বৃহস্পতিবার ● ১ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনের ৬ দস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ
সুন্দরবনের ৬ দস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: (১৭ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.৫৪মি) আর কখনও দস্যুতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না সুন্দরবনে । সুন্দরবন থাকবে দস্যুমুক্ত। যেখানে জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ আহরণ করবে। এরপরেও কেউ যদি সুন্দরবনে দস্যুতা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এপর্যন্ত যারা আত্মসমর্পন করেছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য সহায়তা করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ছয়টি বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এসব কথা বলেন। এর আগে গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগেরহাটে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করেন।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হবার ঘোষনা অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের সর্বশেষ ৬টি বাহিনী প্রধানসহ ৫৪ জন বনদস্যু ৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ হাজর ৩৫১ রাউন্ড গোলাবারুদ স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলো। আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যু বাহিনীগুলো হলো, সত্তার বাহিনীর প্রধান মো. আ. সাত্তার মল্লিকসহ তার বহিনীর ১২ জন, শরিফ বাহিনী প্রধান মো. করিম শরীফসহ ১৭ জন, সিদ্দিক বাহিনীর প্রধান মো. মনিরুজ্জামান মুকুলসহ ৭জন, আল-আমিন বাহিনীর প্রধানস মো. আল-আমিনহ ৫জন, আনারুল বাহিনর প্রধান মো. আনোয়ারুল ইসলাম গাজীসহ ৮জন ও তৈয়ব বাহিনীর প্রধান তৈয়বুর মোড়লসহ ৫জন। অনুষ্ঠানে ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণ করা সুন্দরবনের ৯টি বনদস্যু বাহিনীর ৮৪ জন ও সর্বশেষ আত্মসমর্পণ করা ৬টি বাহিনীর ৫৪ জন বনদস্যু সদস্যে হাতে ১ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের ২৬টি বাহিনীর ২‘শ ৭৪ জন সদস্য আত্মসমর্পন করেন। আত্মসমর্পনের সময় তারা ৪‘শ ৪টি অস্ত্র ও ১৯ হাজার ১‘শ ৫৩টি গোলা বারুদ জমা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় র্যাব অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে ৫‘শ ৭ জন দস্যুকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫‘শ ৫৬টি অস্ত্র ও ৩৩ হাজার ৩‘শ ২৪ টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব। এবং সুন্দরবনে র্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত ১‘শ ৩৫ জন দস্যু নিহত হয়েছেন। এসব বনদস্যু সুন্দরবনসহ উপকুলীয় এলাকার জেলেদের অত্যাচার নির্যাতন ও মুক্তিপন আদায় করতো।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মসমর্পনকৃত দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। এসময় ছাত্তার বাহিনীর প্রধান ছাত্তার ও বনদস্যু নাসিম শেখের মেয়ে নাসরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলেন। তাদের দু:খ দুর্দশার কথা শোনেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আত্মসমর্পনকৃত দস্যুদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়া যেসব মামলা রয়েছে সেসব মামলা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণকে নির্দেশ দেন। এছাড়াও আত্মসমর্পনকৃত দস্যুদের মধ্যে যাদের ঘর নেই তাদেরকে ঘর এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার হাবিবুন্নাহার, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসাইন মিয়া, বিজিবি’র আঞ্চলিক কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খালেদ আল মামুন, র্যাব এর মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ, বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, র্যাব-৮ এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি আতিকা ইসলাম, র্যাব-৬ এর সিও উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজিব, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, কেএমপি কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় পুলিশ ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, আত্মসমর্পনকারী দস্যু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে, সুন্দরবন সংলগ্ন ৪টি বিশেষ র্যাব ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে করে আর কেউ এই বনে দস্যুতার সাহস না দেখায়। দস্যুদের পৃষ্ঠপোষকদেরও সাবধান হয়ে যাবার পরামর্শ দেন তিনি।
র্যাবের তৎপরতায় ২০১৫ সালের ৩১ মে প্রথম বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে ৯ সহযোগিসহ দুর্র্ধষ বনদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’ প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টার আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ত্রেমে মানজার বাহিনী প্রধান মানজার সরদার, মজিদ বাহিনী প্রধান তাকবির বাগচী মজিদ, বড় ভাই বাহিনী প্রধান আবদুল ওয়াহেদ মোল্লা, ভাই ভাই বাহিনী প্রধান মো. ফারুক মোড়ল, সুমন বাহিনী প্রধান জামাল শরিফ সুমন, দাদা ভাই বাহিনী প্রধান রাজন, হান্নান বাহিনী প্রধান হান্নান, আমির বাহিনী প্রধান আমি আলী, মুন্না বাহিনী প্রধান মুন্না, ছোট শামছু বাহিনী প্রধান শামসুর রহমান, মানজু বাহিনী প্রধান মো. মানজু সরদার ও সূর্য বাহিনী প্রধান সূর্যসহ ২৬টি বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। ওই ২৬টি বনদস্যু বাহিনীর ২৭৪ সদস্য ৪০৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৯ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।