শুক্রবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে, মামলা হচ্ছে : রাজশাহীতে ফখরুল
প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে, মামলা হচ্ছে : রাজশাহীতে ফখরুল
রাজশাহী প্রতিনিধি :: আজ বৃহস্পতিবার ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা না হলে তফসিল বা নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য হবে না’। আমাদের কাছে এখন মৌলিক অধিকার হয়েছে যে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলতে পারব কিনা? সব জায়গায় আজ শুধু বাধা আর বাধা। এই মাঠে সর্বশেষ দেশ নেত্রী খালেদাকে নিয়ে সমাবেশ করেছিলাম, সামনেই বসেছিলেন। আজ তিনি আসেননি, তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে।’
তিনি বলেন, যিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তার ছেলেকে হারিয়েছে সেই নেত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় আটকে রেখেছে। এই দেশের মানুষ তার মুক্তি চায়। আমরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলাম। কথা বলেছি। তারা কথা রাখেনি। প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে, মামলা হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, আজকের বিশাল জনসমাবেশ প্রমাণ করে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। খালেদা জিয়াসহ যারা আটক আছে তাদের মুক্তি না দিলে কোন নির্বাচন হবে না হবে না। আমাদের শপথ নিতে হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করে দেশ নেত্রী খালেদাকে মুক্তি ও তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করতে হবে।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনজোয়ারে আওয়ামী লীগের নৌকা ভেসে যাবে। আমরা সন্ত্রাস ও সংঘাত এড়ানোর জন্য সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। গত দশ বছর ধরে দেশে গণতন্ত্রের সংকট, বিচার বিভাগের সংকট ও আইনের শাসনের সংকট চলছে। মৌলিক অধিকার হারিয়েছে দেশের জনগণ। আমরা এগুলো ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এনিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম। কিস্তু সেই সংলাপ সফল হয়নি। কারণ স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এবার ৫ জানুয়ারিরমত নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এই বিএনপি নেতা বলেন, আমাদের মৌলিক দাবি, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথাও রাখেননি। সংলাপের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার কথার বরখেলাপ করেছেন। এক দিনেই দুই হাজার ২০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা ছাড়াই নির্জন কারাগারে পাঠিয়েছেন। সভা-সমাবেশ করতে দেননি। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
মওদুদ অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতি। তারা চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না। আমরা এতোদিন জানতাম, তফসিল ঘোষণার পর সকল রাজনৈতিক দল সমান অধিকার নিয়ে কাজ করবে। লেবেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে। কিন্তু সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন সেটি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
যত দিন দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন নির্বাচন কমিশনার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন ব্যরিস্টার মওদুদ।
এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকার পালাবার পথ খুঁজছে। এই সরকারের ভিত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবী মামলা আর গ্রেপ্তার। কিন্তু তাদের ভিত নড়ে গেছে। তারা এখন পালানোর পথ খুঁজছে।’
জনসভায় উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। আমরা আআেপনারা আন্দোলনে আছেন, আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি চতুর্থ জনসভা। এর আগে ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তার আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে ও ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে জনসভা করে ডা. কামাল হোসেনে নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য আজকের সভায় উপস্থিত হতে পারেননি প্রধান অতিথি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন।
জনসভায় জাফরুল্লাহ বলেন, এবার আপনারা জয়ী হবেন, জয়ী হলে কি হবে? কৃষক শ্রমিকদের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কৃষকের পণ্যের মূল্য নেই, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠিত হবে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এখানে আজ যারা এসেছেন সবাইকে কি গ্রেপ্তার করা সম্ভব? সম্ভব নয়। তাহলে আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় নিশ্চিত। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।’
বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজনকে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘পুলিশ গাড়ি আটকে দিচ্ছে। নাটোর, বগুড়া, রংপুরের গাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি। প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছেন, তা হবে না।’
এর আগে বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বেগম জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনও নির্বাচন করতে দেয়া হবেনা। সাত দফা দাবী মেনে না নেয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করবেন না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে সাত দফা মেনে নিন।’ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেশকে সংঘাতের হাত থেকে বাচাঁনোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত-উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর এ্যানি, নির্বাহী সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।