সোমবার ● ৮ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ধর্মান্তর প্রসঙ্গে : প্রেমের টানে না ধর্মের টানে ? অতঃপর পরিণতি কি ?
ধর্মান্তর প্রসঙ্গে : প্রেমের টানে না ধর্মের টানে ? অতঃপর পরিণতি কি ?
উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু :: বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নানা খবর জানতে গেলে অন্যান্য ধর্ম থেকে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছে এমন খবর যেমন পাওয়া যায় তেমনি বৌদ্ধ ধর্ম থেকে অন্যান্য ধর্ম গ্রহণ করছে তেমন খবরও অপ্রতুল নয়। এ ধরণের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দেখা যায় যে ধর্মে প্রবেশ করছে সেই ধর্মের মানুষ কিছুটা খুশি হয় অন্যদিকে যে ধর্ম ত্যাগ করছে সেই ধর্মের মানুষ কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়। মানুষ মূলতঃ দুই কারণে ধর্মান্তরিত হয় প্রেমের টানে নতুবা ধর্মের টানে। কেউ যদি ধর্মের টানে ধর্মান্তরিত হয় তবে বুঝতে হবে যে সে জ্ঞানী একজন। ঐ ব্যক্তি নিজ ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানে, আবার যে ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় সে ধর্ম সম্পর্কেও অনেক কিছু জেনে নেয়। তার নিজ ধর্মে পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারে না বলেই সে অন্য ধর্ম গ্রহণ করে। তার সাথে বসে আলোচনা করলে দেখা যাবে সে আসলে অনেক কিছুই জানে।
বুদ্ধ বলেছেন ‘এহিপস্সিকো’ অর্থাৎ এস দেখ, গ্রহণের যোগ্য হলে গ্রহণ কর সেটা তোমার বাবা, দাদা পালন করে আসছে বলে নয়, তোমার নিজ জ্ঞানে বিবেচনা করেই গ্রহণ কর। সেক্ষেত্রে যার যে ধর্ম গ্রহণ কিংবা বর্জন করার ইচ্ছা জাগে সে সেটা করতে পারে, কারণ সবার বিবেচনা শক্তি তো আর এক হতে পারেনা। এই ধরণের ব্যক্তিদের ব্যাপারে কিছু বলার থাকে না। তাদের ঘৃণা করারও কোন কারণ দেখিনা।
কিন্তু যারা প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হয় তাদের ঘৃণা করা যেতেই পারে। কারণ তারা হচ্ছে সমাজের নষ্ট কীট। পড়ে থাকা আবর্জনার সাথে তাদের তুলনা করা যেতে পারে। একবার ভেবে দেখুন কেবলমাত্র প্রেমের টানে রিপুর তাড়নায় যে মা দশ মাস দশ দিন অত্যধিক কষ্ট করে তাকে জন্ম দিয়েছে সেই মাকে যেই বাবা হাজারো পরিশ্রম করে একটা সংসারকে আগলিয়ে রাখে সেই বাবাকে সমাজের কাছে অত্যন্ত ছোট করে দিয়ে যায়।
অনেক সময় দেখা যায় ঐ পরিবারে কোন অবিবাহিত মেয়ে থাকলে সেই মেয়ের বিবাহ পর্যন্ত হয় না কারণ পুরো সমাজ ঐ পরিবারকে হেয় দৃষ্টিতে দেখে। অনেক সময় লজ্জায়, ক্ষোভে অনেক পিতামাতাকে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। অনেকে হয়তো বলে আমার ধর্মে আসলে তোমার মুক্তি নিশ্চিত। ভেবে দেখুন তো যে সন্তান মা বাবাকে চরম কষ্টে রাখে সেই সন্তান কিভাবে মুক্তি পাবে? কারণ প্রতিটি ধর্মেই তো মা বাবা কে সেবা করার কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ আছে।
যাই হোক, এত কিছুর পরও যারা ধর্মান্তরিত হয় প্রেমের টানে ভাববেন না তারা খুব সুখে থাকে। প্রথম কয়দিন তার প্রেমিক নিজের করে পেয়ে খুশি থাকে কিন্তু যতই দিন যায় ততই তার দুর্দশা শুরু হয়ে যায়কেন সেটা জানতে চান? চলুন জেনে নিই-
১.বিভিন্ন উৎসাবাদি যখন আসে তখন তার নতুন শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর মনে ইচ্ছা জাগে বেয়াই বাড়ি থেকে কিছু পেতে কিন্তু তাদের বেয়াই/বেয়াইন অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এবং তাদের সাথে সম্পর্ক না থাকায় তারা সেটা পায় না ফলে তাদের উৎসবের সময় মনে বেদনা জাগে। উদাহরণ স্বরুপ- নববর্ষে খই, লাড়– ইত্যাদি নিয়ে আসা হয় বেয়াই বাড়ি থেকে কিন্তু আপনার বেয়াই যদি অন্য ধর্মাবলম্বী হয় এবং সম্পর্ক না থাকে তবে সেটা তো আসবেনা। ফলে কায়িক কিংবা বাচনিক নির্যাতন শুরু হয় মেয়েটির উপর। এমনও নাকি বলে- তুই বউরগানি তাই আমাদের কপালে সেই সুখ নেই যে বেয়াই বাড়ি থেকে কিছু পাব।
২. যেই ছেলে সাময়িক আবেগের কারণে মেয়েটিকে বিয়ে করে সেই ছেলেও এক সময় তার ভুল বুঝতে পারে কারণ সেই ছেলে আর দশজনের মতো শ্বশুড়বাড়ির আদর আপ্যায়ন কিংবা কোন উপঢৈাকন পায়না। পরিণতি ঐ একটাই মেয়েটার উপর নির্যাতন।
৩. হাজারো নির্যাতন মেয়েটির উপর আসলেও মেয়েটিকে মুখ বুজে সহ্য করতে হয় কারণ তার তো পেছনে ফিরে তাকানোর কোন সুযোগ নাই। আবার নিজের পূর্বের ধর্মের কোন উৎসব আসলে তার নিজের মধ্যেও নিরব দহন শুরু হয়, কারণ সে যে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত ঐ পূজা-পার্বণ গুলোতে অংশ নিতে।
৪. সে নিজের সন্তানকে ধর্মীয় কোন জ্ঞান দিতে পারেনা কারণ নতুন ধর্ম সম্পর্কে সে তো বেশী কিছু জানেনা ফলে সেখানেও সে পদে পদে দুঃখ পায়।
৫. তার সন্তান যখন একটু বড় হয় তখন কারো সাথে ঝগড়া করলে তখন অন্য বাচ্চারা তাকে বউরগানীর ছেলে বলে তিরষ্কার করে আর সন্তান তখন সব জ্বালা মায়ের উপর ঝাড়ে। মায়ের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
৬. ধর্মান্তরিত মেয়েটি বাইরে বের হলে ভয়ে ভয়ে থাকে কখন না জানি কেউ আবার আগের বৌদ্ধ নামে ডাক দিয়ে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
৭. শুধু তাই নয় যে কোন সন্তান মনের যে কোন দুঃখের কথা মাকে বুঝায় কিন্তু এক্ষেত্রে সে মায়ের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পায়না ফলে নিরবেই জ্বলতে থাকে নিজের দ্বারা সৃষ্ট জ্বলন্ত চিতায়।
এভাবে আরো আরো………অনেক বিষয় আছে, আমি কয়েকটা তুলে ধরলাম মাত্র। তাই প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে অন্ততঃ কয়েকবার ভাবুন অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে।(সংগৃহীত)