সোমবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র্যাবের গুলিতে নিহত ২
গাজীপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র্যাবের গুলিতে নিহত ২
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ র্যাবের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন৷ ওই আস্তানায় র্যাবের অভিযানের সময় র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালালে আত্নরক্ষায় র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়৷ এতে ওই দুই ব্যক্তি নিহত হন৷ এ ঘটনায় একজন র্যাব সদস্যও আহত হয়েছেন৷
২৭ ডিসেম্বর রবিবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পিছনে যোগীতলা নতুন বাজার এলাকার একটি নির্মাণাধীন একতলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে৷ ঘটনাস্থল থেকে পিস্তল, জঙ্গি কাগজপত্র, বোমা প্রভৃতি উদ্ধার করা হয়৷
র্যাবের দাবি নিহত ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য৷ তবে তাদের পরিচয় জানাতে পারেনি র্যাব কর্মকর্তারা৷ পুলিশ বলছে, নিহত দুই ব্যক্তি রবিবারই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷
র্যাবের দাবি, ওই বাড়িটি জঙ্গিদের আস্তানা ছিল৷ এমন তথ্যের ভিত্তিতে বরিবার রাতে অভিযানে যায় র্যাব৷ এসময় বাড়ির ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়৷ এতে একজন র্যাব সদস্য আহত হন৷ এর প্রেক্ষিতে র্যাব সদস্যরা গুলি চালায়৷ এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ পরে ওই ঘরের ভেতর থেকে পিস্তল, জঙ্গি কাগজপত্র, বোমা, বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, জিহাদি বই ও বৈদ্যুতিক তার উদ্ধার করা হয়৷
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান রাত সোয়া ২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে জানান, অভিযানের সময় বাসার ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়েছে৷ এরপর র্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি করে৷
অভিযানের সময় ‘জঙ্গিদের ছোড়া বোমায়’ র্যাবের এক সদস্য আহত হন বলে মুফতি মাহমুদ জানান৷ তাকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি৷
“স্প্লিন্টারে আমাদের একজন আহত হয়েছেন৷ তাকে চিকিত্সার জন্য আগেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷”
মুফতি মাহমুদ বলেন, এখানে দুজন মারা গেছেন৷ তবে তাদের পরিচয় এখনও আমরা জানি না৷ র্যাবের কাছে খবর ছিল জঙ্গিরা পরিত্যক্ত ওই বাড়িটিতে বিভিন্ন সময় যাতায়াত এবং বাড়িটিতে বসে নাশকতার পরিকল্পনা করত৷ ঘটনাস্থল থেকে চারটি অবিস্ফোরিত হাতে তৈরি গ্রেনেড (ইমপ্রোভাইসড এঙ্প্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি) উদ্ধার করে নিস্ক্রিয় করা হয়েছে৷ জঙ্গিদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে বেশ কিছু বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ গ্রেনেড তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে৷
ঘটনাস্থলে শুধু ওই দুজনই ছিল দাবি করে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, র্যাব সদস্যরা জায়গাটি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করেন৷ এখান থেকে কেউ পালাতে পারেনি৷ তারা জেএমবির সদস্য বলে জানালেও নিহত দুই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি বলে তিনি জানান৷ তবে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে ধারণা মুফতি মাহমুদের৷
জয়দেবপুর থানার পুলিশ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, র্যাব-১-এর সদস্যরা এ অভিযান চালান৷ নিহত দুজনের নাম মিনহাজুল (২৫), বাড়ি বগুড়ার শেরপুর থানার কামারখন্দ এলাকায় ও মাহবুবুল আলম (৩০), বাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার পূর্ব এনায়েতপুরে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, মিনহাজুল ও মাহবুব নামে দুই জঙ্গি রবিবার কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন৷ মুক্তির পর কারাফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় র্যাব৷
তবে অভিযানে নিহত দুজন তারা কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, একটি প্লটের এক কোনায় আস্তরহীন লাল ইটের তৈরি একটি ঘর ঘিরে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন র্যাব সদস্যরা৷ ঘরটিতে জানালাও নেই৷ দরজা ছিল, তা খোলা৷ ভেতরে পড়ে ছিল দুটি লাশ৷
র্যাবের বোমা নিষি্ক্রয়কারী দলকে ঘরটির ভেতরে-বাইরে তল্লাশি চালাতে দেখা যায়৷
মুফতি মাহমুদ জানান, ঘরের ভেতরে তিনটি বোমা এবং একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়৷
ঘরের বাইরের জমিতে পাওয়া একটি ব্যাগ থেকে বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও জেএমবির কাগজপত্র পাওয়া যায় বলে জানান তিনি৷
মুফতি মাহমুদ বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন এখানে বসে নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে আমাদের কাছে খবর ছিল৷ এ ঘটনার পর র্যাব পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখে৷
তিনি আরও জানান, এ বছর ৬০ জন সশস্ত্র জঙ্গিসহ এ পর্যন্ত ১২শ জঙ্গিকে র্যাব আটক করেছে৷
জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজিজুল ইসলাম আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করার পর ময়নাতদন্ত করা হবে৷
জয়দেবপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি৷
আপলোড : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশ : সময় : বিকাল ৪.৩০মিঃ