সোমবার ● ৮ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » ঢাকা » ভিন্নমত দমন ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
ভিন্নমত দমন ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
অনলাইন ডেস্ক :: মো.এনামুল হক এনা : নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার মূলত ভিন্নমত দমনের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। ভিন্নমত দমন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যেই এই আইন পাশ করা হয়েছে। আমাদের নতুন সময়ের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, এখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হয়নি। তাতেই দেখা যায়, ইউটিউবে সরকারের বিপক্ষে যায়, এমন ভিডিও দেয়ার কারণে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে ময়মনসিংয়ের অজপাড়াগাঁয়ের একজনকে দেখলাম, খুব বেশি বোঝেনও না ফেসবুক। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীর ছবি শেয়ার দিয়েছেন, যেটা তার সমর্থকদের পছন্দ হয়নি। এই একটি ছবি শেয়ার দেওয়ার কারণে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। সংবিধানের মৌলিক যে বিধান, তাতে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে॥ ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে॥ সবাই যে আমাকে পছন্দ করবে, আমার পক্ষে বলবে, আমার গুণগান করবে, এই প্রত্যাশা করাটাই ঠিক না। এটা স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা।
এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি দোষী বলে আমি মানুষ। আমার দোষ নিয়ে আলোচনা হবে, আমার গুণের আলোচনা হবে। এটার সুযোগ দিতে হবে। সেখান থেকে আমি আমার দোষগুলো শুধরে নেবো। ক্ষমতায় থেকে কাজ করতে গেলে ভুল হবেই। এই ভুলগুলো গণমাধ্যম বা কোনো সত্যিকারের সমালোচক ধরিয়ে দেবে। আমার ভুলগুলোর গঠনমূলক সমালোচনা করবে। তখন আমি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শুধরে যাবো। এটাই গণতান্ত্রিক মানসিকতা।
বিএফইউজের মহাসচিব বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে স্বাধীন মতপ্রকাশের নিশ্চয়তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিটি লাইন, প্রতিটি প্যারা, প্রতিটি ধারা সেই ৩৯ অনুচ্ছেদের লংঘন। শুধু তাই নয়, গোটা সংবিধানে নাগরিক মৌলিক অধিকারের যতগুলো ধারা আছে সবগুলো ধারার একটি সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে একটি ধারা যুক্ত করেছেন সংবিধানে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এদেশে সংবিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার অপরাধে অপরাধী হবেন। তার সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। এই সরকার নিজেরাই তো প্রতিনিয়ত প্রতি পদে পদে আইন করে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। সংবিধানের কোনো কিছু তোয়াক্কা করছেন না। সরকার বলছেন, তার মতাদর্শের সাংবাদিকদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এর অর্থ কী? এর অর্থ হলো সরকারের মতাদর্শের সবাই নিরাপদ। তাদের পক্ষের কারো কোনো সমস্যা হবে না। ভিন্নমতকে দমনের জন্য তিনি এই আইনটি করেছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়। এটা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য নয়। যারা আমাকে পছন্দ করেন কিংবা সমালোচনা করবেন; আমি তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করবো। বিনা ওয়ারেন্টে আমি তাদের গ্রেফতার করবো। আমি তাদের বাসাবাড়িতে ঢুকে তাদের কম্পিউটার জব্দ করবো। এটা হয় না।
এম আবদুল্লাহ আরো বলেন, আপনার বাসায় ঢুকে যদি কোনো কারণে আপনাকে পছন্দ না হয়, আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সন্দেহজনকভাবে তুলে নিয়ে যাবো। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই ল্যাপটপে কী ঢুকাবে? ধরুন, আপনার ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী বা সরকারবিরোধী কিছু নেই কিন্তু তারা কিছু সেখানে দিয়ে দিলো। সেটা দিয়ে আপনার যাবজ্জীবন শাস্তির ব্যবস্থা করবে না এর গ্যারান্টিটা কে দেবে?
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ভূমিকা দলীয় আনুগত্যের জায়গাটায়, এখানে পেশাদারিত্ব বলে তো কিছু আর অবশিষ্ট নেই। আমরা সেটা পদে পদে দেখতে পাচ্ছি। এই বাস্তবতায় এই ধরণের আইন যখন পুলিশ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। সম্পাদনা : শরিফ উদ্দিন আহমেদ, সালেহ্ বিপ্লব । সূত্র: আমাদের সময়.কম