শুক্রবার ● ১২ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সাউথখালীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন : দশ গ্রাম প্লাবিত ২হাজার একর আমন ধানের ক্ষতি
সাউথখালীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন : দশ গ্রাম প্লাবিত ২হাজার একর আমন ধানের ক্ষতি
বাগেরহাট অফিস :: (২৭ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩৫মি.) সাউথখালীর বগী বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, দশ গ্রাম প্লাবিত ২হাজার একরআমন ধানের ক্ষতি।৪ দিনেও ভাঙন মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দুর্গতদের খবর নিতেও যায়নি বাঁধ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কেউ। ভাঙন আতঙ্ক আর প্লাবনে ভেসে যাওয়া বহু আশার আমন ফসল হারিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে দশ গ্রাম। ওই এলাকার শত শত পরিবার বাঁধ ভাঙার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
শরণখোলা উপজেলায় ৬৩ কিলোমিটার টেকসই বাঁধের কাজ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান রয়েছে। ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করছে। জরুরী ভাঙন প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মাটি সংকটসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বলেশ্বর নদের বাঁধভাঙা জোয়ারের পানি হুঁ হুঁ করে ঢুকছে লোকালয়ে। পানির সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে কচুরিপানা ঢুকে কয়েক হাজার একর আমনের ক্ষেতে আটকে আছে। শত শত ঘরবাড়ি তলিয়ে রয়েছে। গত দু-দিনের চেয়ে আজ শুক্রবারপানির চাপ আরো প্রবল। পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বগী থেকে গাবতলা আশার আলো মসজিদ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণটাই বড় বড় ফাটল ধরেছে। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধের ওই অংশ বলেশ্বরে বিলীন হতে পারে। স্থানীয়রা জানান, ভাঙন আর প্লাবনে বগী, চালিতাবুনিয়া, তেড়াবেকা, বগী দশঘর, বগী সাতঘর, দক্ষিণ সাউথখালী, গাবতলাসহ আতঙ্কে রয়েছেন দশ গ্রামের মানুষ।
বগী এলাকার স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. রিয়াদুল পঞ্চায়তে বলেন, গত সোমবার (৮অক্টোবর) রাতে বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। বর্তমানে ৩০০মিটারেরও বেশি এলাকা ভেঙে গেছে। প্রায় দুই হাজার একর আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির চেয়ে কচুরিপানায় আটকে ফসলের বেশি ক্ষতি করছে। সহ¯্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় গত দুদিন ধরে অনেক পরিবারে রান্না হয়নি। কিন্তু ভাঙনের আজ তিন দিন পার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিইআইপি প্রকল্প এমনকি প্রশাসনেরও কোনো লোক আমাদের এই এলাকার দুর্গত মানুষের খোঁজখবর নিতে আসেনি।
বগী গ্রামের মজিবর হাওলাদার জানান, তাঁর ঘেরে দুই লক্ষাধিক টাকার গলদা ও সাদা মাছ ছিল। তা সবই ভেসে গেছে। তাঁর মতো শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
ওই গ্রামের আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ জানায়, তাঁদের ঘরে দুই দিন রান্না হয়না। ভাঙন থেকে কিছু দুরেই বারেক হাওলাদারের বাড়ি। বারেকের স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪৫) জানান, রান্নবান্না করতে না পারায় বাজার থেকে শুকনা খাবার এনে খেতে হচ্ছে তাদের ।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অব্যাহত ভাঙনে বগী এলাকা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। এবারের ভাঙনে পানির সঙ্গে কচুরিপানা ঢুকে আমনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। নদী শাসন না করে যতোই রিং বাঁদ দেওয়া হোক তা কোনো কাজে আসবে না।
উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) প্রকৌশলী শ্যামল দত্ত বলেন, রিং বাঁধ দিতে হলে প্রচুর মাটির দরকার। আশপাশের সব জমিতেই আমন ফসল রয়েছে। পানি নেমে গেলে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে মাটির ব্যবস্থা করা গেলে বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।#####**ছবি দয়ো আছে ### ###