বুধবার ● ১০ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » অপরাধ » বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর অগ্নিদগ্ধের ঘটনার রহস্য উদঘাটন : গ্রেফতার-২
বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর অগ্নিদগ্ধের ঘটনার রহস্য উদঘাটন : গ্রেফতার-২
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (২৫ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকল ৩.২৩মি.) বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে অগ্নিদগ্ধে একই পরিবারের ৬জন আহত ও অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ চম্পা বেগম নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার মূল হুতা রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত হুসন আলীর পুত্র আরশ আলী (৩৭) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে এঘটনায় একই গ্রামের ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫) কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তারা পুলিশের কাছে অগ্নিকান্ডের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্বনাথ থানায় প্রেস ব্রিফিং-এ এমন তথ্য জানিয়েছেন থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম।
গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই রাত আনুমানিক আড়াইটায় ফারুক মিয়ার স্ত্রী চম্পা বেগম তার ছোট পুত্রকে প্রস্রাব করাতে ঘুম থেকে সজাগ হলে দেখতে পান কে বা কাহারা হঠাৎ ঘরের সামনের ষ্টিলের দরজার নিচের ভাঙা অংশ দিয়ে বাহির থেকে ঘরের ভিতরে কিছু নিক্ষেপ করার সাথে সাথে শব্দ হয়ে ঘরের ভিতরে দরজার পাশে রাখা সোফায় আগুন লেগে যায়। এসময় ঘর থেকে বাহির হওয়ার চেষ্টা করলে আগুণে দগ্ধ হন ফারুক মিয়া (৫০), তার স্ত্রী চম্পা বেগম (৪৫), মেয়ে রিফা বেগম (১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২) ও নিজাম উদ্দিন (১০)। তাদের আর্ত চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা রাজু মিয়া (ফারুক মিয়ার পুত্র) ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। এঘটনায় নিহত চম্পা বেগমের ভাই, উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আব্দুল মছব্বিরের পুত্র সফিক মিয়া বাদি হয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামী করে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২১)।
প্রেস ব্রিফিং-এ ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান, ভিকটিম ফারুক মিয়ার সৎ বোনের স্বামী গ্রেফতারকৃত আরশ আলী এবং সৎ ভাইয়ের স্ত্রী রেহেনা বেগম। সেই সুবাদে ফারুক মিয়ার বাড়িতে রেহেনা বেগমের ঘরে সবসময় যাওয়া করতেন আরশ আলী। স্বামী ফরিদ মিয়া প্রবাসে থাকাকালীন অবস্থায় রেহেনার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের বাড়ির ২/৩ জন পুরুষের। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রেহেনার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে আরশ আলী। এরপর থেকে অবাদে রেহেরার সঙ্গে মেলামিশা করতে থাকে আরশ। কিন্ত এই অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ফারুক মিয়া, তার স্ত্রী চম্পা বেগম, মেয়ে রিপা বেগম ও পুত্ররা। উক্ত বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফারুক মিয়ার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আরশ আলী ও রেহেনা বেগম এবং তারা ফারুক মিয়ার পরিবারের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে ও বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে ফারুক মিয়ার ঘরে আগুণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় আরশ ও রেহেনা।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ২দিন আগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারস্থ (আনন্দ বাজার) হুসিয়ার এন্টারপ্রাইজ থেকে ২লিটার পেট্রোল ক্রয় করে নিয়ে আসে আরশ। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক আড়াইটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহেনা বেগমের দরজায় কড়া নাড়ে আরশ। এসময় ঘর থেকে বের হয়ে রেহারা ও আরশ পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারুক মিয়ার বসতঘরের দরজার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পর কয়েলের আগুণ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে আরশ ও রেহেনা লোকমূখে প্রচার করতে থাকে। সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে ঘটনার পরদিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কয়েলের আগুণ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্ত পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে সেই পুড়া কয়েলের ছাই ও অবশিষ্ট অংশ অক্ষত দেখতে পান এবং অগ্নিদগ্ধ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য ও সন্দেহজনক লোকরা আত্মগোপন করায় ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি হত্যার উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা। তাই সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা চালায় পুলিশ। এরপর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার মূল সন্দেহজনক রেহেনা ও আরশের অবস্থান সনাক্ত করে পুলিশ এবং গত ৫ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা থেকে রেহেনা বেগমকে ও গত মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) রাতে সিলেট নগরীতে অভিযান চালিয়ে আরশ আলীকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই সাধিন তালুকদার। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে রেহেনা বেগম ও আরশ আলী ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে জানান ওসি।
ওসি আরো জানান- মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সহযোগীতা করায় তিনি সাংবাদিককের ধন্যবাদ জানান।
প্রেস ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন- সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) সাইফুল ইসলাম, বিশ্বনাথ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ ও এসআই সাধিন তালুকদর।