রবিবার ● ১৪ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » উল্লাপাড়ায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দুই পরীক্ষার্থীর পরিবার পরিকল্পানায় লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন
উল্লাপাড়ায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দুই পরীক্ষার্থীর পরিবার পরিকল্পানায় লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: (২৯ আশ্বিন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩২মি.) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বড়পাঙ্গাসীতে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দুই পরীক্ষার্থীর পরিবার পরিকল্পনা অধিপ্তরের পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষার অংশগ্রহন করার অভিযোগ ওঠেছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করায় পরিবার-পরিকল্পনা অফিস থেকে তদন্তে গেলে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এনিয়ে ওই ইউনিয়নে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে বড়পাঙ্গাসী ইউপির খাদুলী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম ওরফে মোয়াজ্জেম হোসেনের স্ত্রী সামীমা ইয়াসমিন লিখিত পরীক্ষায় নিজেকে টিকাতে তার ছোটবোন মোছাঃ সীমা খাতুন ও একই এলাকার জান্নাতুল নেছার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে তাদের সহযোগিতায় পরীক্ষা দেবার জন্য এ কাজ করেছে। এদিকে, বড়পাঙ্গাসী ইউপি চেয়ারম্যানের সনদপত্র ব্যবহার করায় চেয়ারম্যান আবেদনপত্রে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়ায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির লিটন উল্লাপাড়া থানায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহকারীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি দায়ের করেছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে বিষয়টি তদন্তপুর্বক দুই প্রতারকের শাস্তি দাবী করেছেন।
জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর থেকে ২/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে নিয়োগের আওতায় চকপাঙ্গাসী ও খাদুলী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছ থেকে আবেদনের আহবান জানানো হয়। উক্ত পদে ২৫-৫-২০১৮ তারিখে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় মোছা. সামীমা ইয়াসমিন, পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, মাতা-সাবিনা ইয়াসমিন, স্বামী ফরিদুল ইসলাম ওরফে মোয়াজ্জেম হোসেন, গ্রাম খাদুলী, মোছা. সীমা খাতুন, পিতা-সিদ্দিকুর রহমান, মাতা-সাবিনা ইয়াসমিন, স্বামী-মোয়াজ্জেম হোসেন, গ্রাম-চক পাঙ্গাসী, মোছা. জান্নাতুল নেছা, পিতা-নুরনবী, মাতা-আঞ্জুয়ারা বেগম, স্বামী খালেকজ্জমান, গ্রাম-খাদুলীসহ বেশ কয়েকজন অংশগ্রহন করেন। এর মধ্যে উল্লেখিত ৩জনসহ মোট ৫জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। লিখিত পরীক্ষার পর সঠিক প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করার জন্য তদন্ত টিম ওই গ্রামে যায়। কিন্তু তদন্ত টিম সীমা খাতুন ও জান্নাতুল নেছাকে তাদের দেয়া ঠিকানাতে খুঁজে পাওয়া না। পরবর্তীতে আবেদনপত্রে দেয়া তাদের মোবাইলে ফোন দিলে তদন্তটিমকে উল্লাপাল্টা কথা বলেন। অন্যদিকে, স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, সামীমা ইয়াসমিন ও সীমা দুইবোন, তাদের বাপের বাড়ী সৈয়দপুর মাটিকাটা পাঙ্গাসী। তাদের আবেদনপত্রে বাবা ও মায়ের নাম একই রয়েছে। কিন্তু সীমা বিয়ে না হলেও স্বামীর জায়গায় শুধু দুলাভাইয়ের নাম মোয়াজ্জেম ও গ্রামের নামও দুলাভাইয়ের পাশের গ্রাম চক পাঙ্গাসী নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর জান্নাতুল নেছা সামীমা ইয়াসমিনের নিকটাত্মীয়। খাদুলী গ্রামের বাসিন্দা হলেও স্বামীর নাম ভুল ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সামীমা ইয়াসমিন পড়াশোনায় তেমন ভাল নয়। তাই লিখিত পরীক্ষায় টেকার জন্য সামীমা ও তার স্বামী ফরিদুল ইসলাম ওরফে মোয়াজ্জেম প্রতারনার মাধ্যমে সামীরার ছোটবোন ও নিকটাত্মীয় জান্নাতুল নেছাকে দিয়ে আবেদন করায়। লিখিত দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করায়। লিখিত পরীক্ষায় তাদের দুইজনের সহযোগিতা নিয়ে সামীমা ইয়াসমিন লিখিত পরীক্ষায় টিকে যায়। কিšন্তু দুই প্রতারক সীমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করায় সামীমা ইয়াসমিন মৌখিক পরীক্ষাতেও টিকে যায়। এটিকে বড় ধরনের প্রতারণা বলে মনে করছেন গ্রামবাসী মনে করছেন। অবিলম্বে দুই প্রতারককে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী করেছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে, যেহেতু দুই প্রতারক পরীক্ষার্থী সীমা ও জান্নাতুল নেছা বড়পাঙ্গাসী ইউপি চেয়ারম্যানের সনদপত্র আবেদনপত্রের সাথে ব্যবহার করেছে। সে জন্য মৌখিক পরীক্ষার পর পরিবার পরিকল্পনার পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্তের জন্য বলা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর লিটন আবেদনপত্রের মোবাইল নম্বরে জান্নাতুল নেছাকে ফোন দিলে সে উল্টো চেয়ারম্যান নানা ধরনের হুমকি দেয়। পরে চেয়ারম্যান নিজে থানায় বিষয়টি নিয়ে থানায় জিডি দায়ের করেন (জিডিনং-৭৩১, তারিখ ১০.১০.১৮, উল্লাপাড়া থানা)।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, সীমা ও জান্নাতুল নেছা দুইজনই প্রতারক। আবেদনপত্রে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। মুলত সামীমাকে লিখিত পরীক্ষাতে টিকানোর জন্যেই এ প্রতারণা করা হয়েছে। সামীমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। অবিলম্বে সামীমা নিয়োগ বাতিলসহ দুই প্রতারকের শাস্তিও দাবী করেছেন তারা।
ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর লিটন জানান, আমার ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যবহার করা হলেও মুলত ঠিকানা ভুয়া। তারা অসৎ উদ্দেশ্যে আমার ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জান্নাতুল নেছার ফোনে ফোন দিলে তার কথিত স্বামী খালেকুজ্জামান আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আমি ওই মোবাইল নম্বর দিয়ে থানায় জিডি দায়ের করেছি। তিনি আরো জানান, ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারী চাকুরীর নিয়োগপরীক্ষায় অংশ নেয়া বড় অপরাধ। দুই প্রতারকের শাস্তি হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে সীমা খাতুনের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার বাবা সিদ্দিুকুর রহমান জানান, সামীমা ও সীমা তার দুই মেয়ে। সীমার বিয়ে হয়নি। সে ঢাকায় লেখাপড়া করে। সামীমার খাদুলীতে বিয়ে হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে দুই মেয়ের পরীক্ষার কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
খাদুলী পোস্ট অফিসের পিয়ন আজিজুল ইসলাম জানান, খাদুলী ও চক পাঙ্গাসী গ্রামের যতগুলো ইন্টারভিউ কার্ড এসেছিল সবগুলোই প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে দেয়া হয়েছে। জান্নাতুল ও সীমাকেও তাদের হাতে দেয়া হয়েছিল। তবে এখন তাদের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে কিনা তা আমি জানি না।
পরীক্ষায় অংশ নেয়া নাহিদা কোরবান জানান, ওই দুই ভুয়া পরীক্ষার্থী অংশ না নিলে সামীমাসহ ওই দুজনও লিখিত পরীক্ষাতে টিকতে পারত না। প্রতারণার কারণেই চাকুরী থেকে বঞ্চিত হলাম। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হবে বলেও সে জানায়।
বড়পাঙ্গাসী ইউপির পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক বকুল হোসেন জানান, কয়েকদফা তদন্ত করে তাদের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও উল্টাপাল্টা কথা বলেন। মুলত অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিল করার জন্য এ ধরনের কাজ করা হয়েছে। আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত ছবিসহ তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে যাবে। তবে এটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের ব্যাপার। তবে বিষয়টি নিয়ে সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।