মঙ্গলবার ● ৬ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোট : রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রস্তাব
আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বাম গণতান্ত্রিক জোট : রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রস্তাব
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২২ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬.৪৪ মি) আজ ৬ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক সংকট উত্তরণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে সংলাপে অংশ নিচ্ছে আটটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। সংকট উত্তরনে বাম গণতান্ত্রিক জোট এর উত্থাপিত প্রস্তাব সমূহ হুবহু তুলে ধরা হল।
৬ নভেম্বর-২০১৮
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা
মন্ত্রীবর্গ ও সম্মানিত নেতৃবৃন্দ
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারার আটটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’কে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রীক সংকট উত্তরণে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি সংলাপে উপস্থিত আপনার সরকারের মন্ত্রীবর্গ ও জোটের শরীকদলের নেতৃবৃন্দকে। জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবী ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ’৭১ এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্মের নামে সহিংস জঙ্গিবাদী তৎপরতা মোকাবেলায় আপনার সরকারের, বিশেষভাবে আপনার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আপনার জনসভায় নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলায় আপনার প্রাণনাশের চেষ্টা, আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ অসংখ্য মানুষের হতাহতের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ২১ আগস্টের এই বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাকান্ডের বিচারসহ আমরা সকল রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচারের দাবী জানিয়ে আসছি।
আপনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হচ্ছে উন্নয়ন। আমরা বিশ্বাস করি জনসম্পৃক্ত ও প্রাণ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন তৎপরতার সাথে শক্তিশালী গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপযুক্ত সমন্বয় না হলে সেই উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। শেষ পর্যন্ত মানুষ তার সুফলও পেতে পারে না। এটা স্পষ্ট যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের সাথে সমান্তরাল ভাবে দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির উন্নয়ন ঘঠছে না, বরং নানা দিক থেকে মারাত্মক অধঃগতি ঘটে চলেছে। ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনের পর এই পরিস্থিতির কেবল ক্রমাবনতি ঘটে চলেছে। আপনি বলেছিলেন, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন; সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রাখার নির্বাচন। কিন্তু দেশ সেভাবে এগুইনি। এই নির্বাচনের পর অবাধ, মুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশে মানুষ ভোটাধিকার থেকে ধারাবাহিকভাবে বঞ্চিত হয়ে আসছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তার সর্বশেষ নজির। মানুষের যে ভোটাধিকারের জন্য আপনার দল ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছিল আজ সেই আওয়ামী লীগ জনগণের অবাধ ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারছেনা। আমাদের বিবেচনায় দশকের পর দশক জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াই এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরাজয়।
গত ক’বছর ধরে নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর গণ-অনাস্থা কেবল বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। সরকার ও সরকারী দলের রাজনৈতিক ইচ্ছা অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে যেয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব ও মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছে। নানা বিতর্কিত ভূমিকার কারণে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বাস্তবে একটা গণহতাশা তৈরী হয়েছে। জনগণের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যে দলই ক্ষমতায় থাকে নির্বাচন কমিশন তাদের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হয়।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারি দল ও জোটের প্রার্থীরা যখন সারাদেশে ব্যাপক সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ, গণমিছিল, ‘শো-ডাউন’ অব্যাহত রেখেছেন তখনও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন অব্যাহত রয়েছে। মানুষের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। সাতক্ষীরায় বাম জোটের নেতা কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় হয়রানি চরমে উঠেছে। ১ নভেম্বর সাতক্ষীরার তালায় বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পূর্ব নির্ধারিত জনসভা মঞ্চ পুলিশ কর্তৃক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাপর বিরোধী দলের কর্মসূচীর মত বাম জোটের সাধারণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতেও নানাভাবে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন অভিমুখে বাম জোটের মিছিলকে যেভাবে আক্রমন এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আহত করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তা আর দেখা যায়নি।
এই অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের বড় অংশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত গভীর উদ্বেগ ও আশংকা রয়েছে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা, তাদের ভোট যথাযথভাবে গণনা হবে কিনা, নির্বাচনের আগে ও পরে আবারও তারা কোন সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখী হবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন মানুষের মধ্যে রয়েছে। অতীতে এসব নিয়ে আপনারও তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনি নিশ্চয় একমত হবেন যে, জাতীয় পর্যায়ের ভোট যত এগিয়ে আসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে অনাকাংখিত সহিংসতার আশংকায় নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়তে থাকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আগামী ৮ নভেম্বর-২০১৮ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা হবার কথা। অথচ দেশে এখন পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী হয়নি। সরকারি দল ও জোট যেসব সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার ভোগ করছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলো ও তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত। বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী সমূহকেও নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। গায়েবী মামলা রুজু করে বিরোধীদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের পাশাপাশি পুলিশের বেপরোয়া গ্রেফতার বাণিজ্যেরও সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ও প্রতিদ্বন্দ্বি দলসমূহ ও তাদের প্রার্থীদের মধ্যে যে ‘লেবেল প্লেয়িং ফিন্ড’ বা অধিকার ও সুযোগের সমতার কথা বলা হচ্ছে, অভিজ্ঞতা বলছে সংসদ বহাল থাকলে বাস্তবে তা কার্যকরি হবে না। তাছাড়া সংসদ সদস্য হিসাবে প্রশাসনসহ সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংসদ সদস্যরা যে কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের বিশেষ বাস্তবতায় বিগত ৯টি সংসদ নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়েছে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে।
আপনি নিশ্চয় এই বিষয়ে একমত হবেন যে, গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা টাকার খেলায় পর্যবসিত হয়েছে। এ কারণে সৎ, সংগ্রামী, নিবেদিতপ্রাণ, পোড়খাওয়া রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা আজ কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। বানের পানির মত নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিত্তবানেরা, এমনকি দাগী অপরাধীরাও। এজন্যে জাতীয় সংসদে রাজনীতিকদের পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে ব্যবসায়ী ও বিত্তবানেরা জেঁকে বসেছে। তাছাড়া নির্বাচনে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, পেশী শক্তি, প্রশাসনিক প্রভাব প্রভৃতি বড় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ব্যবস্থা চলতে দিলে এবং এই ব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া জাতীয় সংসদ আগামীতে পুরোপুরি বিত্তবানদের দখলেই চলে যাবে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য আমরা ভোটের সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাবও করে আসছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমরা এই বিষয়ে অবগত যে, কার্যকরি সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচন সামনে রেখে বিদায়ী সরকার নির্বাচনকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং তাদের দায়িত্ব কেবল রুটিন কাজেই সীমিত থাকে। পরিতাপের বিষয় যে, এই কার্যকরি ও দায়িত্বশীল সংসদীয় ব্যবস্থা আমরা এখনও প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হচ্ছে দলীয় সরকারগুলোর নিরংকুশ স্বৈরতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসন, সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার গুরুতর ঘাটতি, অবিশ্বাস, সন্দেহ প্রভৃতি নানা কারণে বাংলাদেশে এখনও দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সুযোগ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলের মধ্যে অনাকাংখিত বিরোধ-বৈরীতা এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই জেনারেল এরশাদের সাময়িক স্বৈরতন্ত্রের উচ্ছেদের পর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল। এই বাস্তবতায় ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে আপনাকেও মরণপন সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এই একই কারণে আমরা দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনের প্রস্তাব করে আসছি। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটি শক্তিশালী ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে না পারা পর্যন্ত আগামীতেও নির্বাচকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের প্রয়োজন থেকে যাবে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা বলতে পারি গণতান্ত্রিক ধারায় সক্রিয় রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলাপ আলোচনা করে সংবিধানের মধ্যেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করা সম্ভব। সংবিধানের মধ্যেই প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের ধারাও রয়েছে। সংসদ যেহেতু এখনও বহাল রয়েছে এবং সংসদে আপনাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশী সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে এই জন্যে আপনারা প্রয়োজনীয় সংশোধনীও নিয়ে আসতে পারেন। বর্তমান সামগ্রীক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিসমূহ আবারও উল্লেখ করছি :
ক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে সব দল ও সমাজের অপরাপর মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে।
খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
গ) জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
ঘ) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজিনির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে।
ঙ) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম চালুর পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।
চ) রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে নাশকতা ও বিশৃংখলার কারণ দেখিয়ে দেশব্যাপী যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। এসব মামলায় যে গণ-হয়রানি ও গ্রেফতার করা হচ্ছে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। ৫৭ ধারায় রুজু করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
ছ) নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার, মাদক নির্মূল ও জঙ্গী সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে।
জ) নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, মুক্ত ও অনুসদ্ধানী সাংবাদিকতার পরিপন্থী ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও সম্প্রচার বিধিমালার অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে।
নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা হাজির করেছি। তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে আমরা আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি :
১। এলাকাভিত্তিক বর্তমান প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পাশাপাশি ‘জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করা।
২। নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা, প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে ৩ লক্ষ টাকা ও জামানত ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।
৩।নির্বাচনে পেশীশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি ও সাম্প্রদায়িক প্রচারনা রোধ কল্পে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাখা।
৫। ‘না’ ভোটের বিধান চালু করা।
৬। আরপিও’র দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক শর্ত বাতিল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনের জন্য ১% ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল করা।
৭। অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভীতিহীন নিরাপদ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের আগে-পরে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীর কার্যকরি ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা।
অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচনের উপরোক্ত দাবী ও প্রস্তাবাবলীর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিম্নোক্ত বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পদক্ষেপসমূহকেও আমরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
ক) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ২য় ও ৮ম সংশোধনীসহ সংবিধানের স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, ক্ষুদ্র জাতিসত্বাবিরোধী সকল বিধান বাতিল করে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ঠ্য নিশ্চিত করা। সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিধান চালু করা। ৫৪ ধারা, ৫৭ ধারাসহ নিবর্তমূলক ও অগণতান্ত্রিক সকল আইন ও সার্বজনীন মৌলিক অধিকার পরিপন্থী সকল কালাকানুন বাতিল করা। সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা দরকার, যাতে নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়ানো যায়।
খ) বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠাসমূহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
গ) সাম্প্রায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধ, ‘৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
ঘ) গুম-খুন, ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করা। স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের গ্রহণযোগ্য তদন্ত, অপরাধিদের চিহ্নিত ও তাদের আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী হস্তক্ষেপ, পুলিশী ক্ষমতার অপপ্রেয়োগ, পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য ও রিমান্ডের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করা।
ঙ) ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্মীয়, জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও হানা-হানির প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা। এই পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা-আক্রমনের ঘটনাসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতার কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য পুরোপুরি পরিহার করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমাদের উপরোক্ত দাবী ও প্রস্তাবাবলীর মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিরাপদ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে সকল প্রস্তাব ও দাবী রয়েছে সে ব্যাপারে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ আমরা জরুরী বলে মনে করি। পাশাপাশি রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আপনারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবেন- এই আশাবাদ আমরা রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকলে সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের মীমাংসা করা সম্ভব। আপনি ওয়াকিবহাল যে, গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাছাড়া জনগণ ও রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে এত বিরোধ-বৈরিতা রেখে কোনভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়। সে কারণে গণতান্ত্রিক ধারার বিরোধী দলসমূহ ও জনগণকে আস্থায় নিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে আপনি কার্যকরি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন-এটা বাম জোট ও দেশবাসীর প্রত্যাশা।
সংলাপে বাম জোট নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানোয় এবং আমাদের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনার জন্য আবারও আমরা জোটের পক্ষ থেকে আপনাকে ও আপনার সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।