বুধবার ● ১০ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা রায় : মৃত্যুদণ্ড-১৯, যাবজ্জীবন-১৯ ও কারাদণ্ড-১১
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা রায় : মৃত্যুদণ্ড-১৯, যাবজ্জীবন-১৯ ও কারাদণ্ড-১১
ঢাকা প্রতিনিধি :: (২৫ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৩৫মি.) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ অগষ্ট গ্রেনেড হামলার রায় ১৪ বছর ১ মাস ২০ দিন আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত।
এ রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের দিয়েছেন আদালত।
একই সাথে মামলায় ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার মোট ৫২ আসামির মধ্যে তিন জনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
আজ বুধবার ১০ অক্টোবর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
এর মাধ্যমে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলার ১৪ বছর এবং এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দাখিলের ১০ বছর পর রায় ঘোষণা হলো।
এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আসামিপক্ষ সব আসামির বেকসুর খালাস দাবি করে। সেদিনই এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষে ৫১১ জনের মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোট আসামি ছিলেন ৫২ জন। এই মামলার বিচার চলাকালে আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় এবং হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলা দু’টিতে আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।
এই মামলায় মোট ৩১ জন আসামি কারাগারে থাকলেও বাকি ১৮ জন পলাতক। আর আসামিদের মধ্যে আট জন জামিনে থাকলেও রায়ের দিন নির্ধারণ করার আগে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার সময় পলাতক ১৮ জন ছাড়া বাকি ৩১ আসামির সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস পদ্ধতিগত বিষয়ের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন, যা চলতি বছর ১ জানুয়ারি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার সাত বছর কারাদণ্ড দাবি করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের ওই সময়ের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ভয়াবহ ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ৩ জুলাই অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ফলে মোট আসামি দাঁড়ায় ৫২ জনে।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের করার পর ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সব মিলিয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৫১১ জনের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২৫ জন জন। গত ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে আসামি পক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।