বুধবার ● ৭ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বসত ঘর তৈরি ও ২০ হাজার টাকার লোভে সন্তান বিক্রি
বসত ঘর তৈরি ও ২০ হাজার টাকার লোভে সন্তান বিক্রি
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: (২৩ কার্তিক ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.০৯মি.) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বসত ঘর তৈরি ও ২০ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি পেয়ে দুলাল মিয়া নামে এক বাবা তার ৬ দিন বয়সী শিশুকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়ীয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী দুলাল মিয়ার প্রথম স্ত্রী নাজমা খাতুন ৮ বছর আগে ইব্রাহিম মিয়া (২০) ও রানা হোসেন (২০) নামে দুই ছেলে রেখে মারা যান। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর পার্শ্ববর্তী গ্রামের রওশন আরাকে ৭ বছর আগে বিয়ে করেন দুলাল। এ সময়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রওশন আরার ঘরে শান্তা (৭), সিয়াম (৩), সানজিদা (২) সিফাত নামে (দেড় বছর) ৪ সন্তান জন্ম নেয়। গত ২১ দিন আগে রওশন আরা আরও একটি সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ও একটি বসত ঘর পাওয়ার লোভে ৬ দিন বয়সী শিশুকে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তির কাছে প্রতিবেশি আব্দুর রউফের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন।
শিশুটির মা রওশন আরা জানান, স্বামী পঙ্গু, সংসারে অভাব,আরও ৪টি শিশু সন্তান রয়েছে সংসারে। আব্দুর রউফ আমাদেরকে একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে ৬ দিনের শিশুকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক লোকের কাছে পালক হিসাবে দিয়েছে। আব্দুর রউফের ছেলে রকিব ওই লোকের বাসায় থেকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে বলে জানান রওশন। তিনি চোখের জল মুছে বলেন, ‘আমরা শুনেছি ছেলে নাকি ভাল আছে। তার চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।’
শিশুর পিতা দুলাল বলেন, ‘আমি অভাবী মানুষ। থাকার মত আমার কোন ঘর নাই। এতগুলো সন্তান নিয়ে আমি কোথায় থাকবো, কি খাওয়াবো। পোলারে যে নিছে হেরে আমরা চিনি না। আব্দুর রউফ সব চিনে।’
দুলাল আরো জানায়, ছেলে নিয়ে তাদেরকে একটি নতুন করে ঘর নির্মাণ করে দিবেন বলে বলেছেন রউফ। তবে তারা ছেলের পরিবর্তে প্রতিশ্রুত ২০ হাজার টাকা এখনো পায়নি।
দুলালের ভাই আব্দুল মজিদ জানান, ২০ হাজার টাকা ও নতুন করে একটি ঘর নির্মাণের কথা তিনি শুনছেন। আব্দুর রউফ বলেছে, টাকা নিলে ঘর দিবে না। এ কারণে তারা টাকা নেয়নি। তবে পরিবারটির চিকিৎসা ও চাল কেনার জন্য রউফের কাছে ২০ হাজার টাকা দিয়ে গেছে বলেও জানান মজিদ।
মজিদ আরও জানান, শিশুটি নেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে দু’জন মহিলা এসেছিল। আমি তাদেরকে চিনি না। পর দিন সকালে ভাই ভাবীর কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙ্গার পর তিনি জানতে পারেন মহিলারা ৬ দিনের শিশুটি নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শিশুটি আমার সম্পর্কে ভাতিজা। পাশের বাড়িতে আমি থাকি। আমি জানি না শিশুটিকে কে নিল। মজিদ আরও জানান, শিশুটি নেওয়ার সময় তারা কোন লিখিতও করেনি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে, আব্দুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।