বুধবার ● ২৪ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » লেপের কারিগরদের ব্যস্ততা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৩০হাজার নির্ভরশীল এ পেশার উপর
লেপের কারিগরদের ব্যস্ততা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৩০হাজার নির্ভরশীল এ পেশার উপর
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (৯ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৯.৪৯মি) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট সহ ১০জেলার দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। শীতের এই আগমনী বার্তায় ।এরই মধ্যে হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে। তাই শুরুতেই নতুন লেপ ও তোষক কিনে শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের১০জেলার বাসিন্দারা। এতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেপ-তোষকের কারিগর ও এ ব্যবসা-সংশ্লিষ্টরা।
এখন অলস সময় কাটানোর একদম ফুসরত নেই তাদের। ৩০হাজার লেপের কারিগর সারা বছরের রোজগার নির্ভর করে এ পেশার উপর।অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা লেপ-তোষক তৈরিতে অতিরিক্ত শ্রমিক নিযোগ করেন। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরাও দিনরাত কাজ করেন এসময়টাতে।
শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। তবে সেই প্রশান্তির ঘুমের সাথে শীতকে মোকাবেলা করে ঘুমাতে প্রয়োজন শীতবস্ত্রের। সেই শীতবস্ত্রের সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় থাকে লেপ। আর তাই শীত মৌসুম এলেই অন্তত ৪টি মাস তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেশী।
তাই তারা অন্য সময়ের রোজগার পুশিয়ে নিতে এ ৪টি মাস কাজ করেন সমান তালে। বাকি ৮ মাস এ কাজের চাহিদা না থাকায় লেপ সেলাই কর্মীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কাজে মনোনিবেশ করে। কেউ নেমে পড়ে রিকশা-ভ্যান চালাতে, কেউ মাঠে দিনমজুরের কাজ নেয়, আবার কেউ কেউ তাদের সুবিধামত বেছে নেয় অন্য পেশা।
লেপ ও তোষক ব্যবসায়ী শহীদ জানান, বছরের অন্যান্য সময় মাসে ২/৪ জন তোষক কিনতে আসলেও লেপের চাহিদা একেবারেই থাকে না। শীতের শুরু থেকে অন্তত ৪টি মাস লেপ ও তোষক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে লেপ। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ সেলাই কর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয় কয়েক গুণ।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমার এখানে ২০ জনের উপরে লেপ সেলাইয়ের কর্মী রয়েছেন। অন্য সময় এ ব্যবসা ধরে রাখতে মাত্র ২/৩ জন লেপ ও তোষক সেলাইয়ের কাজ করে থাকে। শীত মৌসুম শেষ হলেই এখানে কাজ না থাকায় বাকি লেপ সেলাই কর্মীরা অন্য পেশায় চলে যায়।
তিনি আরো জানান, এখানে পাইকারী দামে হকারদের কাছে রেডিমেট লেপ ও তোষক বিক্রি করা হয়। হকাররা ইঞ্জিন চালিত আলমসাধুতে লেপ-তোষক সাজিয়ে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাড়ে ৬ থেকে ৭শ টাকা দরে প্রতিটি লেপ ও ৯শ থেকে হাজার টাকায় তোষক বিক্রি করে। পাশাপাশি এখানে ভালো লেপ তৈরির অর্ডারও নেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে লেপ অনুযায়ী দাম ১ হাজার থেকে ১৩শ’ টাকা পড়ে। সেলাই কর্মী হাবিব জানান, প্রতিদিন তিনি পাঁচ থেকে ছয়টি লেপ সেলাই করে থাকেন। লেপ অনুযায়ী প্রতিটি লেপে তিনি মজুরি পান ১শ থেকে২শ টাকা। সেলাই কর্মীরা সবাই একই নিয়মে মজুরি পেয়ে থাকেন।
অপর সেলাই কর্মী রুবেল বলেন, সেলাই কাজ করলে অন্তত ৪টি মাস কোথাও কাজের জন্য ধর্ণা দিতে হয় না। ছায়ায় বসে সেলাইয়ের কাজ করতে বেশ ভালোই লাগে। দিন শেষে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা রোজগার হয়। শীত মৌসুম শেষে অন্য কাজে গেলে প্রতিদিন গড় রোজগার ২শ টাকা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়। যে কারণে এ মৌসুমে রোজগার অনেকটা পুশিয়ে নিতে আমরা ৪ মাস লেপ সেলাইয়ের কাজ করে থাকি।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ শহরের লেপ ও তোষক ব্যবসায়ী শহীদ জানান, প্রতিটি লেপ তৈরিতে ৫-৬ কেজি তুলা ব্যবহার করা হয়। আকার ভেদে ৭শ-২ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একটি তোষক তৈরি করতে ৮-১৫ কেজি তুলা লাগে, বিক্রি হয় ৬শ থেকে ১৫শ টাকায়। একটি জাজিম তৈরিতে ৩০-৫০ কেজি তুলা ও নারিকেলের খোসা প্রয়োজন হয়। আকার ভেদে তা বিক্রি হয় ১৫শ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
বাগেরহাট বেডিং এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু জাফর শেখ বলেন, তুলা-কাপড়ের দাম আর কারিগরের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের সহনীয় দামে মালামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
কারিগর রবিউল ইসলাম জানান, শীতের সময় কাজের অনেক চাপ থাকে। গড়ে প্রতিদিন একজন কারিগর ৩-৪টি লেপ-তোষক তৈরি করতে পারে।
ক্রেতা হেমায়েত,ইউনুস আলী,শাহজাহান খানও শেখ সাথী ইসলাম জানান, গত-শীতের তুলনায় বিভিন্ন প্রকার তুলা ও কাপড়ের দাম অনেক বেড়েছে। প্রতিটা লেপ-তোষাকে আকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হচ্ছে।