সোমবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হেপীর প্রেমে পড়ে সবর্স্ব হারালেন কয়েস
হেপীর প্রেমে পড়ে সবর্স্ব হারালেন কয়েস
মো. আবুল কাশেম,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (১৪ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.০০মি) প্রেমিকাকে গোপনে বিয়ে করে সর্বশান্ত হয়েছেন বিশ্বনাথের তরুণ ব্যবসায়ী কয়েছ মিয়া। জাল তালাকনামা তৈরী করে কনেকে লন্ডনী বরের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে স্ত্রীকে প্রধান আসামী করে কয়েছ মিয়ার দায়ের করা মামলায় হাজতবাস করেছেন কাজী। এঘটনায় গোঠা উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, স্বামীর কাছে থেকে তালাক এবং মোহরানা ও ভরণ পোষণের টাকা পাওয়ার দাবিতে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেছেন কয়েছ মিয়ার স্ত্রী হেপী বেগম।
জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাউসি গ্রামের জিলু মিয়ার পুত্র ও বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের আল-হেরা মার্কেটস্থ ‘বিডি আনলকার’ এর সত্ত্বাধিকারী কয়েছ মিয়া (২৫)’র সাথে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের আটঘর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আকিক মিয়ার মেয়ে হেপী বেগম (২৩) এর। একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর বিশ্বনাথের কালিগঞ্জবাজারস্থ দেওকলস ইউনিয়ন মুসলিস নিকাহ্ ও তালাক রেজিষ্ট্রার মো. আছাদউদ্দিন এর কার্যালয়ে নিকাহনামা রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কয়েছ মিয়া ও হেপী বেগম (নিকাহ রেজিষ্ট্রার নং-৩৫/২০১৫ইং, বহি নং- ০১/২০১৪ইং, পৃষ্ঠা নং-৫৬)। নিকাহনামা সম্পাদনের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা (কয়েছ-হেপী) শুরু করেন দাম্পত্য জীবন। কিন্ত উভয়ের পরিবারের অজান্তে এই বিয়েটি সম্পন্ন না হওয়ায় বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে মেলামিশা করতে থাকেন কয়েছ ও হেপী।
চলতি বছরের ১মার্চ হেপী বেগম তার পিত্রালয়ে চলে গিয়ে স্বামী কয়েছের সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে কয়েছ জানতে পারেন তার স্ত্রী হেপী বেগমের ফুফাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী জনৈক সুয়েব মিয়া দেশে এসে ফুসলিয়ে বিদেশে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হেপীকে বিয়ে করার পায়তারা শুরু করেন এবং অবৈধ ভাবে একটি জাল তালাকনামা তৈরীর মাধ্যমে ২৮ মার্চ জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুরস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে হেপী বেগমের সাথে প্রবাসী সুয়েব মিয়ার বিয়ের আয়োজন করা হয়। এমতাবস্থায় কয়েছ মিয়া তার স্ত্রী হেপী বেগমকে উদ্ধারের জন্য সুনামগঞ্জ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সার্চ্ ওয়ারেন্টের নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর আদালতে উপস্থিত হয়ে হেপী বেগম জানান-তাকে কেউ জোর করে আটকে রাখেন নাই। তাই তিনি নিজ জিম্মায় যেতে চায়। তাই আদালত তাকে নিজ জিম্মায় যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেন এবং ওই মামলা (জগন্নাথপুর বিবিধ মোকদ্দমা নং-১৩/১৮) থেকে অভিযুক্তদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেন। অন্যদিকে, বিয়ে বন্ধের জন্য গত ২১ মার্চ সিলেট সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত সুয়েব মিয়ার সাথে হেপী বেগমের বিয়ের আয়োজন না করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। ফলে ভঙ্গ করা হয় ওই বিয়ে। এরপর কয়েছ মিয়া বাদি হয়ে তার স্ত্রী হেপী বেগমকে জাল তালাকনামা তৈরীর মাধ্যমে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পায়তারার অভিযোগে ৮জনকে অভিযুক্ত করে গত ২৪ এপ্রিল সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (বিশ্বনাথ সি.আর মামলা নং-১৩৩/২০১৮ইং)। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়-হেপী বেগম, তার ভাই রুমেল মিয়া ও জুয়েল মিয়া, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুয়েব মিয়া, বিশ্বনাথ ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিষ্টার কাজী দেলওয়ার হোসাইন, বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মৃত ছয়ফুল আলমের পুত্র লিটন মিয়া, মৌজপুর গ্রামের মখলিছুর রহমানের পুত্র মুকিতুর রহমান এবং কারিকোনা গ্রামের জহুর আলীর পুত্র আব্দুল খালিক।
দায়েরকৃত মামলায় বাদি কয়েছ মিয়া উল্লেখ করেন, তার সাথে হেপী বেগমের যে বিয়ের কাবিনমানা হয়েছিল তাতে হেপী বেগমকে তালাক প্রদানের কোন ক্ষমতা প্রদান করেন নাই কয়েছ। কিন্ত আসামীদের যোগসাজসে প্রতারণামূলকভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে গত ১ মার্চ একটি কথিত তালাক সম্পাদন করেন কাজী দেলওয়ার হোসাইন। এরপর ডাকযোগে ওই তালাকনামাটি বাদির (কয়েছ) হাতে পৌছে এবং তিনি লোকমুখে জানতে পারেন অভিযুক্ত লিটন মিয়ার বাড়িতে গত ১৯ এপ্রিল সুয়েব মিয়ার সাথে হেপী বেগমের এ্যাংগেসম্যান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদটি পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে বাঁধা দেন কয়েছ। এতে উত্তেজিত হয়ে কয়েছ মিয়াকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন অভিযুক্ত রুমেল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও লিটন মিয়া। কয়েছ মিয়ার দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১৪ জুলাই আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রেরণ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)’র এ.এস.আই জিতেন্দ্র মীতৈ। তদন্তে ওই তালাকনামাটি জালিয়াতি করা হয়, যা প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এ.এস.আই জিতেন্দ্র মীতৈ। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ্যাংগেসম্যান অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বাদিকে মারধর করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি আদালত গ্রহন করেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর গত ২০ অক্টোবর অভিযুক্ত কাজী দেলওয়ার হোসাইনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়।
এদিকে, কয়েছ মিয়ার কাছে থেকে তালাক এবং মোহরানা ও ভরণ পোষণের টাকা পাওয়ার দাবিতে সুনামগঞ্জ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে গত ১৬ অক্টোবর মামলা দায়ের করেছেন কয়েছ মিয়ার স্ত্রী হেপী বেগম (মোকদ্দমা নং-১৭/২০১৮ইং)। মামলার এজাহারে হেপী বেগম উল্লেখ করেন, তিনি বিশ্বনাথ কলেজে এইচ.এস.সি অধ্যয়নরত অবস্থায় মোবাইল ফোন মেরামত করার সূত্র ধরে কয়েছ মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তাকে ভূল বুঝিয়ে সাদা কাগজে দস্তগত নিয়ে এথমে একটি এফিডেভিট ও পরবর্তীতে একটি নিকাহ্নামা করেন কয়েছ। তিনি (হেপী) কোন উপায় না পেয়ে এই বিয়ে তিনি মেনে নেন এবং বিয়ের পর তাকে (হেপী) নানা ভাবে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করেন কয়েছ। তাই অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজ পিত্রালয়ে চলে যান হেপী। এমতাবস্থায় কয়েছ মিয়ার কাছ থেকে তালাক পাওয়ার দাবি এবং মোহরানার ৩লাখ টাকা ও ইদ্দতকালীন সময়ে মাসিক ১০হাজার টাকা হারে ভরণ পোষনের পাওয়ার দাবি জানান হেপী বেগম।
কয়েছ মিয়া জানান, ২০১৩ সালে হেপী বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী আপন খালাতো বোনের সঙ্গে কয়েছ মিয়ার বিয়ে ঠিক করেন তার পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে বিয়েতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান হেপী। তাই তাকে ছাড়া যদি অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করেন তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে কয়েছকে হুমকি দেন হেপী। এমন কি হারপিক খাওয়ার ও ফ্যানের সঙ্গে নিজ গলায় উড়না পেছিয়ে আত্মহত্যার করার অভিনয় করে বিভিন্ন সেলফি তুলে তা ওয়ার্সআপ-ইমু’র মাধ্যমে প্রেরণ করেন কয়েছের কাছে। একপর্যায়ে খালাতো বোনকে বিয়ে না করে প্রেমিকা হেপী বেগমকে গোপনে কাবিন রেজিষ্ট্রারীর মাধ্যমে বিয়ে করতে বাধ্য হন বলে জানান কয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে তিনি তার স্ত্রী হেপী বেগমকে নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের একটি বাসায় বসবাস করেন। কিন্ত কয়েক মাস পর হেপী নিজ পিত্রালয়ে গেলে তাকে পরিবারের সদস্যরা মারধর করে ঘরে আটকে রাখেন এবং একটি ভূয়া তালাকনামা তৈরী করে ফুফাতো ভাই সুয়েব মিয়ার কাছে তাকে (হেপী) বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কয়েছ বলেন, ‘আমি হেপী-কে বিয়ে করে আমার জীবন নষ্ট, আমার ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হারিয়ে গেছে। আমাকে পদে পদে হয়রানী হতে হচ্ছে। আমার দু’টি দোকান প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। তারা (হেপীর পরিবার) অভিযোগ দিয়ে ফোন আনলক করা যে সার্ভার রয়েছে তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং আইএমই নাম্বার দিয়ে আমার মোবাইল (আইফোন সেভেন প্লাস) ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। আমার ফোন ব্লক করার কারণে আমি সার্ভার ভেরিফাই করতে না পারায় সার্ভার ও পেপাল একাউন্ট ব্লক হয়ে গেছে। ফলে আমি প্রায় ৬৫লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।’ তিনি বলেন ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমি শুধু আমার স্ত্রীকে ফেরত চাই’।
এব্যাপারে হেপী বেগমের ভাই রুমেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, কয়েছ মিয়া একজন নারী লোভী প্রকৃতির লোক। আমাদের অজান্তে কয়েছ আমার বোনের সাথে প্রতারণা করে বিয়ের কাবির করেছে। ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে ঠিক করার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। আমার বোন (হেপী) কয়েছের সাথে আর সংসার করতে চায় না।
তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে সে (কয়েছ) আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। ইতিমধ্যে আদালত একটি মিথ্যা অভিযোগ থেকে আমাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া সে (কয়েছ) আমার বোনের নামে ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিভিন্ন খারাপ ছবি পাঠাচ্ছে।