বৃহস্পতিবার ● ১৮ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » রাজশাহী » বেপরোয়া পদ্মার জেলেরা
বেপরোয়া পদ্মার জেলেরা
রাজশাহী প্রতিনিধি :: (৩ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৪৩মি.) সরকারের নিদের্শনায় ইলিশ শিকার বন্ধ। তাই জেলেদের সমস্যার কথা ভেবে সরকার দিচ্ছে মাথাপিছু ২০ কেজি চাল। যেনো জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে না নামে। তাতে লাভ হয়নি, এক শ্রেণির বেপরোয়া জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে জাল ফেলছে। তারা মা মাছ শিকার করছে। তবে প্রশাসন মাছ শিকার করা অবস্থায় আটক করেছে জেলেদের।
এই মাছ হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করছে প্রশাসন। অন্যদিকে রাজশাহীর সাহেব বাজার ও নিউ মার্কেটের ইলিশ বিক্রির আড়তে মাছের দেখা নেয়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, বাঘা, পদ্মার চর, চাঁইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, পাবনার ঈশ্বরদীতে নিষেধাজ্ঞার পরে জেলেরা মাছ শিকার করছে। এক সপ্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে এক লাখ এক হাজার ১২ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করে। এসময় ১২৫ কেজি (প্রায় তিন মণ) মা ইলিশ উদ্ধার করা হয়। পরে ইলিশগুলো স্থানীয় হতদরিদ্র ও এতিমখানায় দেয় প্রশাসন। ইলিশ শিকারের অভিযাগে করা হয়েছে ৫৩ হাজার টাকা জরিমানাও। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া হয়েছে ১৩ জনকে দণ্ড।
গত মঙ্গলবার বাঘায় পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৮ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। পরে মাছগুলো দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিষয়টি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পদ্মা নদীর আলাইপুর, চকরাজাপুর, মানিকের চর, চৌমাদিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে জেলেরা জাল ও মাছ ফেলে পালিয়ে যায়। এসময় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের ১২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ইলিশ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত জালগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়।
একইদিনে ভোলাহাটে প্রায় ২০ কেজি ডিমওয়ালা মা ইলিশ উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে উদ্ধারকৃত মাছগুলো উপজেলা হাফেজিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাছে বিতরণ করা হয়।
তার দুইদিন আগে বাঘায় পাঁচ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ১০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। জব্দকৃত মাছগুলো স্থানীয় এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, অসাধু জেলেরা ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এসময় ১০ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো গোকুল ঘাটে জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার একদিন আগে বাঘায় ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ ও এক জেলের তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
জানা যায়, বীরগঞ্জ বিজিবি ও বাঘা থানার পুলিশের একটি দল নিয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা পদ্মা নদীর মীরগঞ্জ, আলাইপুর, চকরাজাপুর, লক্ষীনগর, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় দুই লাখ টাকা মূল্যের ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এসময় উপজেলার ভানুকর গ্রামের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে জিয়াউল হককে তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় পাঁচ কেজি ইলিশ মাছও জব্দ করা হয়েছে। জালগুলো বিজিবি ক্যাম্পের সামনে জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া পৃথক ঘটনায় উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের কারেন্ট জাল এবং দুই কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেন।
তার একদিন আগে ঈশ্বরদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দুইটি মাছ ধরা নৌকা জব্দ এবং ৫০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল উদ্ধার করে ধ্বংস করে। পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারের দায়ে তিন জনকে গ্রেফতার করে প্রত্যেককে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দ-প্রাপ্তরা হলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়া ঘাটের রনি খাঁ, নজরুল ইসলাম ও মোকসেদ আলী। এদের প্রত্যেককে বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে পাবনা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ঈশ্বরদীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. যোবায়ের হোসেন এ নির্দেশ দেন।
এদিকে, শনিবার গোদাগাড়ীতে ১০ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে ১০ কেজি ইলিশ মাছও জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। আর ইলিশগুলো পাঠানো হয় এতিমখানায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ নেওয়াজ এ আদেশ দেন। পরের দিন দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে আট হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং দুই কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। বাঘা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জালগুলো উপজেলার মীরগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মাছগুলো উপজেলার দুস্থদের মধ্যে দেয়া হয়।
গত সেমাবার রাজশাহীর পদ্মায় অভিযান চালিয়ে ইলিশ ধরার অপরাধে ১০ জেলেকে জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১৪ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জালসহ ১৫ কেজি ইলিশ।
জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল ইসলাম জানান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সহযোগিতায় রাজশাহী হরিপুর ইউনিয়নের পদ্মায় অভিযান চালানিয়ে চারটি নৌকা থেকে মোট ১৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং ১৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। আটক করা হয় এর সঙ্গে জড়িত ১০ জেলেকে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস করে কারাদ- দেয়া হয়। পরে জরিমানার টাকা ও মুচলেকা দেয়ায় ১০ জেলে ছাড়া পান। জব্দকৃত কারেন্ট জালগুলো পুড়িয়ে ফেলা এবং ইলিশগুলো এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তার একদিন আগে বাঘায় পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে ১২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ২৮ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। মাছগুলো পদ্মার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম পদ্মা নদীর আলাইপুর, চকরাজাপুর, মানিকের চর, চৌমাদিয়া এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে জাল ও মাছ জব্দ করে। এসময় আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের ১২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ইলিশ জব্দ করে। জব্দকৃত জালগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করে দেয়া হয়।