সোমবার ● ৮ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথে ভূয়া সনদে শিক্ষক নিয়োগ : ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত
বিশ্বনাথে ভূয়া সনদে শিক্ষক নিয়োগ : ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২৩ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৫৮মি.) ভূয়া নাগরিক সনদে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা কোটায় ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (২০১৪ সালের স্থগিতকৃত)’ নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত সেই ৫ জনের বিরুদ্ধে আজ সোমবার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তকালে সেই ৫ জনের মধ্যে ১ জন বিশ্বনাথের স্থায়ী নাগরিক ও অপর ৪ জন বিশ্বনাথের স্থায়ী নাগরিক নয় মর্মে সংশ্লিস্ট ইউপির জনপ্রতিনিধিরা তদন্ত কমিটিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ২ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান নাজমুল আলম ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম।
এদিকে, ভূয়া নাগরিক সনদ সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবীর আন্দোলনে সোচ্ছার রয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে অবৈধদেরকে বাতিল করে সেই স্থলে স্থানীয় বৈধ প্রার্থীদেরকে নিয়োগ প্রদান করে বিশ্বনাথ উপজেলার শিক্ষক সংকট দূর করার উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্ঠিকামনা করেছেন উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ‘আঁখি বণিক (রোল নং ৫৩১৬৪৮৫), তমা মিস্ত্রী (রোল নং ৫৩২১২৩৭), তাহমিনা ইয়াসমিন (রোল নং ৫৩২১৩৩৩), বেবী সরকার (রোল নং ৫৩৩০৫১১), হেপী সরকার (রোল নং ৫৩৩০৫২৮)’র বিরুদ্ধে জাতিয়াতি করে ভ‚য়া নাগরিক সনদ সংগ্রহের অভিযোগ এনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার স্থানীয় বৈধ প্রার্থীরা। ওই লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (৮অক্টোবর) সকাল থেকে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি উপজেলার ৩টি (খাজাঞ্চী-রামপাশা-বিশ্বনাথ সদর) ইউনিয়নের গিয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযুক্তদের কাছ থেকে তাদের (অভিযুক্ত) বক্তব্য ও নিজেদের পক্ষের প্রমানপত্র সংগ্রহ করেন। ইতিপূর্বেও স্থানীয় প্রার্থীদের করা আরেকটি পৃথক লিখিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ৩ জন (সঞ্জয় তালুকদার-৫৩২০১৭১, শায়ান চন্দ্র তালুকদার-৫৩২০২৩৪, জাহিদুল হাসান-৫৩১৩০১৮) ভূয়া সনদ সংগ্রহকারী প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ‘মুকিবুর রহমান (রোল নং ৫৩২০৫২৬) ও আহসান উল্লাহ (রোল নং ৫৩২০৫২৫)’ নামের আরো ২ জনকে মৌখিত পরীক্ষাস্থল থেকে বহিস্কার করা হয়।
এলাকাবাসীর দাবী, চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্রদান করা নাগরিক সনদের সাথে তাদের জন্মনিবন্ধন সদনটি’সহ সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাচাই করে নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার। কারণ বহিরাগতরা অবৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করে চাকুরী গ্রহন করে। আর নিয়োগ স্থায়ী হওয়ার পর নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়, ফলে বিশ্বনাথে শিক্ষক সংকট থেকেই যায়। তাই সঠিকভাবে তদন্ত পূর্বক প্রকৃত স্থানীয়রা চাকুরী পেলে বিশ্বনাথের শিক্ষক সংকট কমে যাবে।
বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক ও খাজাঞ্চী ইউপি চেয়াম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আঁখি বণিক বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের এবং হেপী সরকার ও বেবী সরকার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের নামে আমাদের ইউনিয়নে কোন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। তাদের প্রদান করা নাগরিক সনদটি ভূয়া।
রামাপাশা ইউনিয়ন স্থানীয় (৭নং) ওয়ার্ডের মেম্বার নাসির উদ্দিন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (৭, ৮ ও ৯নং) মহিলা মেম্বার মিনা বেগম বলেন, তাহমিনা ইয়াসমিন বিশ্বনাথ উপজেলার রামাপাশা ইউনিয়নের কাউপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নন। এমনকি কোন সময়ই তিনি কাউপুর গ্রামে বসবাস করেননি কিংবা করছেনও না।
রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, তমা মিস্ত্রী রামপাশা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। আমাদের ইউনিয়ন থেকে তাকে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয় ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে। তাহমিনা ইয়াসমিনের প্রদান করা জন্মনিবন্ধন অনুসারে তিনি ময়মনসিংহের স্থায়ী বাসিন্দা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, জালিয়াতি করে কিংবা ভূয়া কাগজপত্র নিয়ে কেউ ‘সহকারী শিক্ষক’সহ কোন চাকুরীই করতে পারবেন না। সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কেউ অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ান নাজমুল আলম বলেন, তদন্তকালে যা সঠিক পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আমি শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করব।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরের ২৬ মে অনুষ্ঠিত (২০১৪ সালের স্থগিতকৃত) ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষায়ও বিশ্বনাথ উপজেলা কোটায় বহিরাগতদের ব্যাপক দাপট ছিল। লিখিত পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ন ৭৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩৫ জনই ছিলেন বহিরাগত। আর ২ ও ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায়র পর ৭৬ জনের মধ্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ন ২৫ জনের (৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী) মধ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধে বহিরাগতের অভিযোগ উঠে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।