাছের অধিকাংশ গাছ কর্তন করে নেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- টেন্ডারের আওতাভূক্ত চিহ্নিত করা গাছগুলো প্রায় ৩মাস পূর্বে কর্তন করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার। এর মধ্যে অনেকটা গাছ সমূলে কেটে নেওয়া হয়েছে। অনেক গাছের গুড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, আবার কিছু গাছের গুড়ি নতুন মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে কর্তৃপক্ষের তদন্তে গাছের কোন অস্তিত্ব পাওয়া না যায়। বাচাইকৃত গাছগুলো কেটে নেওয়ার পর বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এখন নতুন করে চিহ্নিত ও তড়িগড়ি করে গত দুই দিনে বেশ কয়েকটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় এলাকাবাসী এতে বাঁধা প্রদান করেন এবং সওজ’র কর্মকর্তাদেরকে তা অবিহিত করলে গতকাল সোমবার বিকেলে সওজ’র কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাছ কর্তন বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
লামাকাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রইছ আলী ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক একেএম দুলাল বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম হওয়া ১৫৭টি গাছ সওজ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ চিহ্নিত করে দেওয়ার পর ঐ গাছগুলো ঠিকার কর্তন করে নেন। কিছু গাছ এমন ভাবে কর্তন করে নেওয়া হয়েছে, যাতে গাছের কোন অস্তিত্বই পাওয়া না যায়। এখন নতুন করে গাছ চিহ্নিত করে টেন্ডার ছাড়া ও সওজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই গত ২দিনে প্রায় ২০টি গাছ কর্তন করে নেওয়া হয়েছে। এতে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, যদি নতুন করে টেন্ডার না হয়ে গাছগুলো কর্তন করে লুট চলতে থাকে তাহলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নুর উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
সাইজ লিস্ট অনুযায়ী গাছগুলো সঠিকভাবে কর্তন করা হচ্ছে দাবি করে সিলেট বন বিভাগের কর্মকর্তা (পিএম) রুহুল আমিন বলেন, প্রথমে কর্তনের জন্য গাছগুলো (নিলামকৃত) চিহিৃত করে দেওয়া হয়। কিন্ত কর্তনকালে এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ পরবর্তীতে আবারও গাছ চিহ্নিত করে দেন। আর চিহ্নিত করা গাছগুলোই এখন কর্তন করা হচ্ছে। বন বিভাগের কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ (সওজ) সিলেটের শাখা প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে গাছ কর্তন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। এপর্যন্ত যতগুলো গাছ কর্তন করা হয়েছে এর অনুমোদন রয়েছে কিনা তা জানতে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।