শুক্রবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » জোটগত ভাবে নির্বাচনে সময় আর মাত্র ১ দিন
জোটগত ভাবে নির্বাচনে সময় আর মাত্র ১ দিন
অনলাইন ডেস্ক :: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী জোট গঠনের সময় আর মাত্র এক দিন। আগামী রবিবারের মধ্যেই দলগুলোকে জোট গঠন করে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
একাজ সম্পন্ন না হলে জোট থেকে যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থী জোটভুক্ত যে কোনো দলের প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। নির্বাচন কমিশন আজ শুক্রবার এই বিধান নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে জানিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে অগাদ ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন ইসি। নির্বাচনে দল বা জোট একটি আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দিলেও প্রত্যাহারের আগে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে কেবল তিনিই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ওই আসনে দলের বা জোটের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
এর ফলে কারও বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ নির্বাচন করতে চাইলে আগে থেকেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়পত্র জমা দিতে হবে।
*বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই, আগেই হতে হবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী
*প্রার্থী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অগাদ ক্ষমতা
জোটের প্রার্থী বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে দলগুলোর সভাপতি/ সম্পাদক/ মহাসচিবকে বলা হয়েছে. ‘অন্য কোন নিবনধিত রাজনৈতিক দলের সাথে যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দাখিলের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করছি।’
চিঠিতে এ বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের কয়েকটি উপ-অনুচ্ছেদ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা আছে, অনুচ্ছেদ ১১-এর উপ-অনুচ্ছেদ (১)-এর অধীনে প্রজ্ঞাপন (নির্বাচনী তফসিল) প্রকাশিত হওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে দরখাস্ত করলে কমিশন দুই বা ততাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের যৌথভাব মনোনীত প্রার্থীকে ওই দলগুলোর জন্য নির্ধারিত কোন প্রতীক বরাদ্দ করতে পারবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তরা আগেই জানিয়েছেন, আইনগত দূর্বলতার কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিবন্ধিত বা নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে এমন দলের নেতাদেরও জোটভুক্ত হয়ে নিবিন্ধত কোন দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে জোটের যে দলের প্রতীকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন সে দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন তারা।
গত ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর কোনো সদস্য এবং যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরি কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি জানায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সংগঠনটি মনে করে, বিদ্যমান আইনেই এটি করা সম্ভব। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন,‘জামায়াতের সদস্য বা যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরিদের স্বতন্ত্র বা জোটগতভাবে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আইন নেই। বিদ্যমান আইনে তা করা সম্ভব কি না, কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বসে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’
৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বিধান যোগ করা হয় যে, কোন অনিবন্ধিত দলের সাথে জোট করা যাবে না এবং জোটের প্রার্থীরা যে দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন তারা সেই দলের প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধীতার কারণে ওই বছর দ্বিতীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বিধানটি (৯০-খ-৩ অনুচ্ছেদ) বাদ দেয়া হয়।
তবে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে পুরানো দলগুলোর ক্ষেত্রে নিরিবিচ্ছন্নভাবে তিন বছরে বেশি সময় দলের সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা বহাল থাকে। কিন্তু ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ (১) ঞ অনুচ্ছেদের ওই বিধান বাদ দেয়া হয়। নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতে, এর ফলে বর্তমানে নিবন্ধন নেই এমন দলগুলোর নেতারা কোন নিবিন্ধত দলের সাথে জোটভুক্ত হয়ে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী এলাকার একশতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর নেওয়ার চাইতে এটি সহজ হবে।
অগাদ ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের !
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে অগাদ ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন ইসি। দলগুলো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে।
প্রত্যাহারে আগে একজনকে চূড়ান্ত করবে চিঠি দিলে অন্যদের মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। এর আগে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ক্ষমতা প্রার্থী বা তার এজেন্টের হাতেই ছিল। দল বা জোট কাউকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দিলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ১২ ধারা ৩এ(বি) এবং ১৬ ধারা (২) তে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
নবম সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো এই ক্ষমতা ছিল না। ১২ ধারার ৩এ(বি) তে আগে ছিল, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকার স্বাক্ষরিত এই মর্মে একটি প্রত্যায়নপত্র যে. প্রার্থীকে ওই দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে।
তবে শর্ত থাকে যে, কোন নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে যাবে। একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন করা হলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পূর্বেই চূড়ান্তভাবেই একজন মনোনীত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
কিন্তু ২০১৩ সালে বিগত কমিশন এই ধারায় সংশোধনী আনে। বর্তমানে এই ধারায় উল্লেখ আছে, কোন নিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে যাবে। একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে তা ১৬ (২) ধারা অনুযায়ী কার্যকর হবে।
১৬ (২) ধারায় বলা আছে, যদি কোন আসনে একের অধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তার মধ্যে থেকে একজনকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে আগেই চূড়ান্ত করতে হবে।
তা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের কেউ লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানাবেন। দলের অন্য মনোনীত প্রার্থীদের প্রার্থিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
আগামী ১৯ নভেম্বরের মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। মনোনয়ন বাছাই ২২ নভেম্বর। কারোর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলেও অন্যদের মধ্যে থেকে ২৯ নভেম্বর প্রত্যাহারের আগে একজনকে চূড়ান্ত করার সুযোগ পাবে দলগুলো। ভোট ২৩ ডিসেম্বর।