রবিবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা
সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল :: রাষ্ট্রের ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকগণ যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাই করেন তাকে নির্বাচন বলে ৷ এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন ৷ ফলে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সত্, দক্ষ ও যোগ্য হলে শাসন ব্যবস্থাও উন্নত ও উত্কৃষ্ট হয় ৷ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ নির্বাচন জনগণ ও রাষ্ট্রের মাঝে সেতুবন্ধনের অন্যতম মাধ্যম৷ কিন্তু এই সেতুবন্ধন শক্তিশালী করতে প্রয়োজন সুষ্ঠূ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ৷ এই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের যথেষ্ট ভূমিকা ও প্রভাব রয়েছে ৷
যথা :
(১) সত্ ও যোগ্য প্রাথর্ীকে বাছাই করতে ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য ৷
(২) প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের ভাড়া করা গুন্ডাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভীতি প্রদর্শন ও দুনর্ীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখতে পারে ৷
(৩) ভোটাকেন্দ্রে অধিক সংখ্যক ভোটার উপস্থিতির জন্যেও গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারনা খুবই সহায়ক ৷
(৪) নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্নে স্থানীয় জনগোষ্ঠি ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটির আস্থা অর্জনে গণমাধ্যমের প্রচারণা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ৷
(৫) নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন আচরণ বিধি, নির্বাচনী অপরাধ ও দন্ড প্রভৃতি বিষয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ৷
দেশে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক বিধিবিধান ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অপরিহার্য ৷ এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি একই সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা আরো বেশী ৷ ফলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে নির্বাচনী সংবাদ কিংবা এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন বা বার্তা পরিবেশনে নিম্নবর্ণিত শর্ত পালন করে তাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত ৷
(ক) সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ খবর বা প্রতিবেদন পরিবেশন করবেন৷ যদি কোন প্রার্থী তার প্রন্দ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন অভিয়োগ করেন তবে সাংবাদিককে অবশ্যই দু’পক্ষেরই মতামত নেয়া উচিত ৷
(খ) গণমাধ্যম কর্মী সর্বদা সঠিক তথ্য পরিবেশনে সচেষ্ট থাকবেন ৷
(গ) গণমাধ্যম কর্মী অর্থাত্ সাংবাদিকগণ পতিবেদন লেখা/ তৈরী করার সময় নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে কখনই বিবেচনায় আনবেন না ৷
(ঘ) সাংবাদিকরা এমন ভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন৷ যা কোন প্রকার বৈষম্য, অস্থিরতা বা সহিংসতার জন্ম দিতে পারে৷ (যেমনঃ বর্ণ, লিঙ্গ, যৌন শিক্ষা, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং জাতীয়তা ও সামাজিক সত্ত্বা)৷
(ঙ) সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর কাছ থেকে কোন প্রকার সুবধিা গ্রহণ করবেন না ৷
(চ) সাংবাদিকগণ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন প্রকার পূর্ব প্রতিশ্রুতি দেবেন না ৷
(ছ) সংবাদ পরিবেশনা হবে সঠিক ও পক্ষপাতহীন ৷
(জ) কোন প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করা উচিত নয় ৷
(ঝ) সকল প্রার্থী যেন গণমাধ্যম থেকে প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ সুবিধা পায় এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে ৷
দেশে সুদৃঢ় গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা অপরিহার্য৷ এক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক : লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলাম লেখক ও সংগঠক)
E-mail : [email protected]