শনিবার ● ২৭ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » উপকুলে সাইক্লোন সিডরের ১১ বছর পরও গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র : আতঙ্কে উপকূলবাসী
উপকুলে সাইক্লোন সিডরের ১১ বছর পরও গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র : আতঙ্কে উপকূলবাসী
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (১২ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.১৮মি) উপকুলবাসি সুপার সাইক্লোন সিডর-আইলার ১১ বছর পরেও বাগেরহাটে দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত ঘূর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাধ গড়ে উঠেনি। যার ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগের আতংক কাটেনি উপকুলবাসির। দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে হতাশায় উপকুলবাসি। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও দ্রুত টেকসই বেড়িবাধ নির্মানের দাবী এলাকাবাসীর।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে প্রলয়ংকারী সুপার সাইকোন সিডর আছড়ে পড়ে বাগেরহাটের উপকুলের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ জেলার ৯টি উপজেলায়। ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে ১০-১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটের জনপদের হাজার হাজার বাড়ি ঘর, পাশাপাশি মারা যায় নারী পুরুষ শিশু। পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টারের অভাবে সিডরে এ অঞ্চলে প্রাণহানির পরিমান বেশি ঘটেছিল বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এরই মধ্যে সিডরের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দুর্গত এলাকাগুলোতে নির্মান হয়নি পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার ও বেড়িবাধ। অথচ এখনও প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বেড়িবাধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকাবাসি। তবে বিভিন্ন দুর্যোগের পর ইউনিয়ন পরিষদ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘের মহড়া প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষন নিয়ে অনেকে সচেতন হয়েছেন দুর্যোগ সম্পর্কে।
বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। তবে বিদ্যমান জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও ৩ শতাধিক সাইকোন শেল্টারের প্রয়োজন রযেছে।
শরণখোলা উপজেলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের মো. রতন খান (৩৫) সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখছি আমাদের নদীর পার ভেঙ্গে গ্রামের অনেকের বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন নদী প্রায় আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। নদীর ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে আমরা বসবাস করতে পারব না।
একই উপজেলার রায়েন্দা গ্রামের আব্দুস সালাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমার বাড়ি থেকে সাইকোন শেল্টার অনেক দূরে, দুর্যোগের সময় গ্রামের অনেক লোক আশ্রয় নিতে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অনেকেই আবার বাড়িতে ফিরে যায়। সিডরের সময় সাইকোন শেল্টারে জায়গা না পেয়ে বাড়ি ফেরার সময়ও মারা যায় অনেকে।
রায়েন্দা গ্রামের আব্দুর রব চোকিদার (৫৫) সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সিডর ও আইলার পরে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে সরকার আমাদের ভেড়িবাধ ও প্রয়োজনীয় সাইকোন শেল্টার তৈরি করে দিবেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। ভেড়িবাধ নির্মানের নামে শুধু ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের আই ওয়াশ করা হচ্ছে।
মো. ইমরান হোসেন, হারুন মুন্সি, মো. কুদ্দুস গাজীসহ আরও অনেকে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সিডরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল সাউথখালী ইউনিয়ন। কিন্তু এখানে গ্রাম রক্ষার জন্য ৩৫-১ পোল্ডারের যে বাধ সেটি এখনও সঠিকভাবে নির্মান হয়নি। পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টারও গড়ে ওঠেনি এখানে।
শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের এলাকায় পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার নেই। যা আছে তাতে সংকুলান হয় না। আরও সাইকোন শেল্টার দরকার। দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় শুধু প্রশিক্ষণ নিলে হবে না। প্রশিক্ষনের পর সরঞ্জামাদিও দরকার। আরও বেড়িবাধ ও সাইকোন সেল্টার প্রয়োজন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ মহড়া প্রকল্পের প্রশিক্ষক মো. নুরনবী আলম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সিডর ও আইলার পর থেকে সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে উপকুলীয় এলাকাবাসিকে দুর্যোগকালিন প্রস্তুতি ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন দেয়া হয়। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা যে কমিটিগুলো আছে সেগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি,। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় দৃর্যোগ বিষয়ে সচেতনতামুলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এখন যেকোন সময় দূর্যোগের বিষয়ে অবহিত করলে মানুষজনকে সরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সাইকোন শেল্টার পর্যাপ্ত নয়, আরও হলে ভাল হয়। এখনও কিছু কিছু কাজ চলছে। এব্যাপারে সরকারের আরও পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাগেরহাটের ৯ টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাধ নির্মান কাজ চলমান রয়েছে।