শুক্রবার ● ২ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
ময়মনসিংহ প্রতনিধি :: (১৮ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সকাল ৮.৪২মি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ১২ তম বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহ জেলাকে উন্নীত করার পর প্রথমবারের মতো শুক্রবার (০২ নভেম্বর) ময়মনসিংহ সফরে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফরের মাত্র একদিন আগে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) চূড়ান্ত হয় উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনযোগ্য এসব প্রকল্প। নতুন আধুনিক বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ও দফতরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ বিভাগের চারটি জেলার মোট ৬৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সেই সংখ্যা বেড়েছে। অতিরিক্ত আরও ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনকৃত প্রকল্পের মতো ভিত্তিপ্রস্তরর স্থাপনযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যাও বেড়েছে। আরও ১২টি বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে এ অঞ্চলের সবখানে। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ময়মনসিংহ নগরীকে সাজানো হয়েছে নতুন করে। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিকেল ৩টায় স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এ ব্যাপারে বলেন, ‘সভাকে সফল করতে সব ধরনের আয়োজন প্রস্তুতি সম্পন করা হয়েছে।’
ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীর সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী একান্ত সচিব-১ কাজী নিশাত রসুল স্বাক্ষরিত এক সফরসূচিতে এ বিষয়টি জানা গেছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের ৮ম বিভাগ হিসেবে ময়মনসিংহকে উন্নীত করার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন ময়মনসিংহবাসী। এরপর সম্প্রতি ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করে গেজেট প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার আনন্দে উদ্বেলিত নগরবাসী তাঁর আগমনের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে।
যদিও চলতি বছরের ৫ এপ্রিল, ১২ এপ্রিল ও ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফরসূচির কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করা হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে বিভাগীয় শহরের সর্বত্রই এখন সাজ সাজ রব। বেশ কিছু দিন ধওে শহরের প্রতিটি সড়ক সংস্কার ও মেরামত চলছে জোরেশোরে। একদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নিজের প্রার্থিতা প্রকাশ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলছে বর্ণিল তোরণ নির্মাণ ও দেয়াল লিখনের কাজ।
ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সড়ক-মহাসড়ক ও শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ছেয়ে গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলীয় নেতাদের রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন। সেইসাথে প্রতিদিনই নগরীর সার্কিট হাউসের জনসভাস্থল পরিদর্শন করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি নানা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তাকর্তাবৃন্দ।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান জানান, দেশের অষ্টম বিভাগ স্থাপনের পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের খবর শুনে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ময়মনসিংহের মানুষ। এদিন বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রীর।
জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ সফরকালে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে নতুন আধুনিক বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ও দফতরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ বিভাগের চারটি জেলার মোট ৬৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সেই সংখ্যা বেড়েছে। অতিরিক্ত আরও ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনকৃত প্রকল্পের মতো ভিত্তিপ্রস্তরর স্থাপনযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যাও বেড়েছে। আরও ১২টি বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফরের মাত্র একদিন আগে বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) চূড়ান্ত হয় উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনযোগ্য এসব প্রকল্প।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আলম রিপন জানান, আগে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন মিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা ছিলো ১৪৮টি। এখন সেটি ১৯৫ এ গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ১০১টি উন্নয়ন প্রকল্প আর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ৯৪টি প্রকল্পের।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা ছিলো ২৮টি। পরবর্তীতে আরও তিনটি প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ময়মনসিংহ এফএম রেডিও উদ্বোধন, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ময়মনসিংহ সদর এবং ত্রিশাল উপজেলা।
নেত্রকোনা জেলাতেও বৃদ্ধি পাওয়া তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে-মোহনগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা আটপাড়া ও খালিয়াজুড়ি।
শেরপুর জেলার ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প এখন বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৪৫টি। এগুলো হলো- নালিতাবাড়ি উপজেলা পরিষদ ভবন, নালিতাবাড়ি উপজেলায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, একই উপজেলার রাজনগর এলাকায় কৃষক সেবাকেন্দ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, একই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৮টি ডাগওয়েল নির্মাণ, তারাকান্দা রাবার ড্যাম, উরফা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, গণপদ্দী ইউনিয়নে এসইএসডিপি ভবন, নকলা-নালিতাবাড়ি ফোরলেন সড়ক, চন্দ্রকোণায় পুলিশ ফাঁড়ি, ধনাকুশা বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন, বানেশ্বরদী দিশারী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, ডেবুয়াচার সোলারচালিত ডাগওয়েল, চন্দ্রকোণা থেকে ডোয়াতলা পর্যন্ত সড়ক, নকলা পৌরসভার শাহরিয়া মাদ্রাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, চরমধুয়া সোলারচালিত ডাগওয়েল, স্থল বন্দর সংলগ্ন সড়ক, রূপনারায়ণকুড়া এইচএসডিপি স্কুল, রূপনারায়ণকুড়া নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়, রূপনারায়ণকুড়া ধারা থেকে পাইকাতলী হয়ে কদমতলী পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক, যোগানিয়া ফ্লাড সেন্টার কাম স্কুল নিম্ন মাধ্যমিক ভবন, বালুঘাটা ব্রিজ, বালুঘাটা বাজার থেকে রসুলপুর বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলজিইডি সড়ক, পাগলাজানী ও দক্ষিণ নাকশির দুইটি প্রাইমারি স্কুলকে হাইস্কুলে রূপান্তর, বাঘবেড় রাবার ড্যাম, বাঘবেড় চেল্লাখালি নদী খনন, উত্তর রাণীগাঁও থেকে গাজীরখামার মেইন রোড পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলজিইডি সড়ক স্থাপন, নালিতাবাড়ি পৌর ভবন ও নাজমুল স্মৃতি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ।
ময়মনসিংহ বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যা অটুট থাকলেও বেড়েছে ময়মনসিংহ জেলায় মাত্র একটি। সেটি হচ্ছে-নেপ ময়মনসিংহের ১৫ তলা ডরমিটরি কাম রেস্ট হাউজ ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
জামালপুর জেলায় ১৬টি প্রকল্পের স্থলে এখন উদ্বোধনযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যা ১৯টি। এগুলো হলো- বকশীগঞ্জ উপজেলার জব্বারগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ ভায়া মাদারের চর সড়কে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদের ওপর ৫৮৫ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ, জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্ত করণ ও মজবুতিকরণ (ব্রক্ষপুত্র সেতু এপ্রোচসহ) প্রকল্প ও মেলান্দহ উপজেলায় ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট।
জামালপুরের মতো শেরপুর জেলাতেও প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনযোগ্য প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে এখন হয়েছে ১৪টি। বৃদ্ধি পাওয়া আটটি উন্নয়ন প্রকল্প হলো-অষ্টমীতলা থেকে কানাসাখোলা প্রশস্তকরণ, মরিচপুরান টিটিসি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, চরমধুয়া মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, দুধেরচর ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল, সূর্যনগর কলসপাড় মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর, নালিতাবাড়ি উপজেলা কমপ্লেক্স ও কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় কৃষি ভবন, শ্রীবর্দী-ভায়াডাঙা-ঝিনাইগাতী সড়ক এবং নালিতাবাড়ী-বরুয়াজানি-বাঘাইতলা-হালুয়াঘাট সড়ক।
ময়মনসিংহ জেলা গণফোরাম সভাপতি ও জেলা মানবাধিকার সভাপতি এএইচএম খালেকুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া অনেক প্রতিশ্রুতি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। নবগঠিত বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে চায় এই অঞ্চলের মানুষ।’
জেলা সিপিবির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্কিট হাউস মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের উন্নয়নে আরও নতুন নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দেবেন। বিগত দিনের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নও দেখতে চাই।’
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি আনিসুর রহমান খান বলেন, ‘নবগঠিত বিভাগের উন্নয়নে এবং বিভাগীয় শহরকে সাজানোর জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।’
এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ময়মনসিংহবাসীর প্রধান দাবি হচ্ছে ঢাকা ময়মনসিংহ ডাবল রেললাইন স্থাপন, বিমান বন্দর ও অর্থনৈতিক জোন প্রিিতষ্ঠা, ময়মনসিংহ হাসপাতালকে ২ হাজার শয্যায় উন্নীতকরণ ও সংষ্কৃতির নগরী হিসেবে ময়মনসিংহকে গড়ে তোলা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও শিক্ষাবোর্ডসহ দাবিগুলো এর আগেই প্রধানমন্ত্রী পূরণ করায় এবার হৃদয়ের বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ময়মনসিংহবাসী।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জনতার ঢল নামবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদের দিক নির্দেশনা দেবেন। এ জনসভায় কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষাধিক লোক সমাগমের টার্গেট রয়েছে আমাদের বলে আরও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ সরকার ১৭৮৭ সালের ১ মে ময়মনসিংহ জেলা এবং ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠার ১৮৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহকে বাংলাদেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।