রবিবার ● ১৪ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ৩০ বছর ধরে ভূমিহীনদের আশ্রয়স্থল চর হোগলাবুনিয়া আদর্শ গ্রাম
৩০ বছর ধরে ভূমিহীনদের আশ্রয়স্থল চর হোগলাবুনিয়া আদর্শ গ্রাম
বাগেরহাট অফিস :: (২৯ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.০৯মি.) বাগেরহাটের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ জীবন-মানের তেমন কোন উন্নয়ন না হলেও এক টুকরো মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ায় অন্তত জন্মস্থানেই থাকার সুযোগ হয়েছে ২০টি পরিবারের প্রায় একশ’ মানুষের। তা না হলে হয়ত কোন এক শহরে গিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে জীবন-যাপন করতে হতো ওইসব ভূমিহীন মানুষগুলোকে। সরকারি উদ্যোগে খাস জমিতে গুচ্ছগ্রাম থেকে আদর্শ গ্রামে রূপ নেয়া ২০টি পরিবারের সদস্যদের এমনই মন্তব্য। বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলা এবং পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার সীমান্তবর্তী বলেশ্বর নদী তীরবর্তী ওই আদর্শ গ্রামে গিয়ে নানা সমস্যা-সংকটেও ভূমিহীন মানুষগুলোর মধ্যে আনন্দের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তারা জানান, বিগত ৩০টি বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছেন। প্রতিটি পরিবারকে সাড়ে চার শতক জমি দিয়েছিল সরকার। সাথে টিনসেডের ঘর করার জন্য দেয়া হয়েছিল কিছু উপকরণও। বরাদ্দ পাওয়া জমির মালিকদের অনেকেই আজ নেই। কিন্তু তাদের সন্তানসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা আজও সেখানে আশ্রিত।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের চর হোগলাবুনিয়া গ্রামের আদর্শ পল্লীতে গিয়ে কথা হয় মোশারফ হোসেন শরীফের সাথে। পার্শ্ববর্তী গুয়াবাড়িয়ায় তার জন্ম। পিতার নাম মৃত: গয়জদ্দিন শরীফ। নয় ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই তিনি। তিনি একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। পিতার জমি-জমা না থাকায় মামা বাড়িতেই থাকতেন। পরে মতিয়ার রহমান গাজী নামের একজন ইউপি সদস্যের কাচারীতে আশ্রয় নেন। এখন যেখানে তিনি বাস করছেন সেটি ছিল এক সময় বিল। বলেশ্বরের চর বলেই সেটি পরিণত হয় খাস জমিতে। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সারোয়ার হোসেনের চেষ্টায় তিনিসহ সর্বমোট ২০টি পরিবার গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় পান ১৯৮৮ সালে। সর্বমোট ৯০ শতক জমি ২০টি পরিবারের মধ্যে সমভাবে বন্টন করে দেয় তৎকালীন সরকার। পাশেই এক একরের একটি পুকুর রয়েছে। সেটিও দেয়া হয় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের। মাত্র সাড়ে চার শতক করে জমির ওপর কোনরকমে ঘর তুলে থাকতে শুরু করেন তারা। কাজ-কর্ম বলতে দিনমজুরী আর মাছ ধরাই তাদের মূল পেশা। একমাত্র মোশারফ হোসেনসহ ২/১জন মুদি দোকান দিয়ে সংসার চালান। বাকীরা দিনমজুরী, ভ্যান চালানো বা মাছ ধরা পেশায় নিয়োজিত। নিজেদের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য তারা এক সময় একটি সমিতিও করেন। কিন্তু সে সমিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এই ত্রিশ বছর ধরেই তারা সেখানে আশ্রয়ের সুযোগটি পেয়ে অত্যন্ত সাদামাটাভাবেই জীবন চালিয়ে আসছেন।
আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা হাতেম আলী শেখ। তার মেয়ে তাহমিনা বললেন, আদর্শ গ্রামে থাকার জায়গাটুকু পাওয়ায় তাদেরকে আর শহরমুখী হতে হয়নি। এটি না পেলে হয়ত তাদেরকে সন্তান-সন্তুতি নিয়ে কোন এক শহরে গিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হতো। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতো না। আ: সালাম শেখের স্ত্রী রাবেয়া বললেন তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন বলেই একেবারে ছন্নছাড়া হতে হয়নি।
আদর্শগ্রাম পরিদর্শনের সময় কথা হয় তোতা মিয়া, হেমায়েত উদ্দিন, ছায়দুর রহমান, নেছার উদ্দিন ফরাজীসহ অনেকের সাথে। যাদের অনেকের সন্তানই খুলনা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে গিয়ে নানান কাজ করছেন। অবশ্য ২/১জন সেখানে অবস্থান করেই গরুর ফার্ম করাসহ নানা কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
আদর্শ গ্রামের বাসিন্দাদের বর্তমানে কিছু সমস্যাও রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানত দু’টি সমস্যা প্রকট বলে তারা উল্লেখ করেন। প্রথমত বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি বাড়িই পানিতে তলিয়ে যায় এবং ওই ২০টি পরিবারের জন্য কোন কবরস্থান নেই। এজন্য দ্রুত সেখানে মাটি ভরাট কর্মসূচী ও একটি কবরস্থানের জন্য জায়গা দেয়ার জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন। চেয়ারম্যানের মাধ্যমেই আদর্শ গ্রামের বাসিন্দাদের চাহিদার কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। যার আলোকে সম্প্রতি একজন তহসিলদার এসে জরিপ করে গেছেন। হয়ত কিছু অনুদান সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে।
অবশ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলার একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। হয়ত শীঘ্রই বরাদ্দ পাওয়া যাবে। নতুন করে বরাদ্দ আসলেই এর আরও উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু সেটি কি চর হোগলাবুনিয়া আদর্শ গ্রাম কি না সেটি তার জানা নেই।