বুধবার ● ৩১ অক্টোবর ২০১৮
প্রথম পাতা » গুনীজন » মোরগের ঘরে ঠাই হয়েছে একজন মুক্তিযোদ্ধার
মোরগের ঘরে ঠাই হয়েছে একজন মুক্তিযোদ্ধার
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: (১৬ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৭মি) দেশমাতৃকার টানে নিজের জীবন বাজী রেখে একাত্তরের রণাঙ্গণে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন যে লড়াকু তালেব আলী, ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতা, পড়তি বেলায় এসে তাঁর ঠাই হয়েছে হাঁস-মোরগের ঘরে। সিলেটের বিশ্বনাথে জন্ম নেয়া দেশের এই সূর্যসন্তান জীবনযাপন করছেন খুবই মানবেতরভাবে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের তাতিকোনা গ্রামের মৃত ইছব আলীর পুত্র তালেব আলী বর্তমানে বড়ভাইয়ের পরিবারে অনেকটা নিঃসঙ্গ বসবাস করছেন। কেউ খবর রাখছে না এই মুক্তিযোদ্ধার!
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা তালেব আলীর জন্ম ১৯৩২ সালের ১২ মে (জাতীয়পরিচয়পত্র অনুযায়ী) উপজেলার তাতিকোনা গ্রামে। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকার টানে ঝাপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিসংগ্রামে। মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন ৫নং সেক্টরের ভুলাগঞ্জ হতে ছাতক পর্যন্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করে দেশকে হায়েনামুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এই সাহসী সন্তান। তাঁর মুক্তিবার্তা নং ০৫০১০৯০০৩২। গেজেট নং ১৪৬৩। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাড়িতে ফিরে দু’দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও টিকেনি তার সংসার। বর্তমানে বড়ভাই তৈয়্যব আলীর পরিবারের সাথে বসবাস করছেন তিনি।
সরেজমিন এই মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে গ্রামের বাড়ি উপজেলার তাতিকোনা গ্রামে গেলে দেখা যায়, বড়ভাই তৈয়ব আলীর পাকা বসতঘরের একটি নোংরা ও দুর্গন্ধময় কক্ষে ময়লা বিছানায় শুয়ে আছেন তালেব আলী। যে কক্ষটিকে হাঁস-মোরগের বাসস্থান হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। সালাম দিতেই বহু কষ্টে উঠে বসলেন। কথা হল স্ত্রী-সন্তানহীন জাতির এই সূর্যসন্তানের সাথে। জানালেন, ‘আগে বাড়ির পূর্ব দিকের একটি ঘরে বসবাস করতাম। একবার ডাকাতের কবলে পড়ে ভয়ে বড়ভাইয়ের বসতঘরে চলে আসি।’ তাই বলে হাঁস-মোরগের ঘরে কেন?-এমন প্রশ্নে তালেব আলী বলেন, ‘আর কোনো কক্ষ খালি না থাকায় আমিই স্বেচ্ছায় এই ঘরটিকে বেঁচে নিই। নিজের একটি ঘরের জন্যে অনেকের কাছে ছুটে গিয়েছি। কোনো সাড়া পাইনি। আমার নিজস্ব জায়গা আছে। সরকার যদি সেখানে একটি ঘর নির্মাণ করে দিত, তাহলে শেষ বয়সে অন্ততঃ নিজের ঘরে বসবাস করতে পারতাম’।
তালেব আলীর বড়ভাই তৈয়্যব আলী বলেন, সে জোর করেই ওই ঘরে থাকছে। তবে, আমরা তাকে ঠিকমতই দেখাশোনা করছি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওয়াহিদ আলী বলেন, বড়ভাইয়ের পাকা বসতঘরে তো তালেব আলীর জায়গা পাবার অধিকার আছে। একটি ভাল কক্ষে অথবা যে কক্ষে বর্তমানে আছে, সেটাকে বাস উপযোগী করে তাকে ভালভাবে জীবনযাপন করতে দেয়া তার পরিবারের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে আমি সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব আলীর বাড়ী সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।